শোকাবহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৫ বছর

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যা দিবস। ১৫ বছর আগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর সদর দফতর পিলখানায় বিপথগামী সৈনিকরা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর দুইদিনব্যাপী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেই সময় বিডিআরের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং নারী-শিশু ছাড়াও আরও ১৭ জনকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। শোকাবহ এ ঘটনায় নিহতদের স্মরণে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

দিনটিকে উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর উদ্যোগে বনানী সামরিক কবরস্থান ও বিজিবি সদর দফতরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকাল ৯ টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের কবরে পুষ্প স্তবক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ শাখা গণমাধ্যমকে জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় রোববার সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) এবং শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। একই সাথে শহীদদের নিকটাত্মীয়, পিলখানায় কর্মরত সব অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবির সৈনিক এবং বেসামরিক কর্মচারীরা অংশ নেবেন।

সেই সাথে দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানায় বিজিবির সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় কোরআনখানি হবে। বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দিনটি পালন উপলক্ষ্যে বিজিবির যেসব স্থানে রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন হয়, সেসব স্থানে বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য হাইকোর্টে জমা হওয়া মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছিল তৎকালীন বিডিআরের বার্ষিক দরবারের দিন। সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমএ বারী, বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাসহ বিডিআরের নানা পদের সদস্যরা। দরবার শুরুর পর মহাপরিচালকের বক্তব্য চলাকালে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে দু’জন বিদ্রোহী জওয়ান অতর্কিতে মঞ্চে প্রবেশ করেন, একজন ছিলেন সশস্ত্র। শুরু হয় বিদ্রোহ। দরবার হলের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসে। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, ওই দিন দরবারে উপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫৬০ জন।

কিছুক্ষণের মধ্যে লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিদ্রোহী জওয়ানরা দরবার হল ঘিরে গুলি শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্রোহীরা কর্মকর্তাদের দরবার হল থেকে সারিবদ্ধভাবে বের করে আনেন। ডিজির নেতৃত্বে কর্মকর্তারা দরবার হলের বাইরে পা রাখা মাত্র মুখে কাপড় ও মাথায় হলুদ রঙের হেলমেট পরা চারজন ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করেন। ডিজির পর হত্যা করা হয় আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে। এরপর পিলখানার ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট ছাড়া হলে ওই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিদ্রোহীরা। এ সময় প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বিদ্রোহীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে ও সরিয়ে ফেলা হয়।