বিআরটিএতে এখনো মাসুদদের দৌরাত্ম

  • মো. রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় বিআরটিএর সদর দফতরের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার-১) ছিলেন মাসুদ আলম। তখন সেতুমন্ত্রীর কাছে সেবাগ্রহীতারা লাইসেন্স সময়মতো না পাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন।

তখন মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন উপ-পরিচালক মাসুদ আলম। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ শুনে তিনি তখন মাসুদকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘ভালো হয়ে যাও মাসুদ, ভালো হয়ে যাও। তোমাকে আমি অনেক সময় দিয়েছি। তুমি ভালো হয়ে যাও। তুমি কি এখানে আবারও পুরোনো খেলা শুরু করেছ? তুমি কি কোনোদিনও ভালো হবে না?’

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল সেই ভিডিও। তারপর বেশকিছু মাস মাসুদদের দৌরাত্ম্য কম থাকলেও এখন আবারও সেই পুরোনো রূপে ফিরেছে মাসুদেরা। ‘ভাইরাল মাসুদ’ পদোন্নতি পেয়ে বিআরটিএ খুলনা বিভাগীয় পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও রেখে গেছেন তার অনুসারীদের।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঘুরে দেখা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে এসে অনেকে হতাশা হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এদিকে গাড়ির ফিটনেস মাত্র পনেরো মিনিটের মধ্যে হবার কথা থাকলেও দীর্ঘ লাইনের কারণে তিন চার ঘণ্টা সময় লাগছে।

বাসা বাড়িতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন মো. শাহাবুদ্দিন। থাকেন আশুলিয়ার ইপিজেড এলাকায়। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মাঝারি মানের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্যে আবেদন করে এখন পর্যন্ত কয়েকদফা তারিখ পরিবর্তন করলেও তার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি।

তবে দেখা যায়, নতুন লাইসেন্সের তুলনায় লাইসেন্স নবায়ন করতে আসা মানুষের ভোগান্তি বেশি। মিরপুর বিআরটিএর রুম নম্বর-৮ এর সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশির ভাগ ড্রাইভিং লাইসেন্স রি-নিউ করতে এসেছেন।

ড্রাইভিং পেশায় যুক্ত মো. লিটন এসেছেন পাবনা থেকে। অনেক বছর যাবত গাড়ি চালালেও এখন লাইসেন্স নবায়ন করতে এসে হয়রানির কথা জানান তিনি। গত বছরের ৩ জানুয়ারি লাইসেন্স নবায়ন করতে দিলেও এখন পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি তিনি। তিনি বলছেন মোবাইল ফোনে একটা এসএমএস আসার কথা থাকলেও তা আসেনি। কাউকে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। একের পর এক তারিখ পরিবর্তন করেও কাঙ্ক্ষিত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাচ্ছেন না।

মো. মনির শিকদার নীরব এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। তিনি গত বছরের ১৮ অক্টোবর আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত দুই বার তারিখ পরিবর্তন করেও লাইসেন্স হাতে পাননি। এমনকি কোন ম্যাসেজও আসেনি তার ফোনে। কদিন আগেও দুদকের অভিযানের কথার মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দুদকের অভিযান হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তার অভিযোগ এখনো টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, আমাদের ধরে লাভ নেই। আমরা তো ভাই একশো দুইশো টাকা খাই, ভিতরে যারা বসেন তাদের অনেক টাকা দিতে হয়। একটা লার্নার করাতে সরকারি ব্যাংক জমা ৭৬০ টাকা, সেখানে আমরা ১০০০ হাজার নেই। এখানে দোকানে দিতে হয় আরও ১০০-১৫০ টাকা।

আরও বলেন, আমাদের কাজের একটা টার্গেট আছে। বেশি সিন্ডিকেট করে সিএনএস বা রুমের গেটিস যারা আছে (কর্মকর্তাদের রুম বয়) তারা মূলত টাকাগুলো খায়। কিছুদিন আগে একটা ফিটনেস করতে দিছিলাম সেখানে আমার ২০০০ টাকা খরচ হইছে। তবে এখন আর আগের মতো কাজ নাই।

বর্তমানে সবকিছু অনলাইনে হয়ে যাওয়ায় গাড়ি মেশিনের উপরে না উঠানো পর্যন্ত কাজ হয় না। লাইসেন্স এখন অনলাইনে করা যায়। তাই আগের মতো এখন আর চুরি নাই বলেন দালালরা।

এতোসব অভিযোগ অনিয়মের বিষয়ে জানতে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ের পরিচালক (ইঞ্জি) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং উপপরিচালক (সার্কেল-১) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।