প্রায় ৩ মাস পর শনাক্ত হলো নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫ কিশোরের মরদেহের।
ভৈরব ও নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘ ৩মাস বিভিন্ন গবেষণা শেষে তা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়।
শনাক্তকৃত ব্যক্তিরা হলো, সিলেটের কুমারপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহ ওরফে সাব্বির (১৬), হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানার হরেশপুর গ্রামের আরিফ মিয়ার ছেলে রাব্বি (১৫), মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলস্টেশন এলাকার সিয়াম (১৪), ময়মনসিংহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল আমিন (১২) এবং সেলিম (২৫)।
নিহতরা সবাই টোকাই এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। মৃত্যুর সময়ও তারা প্রত্যেকেই নেশাগ্রস্ত ছিল।
চলতি বছরের ৮ জুলাই সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রায়পুরার মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরে খাকচক-কমলপুর এলাকায় ঘটনাস্থলের ১৫ গজ দূরত্বের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবস্থায় পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
নিহতদের মধ্যে তিনজনেরই শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন ছিল, দুজনের শরীর দ্বিখণ্ডিত ছিল। এবং এদের মধ্যে চার জনেরই হাত-পা বিচ্ছিন্ন ছিল।
জানা যায়, নিহত পাঁচজন আখাউড়া থেকে গাঁজা খেয়ে ছাদে উঠে। তারা আখাউড়া থেকে নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বগির ছাদে উঠে নেশা করতে থাকে। ট্রেনটি মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন পার হওয়ার সময় ছাদ থেকে তাদের একজন পড়ে যাচ্ছিলো এমন সময়ে একজন তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু সে তাকে টেনে তুলতে পারছিলনা। পরে এ দৃশ্য দেখে তাদের সবাই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় ছাদ থেকে পাঁচজনই চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে গিয়ে মারা যায়।
এ ব্যাপারে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, মারা যাওয়ার আগে তারা ট্রেনের ছাদে বসে নেশা করছিলো। পরে ট্রেনটি মেথিকান্দা অতিক্রম করার সময় একজন ছাদ থেকে পড়ে যাচ্ছিল, তাকে বাঁচাতে গিয়েই পাঁচজন একসাথে নিচে পড়ে মারা গেছে। পরিচয় শনাক্তে পুলিশ সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
মরদেহগুলো কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে তখন জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পরপর রায়পুরা থানা পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডি সদস্যরা ঘটনাস্থলে নিহতদের নাম পরিচয় শনাক্ত করতে আঙ্গুলের ছাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলওয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ রায়পুরা থানা পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সদস্যরা।