ভালো নেই গাবতলীর কয়লা শ্রমিকরা

  • রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রস্তাবিত মাস রাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল) বা এমআরটি লাইন-৫-এর জন্য গাবতলী বাস টার্মিনালের উত্তরাংশে ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে । বলিয়ারপুর-আমিনবাজার থেকে গাবতলী হয়ে মিরপুর-১০ পর্যন্ত যাবে এমআরটি লাইন-৫। সেখান থেকে বনানী-গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার ও নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত লাইনটি যাবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। মাঝে আমিনবাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত যাবে আন্ডারগ্রাউন্ডে। সব মিলে লাইনটির দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এর কাজ। তাই আংশিক সরিয়ে ফেলা হয়েছে গাবতলী গরুর হাট, ইট বালু ও কয়লার গদি। 


বৈদ্য নাথ দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে গাবতলীতে কাজ করছেন কয়লা শ্রমিক হিসেবে। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তার সুখী পরিবার। অভাবের কারণে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে না পারার আক্ষেপ বৈদ্য নাথের। বর্তমানে ছেলে রিকশা চালিয়ে বাবার সাথে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছে। মা মরা দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে অনেকটা নির্ভার বৈদ্য নাথ। গ্রামের বাড়িতে গেলে মেয়েদের নিয়ে একসঙ্গে সময় কাটানোর গল্প করলেন তিনি। পরিবারের এই সুখের মধ্যে এখন বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে বৈদ্য নাথের।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গাবতলী আমিন বাজারে বার্তা২৪.কম এর সাথে কথা হয় বৈদ্য নাথের। তিনি জানান, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই গাবতলীতে কাজ করছেন তিনি। বছরের ছয় মাস কৃষি কাজ করলেও বাকি ছয় মাস (কার্তিক-জৈষ্ঠ) তার কাটে গাবতলীর এই কয়লা ঘাটে। একটা সময় সারাদিন পরিশ্রম করে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হতো তার। কিন্তু বর্তমানে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা উপার্জন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে নৈদ্য নাথ জানায়। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ক্রেনের মাধ্যমে এখন ইট বালু ও কয়লা জাহাজ থেকে উত্তোলন করে ঘাটে রাখা হয়। তাই দিন দিন শ্রমিকের চাহিদা কমে যাচ্ছে এই ঘাটে। এছাড়া গাবতলী থেকে বালুর গদি, কয়লার গদি সরিয়ে নেয়ার কারণেও বিপাকে পরেছেন তারা। 


তিনি জানান, একটা সময় এখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন তা কমে এসে ১৫০ জনের আশেপাশে ঠেকেছে। গত ৫ বছর আগেও যেখানে শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর ছিল এই গাবতলী ঘাট। সেখানে এখন কাজের অভাবে অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বদলে ফেলছেন পেশা। 

বিজ্ঞাপন

কয়লা শ্রমিকদের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবার মতো কোন শ্রমিক সংগঠন এখানে না থাকায় বিপদে আপদে কোন সাহায্য সহযোগিতাও পান না তারা। কয়লার গদি সরিয়ে ফেলার খবরে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে খাই। যেভাবে দিন দিন আমার কাজ কমে যাচ্ছে তাতে করে আগামীতে কীভাবে চলবো তাই ভাবছি। এক বেলা কাজ না করতে পারলে আমরা তো খাইতে পারি না।

এখানে কাজ করে এমন আরও একজন শ্রমিক আব্দুল হান্নান বার্তা২৪-কে বলেন, দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে এখানে কয়লার গাড়ি চালান তিনি। আগে এখানে নিয়মিত কাজ করলেও ভবিষ্যতে তার কাজ নিয়মিত হওয়া নিয়ে সংঙ্কায় আছেন তিনি। মাসে অন্তত বিশ দিন কাজ থাকলেও এখন আর আগের মতো নেই। আগে প্রতিদিন গাড়ির জমা বাদ দিয়ে ১ থেকে ২ হাজার টাকা আয় হলেও এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে।

পরিবারের তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে আগামীদিনগুলো কীভাবে কাটাবেন এখন সেই পরিকল্পনাই করছেন তিনি।