বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আমাদেরকে ভারতীয় আধিপত্যবাদ শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ৫৩ বছরের বাংলাদেশের আমল, ২৪ বছর পাকিস্তান আমল মোট ৭৭ বছরের সকল বঞ্চনার কবর রচনা করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মত আর কোনো ভারতীয় এজেন্ডা আমরা দেখতে চাই না। আমরা সম্পূর্ণ বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ একটি রাষ্ট্রে বসবাস করতে চাই।
তিনি আজ (১৭ফেব্রুয়ারি সোমবার) বিকেলে কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুষ্টিয়া জেলা আয়োজিত এক বিশাল গণ-সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
এর আগে দুপুরে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ইবির বটতলায় আয়োজিত "জুলাই পরবর্তী করণীয় শীর্ষক" এক আলোচনা সভায়ও প্রধান অতিথির বক্তব রাখেন।
পৃথক পৃথক স্থানে আয়োজিত সমাবেশ ও আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল প্রতিশোধের রাজনীতি। সবার কাছ থেকে নিতে নিতে একটা সময় নিজের দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকেও প্রতিশোধ নিতে থাকে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন কেন্দ্রিক গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক তার ছিল। এছাড়া পাশের রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা তো ছিলই। এইসব গোয়েন্দা সংস্থা আগে থেকেই শেখ হাসিনাকে রিপোর্ট করেছিল, আপনার ক্ষমতা যায়যায় অবস্থা। তখন দলের নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা না করে শেখ হাসিনা নিজের ও পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। শেখ হাসিনা ভেবেছে সায়মা ওয়াজেদের কথা কোনো নেতাকর্মীর কথা ভাবে নাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক আরও বলেন, বিগত ষোল বছরে বাংলাদেশে অনেক অন্যায় অবিচার হয়েছে। এই জুলুম গুম খুনের শিকার অনেক মানুষ হয়েছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, অসংখ্য মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। একজন গুমের শিকার হলে তার পরিবার কিভাবে দিন কাটায় সেটা কল্পনা করা যায় না। একজন গুমের শিকার হলে তার মা বিশ্বাস করতে চায় না, তার ছেলে আর ফিরবে না। রাতের আঁধারে বাইরে কোনো পাতার আওয়াজ হলেও ধারণা করে, এইতো মনে হয় খোকা আসছে। গুম করার এই মর্মান্তিক দৃশ্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গ জাতির কাছে উন্মোচন করেছেন। আমরা এই গুমের রাজ্যে আবার ফিরে যেতে চাই না।
তিনি বলেন, বিগত এই শাসনামলে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে ইসলাম। আর যারা রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম চায় তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে আরো বেশি। তাদের শুধু জানে মেরে ফেলা হয়েছে তা নয়, তারা হত্যা করার আগে চরিত্রহনন করার চেষ্টা করেছে। এই আওয়ামী লীগকে যদি ক্ষমা করে দেওয়া হয়, এই দেশ এই জাতি যদি তাদেরকে ক্ষমা করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবে না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস আবার নতুনভাবে পর্যবেক্ষণে আনতে হবে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনে বৃটিশ দের বিরুদ্ধে ১৯০ বছরের সংগ্রামের কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তিনতিনটি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে। প্রথম আধিপত্যবাদ ছিল, বৃটিশ আধিপত্যবাদ। তারপর পশ্চিম বঙ্গের আধিপত্যের পূর্ববাংলাকে লড়াই করতে হয়েছে। তখন পূর্ব বাংলার উত্থানকে ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য তারা সহিংস আন্দোলন করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের আধিপত্যবাদের সাথে লড়াই করেই পূর্ব বঙ্গের ইসলাম মুসলমান ও বাংলাদেশের উত্থান হয়েছে। সর্বশেষ আমরা পশ্চিম পাকিস্তানী খানপাঠানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
‘লাহোর প্রস্তাব' পাশ হলে সাতচল্লিশেই বাংলাদেশ গঠন হত উল্লেখ করে আরো বলেন, ৪৭, ৭১ আর ২৪ এর বিপ্লবের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা প্রস্তুত করতে হবে। হীনমন্যতায় ভুগলে চলবে না। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাতচল্লিশে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছে। লাহোর প্রস্তাবে ম্যাকানিজম করা না হলে তখনই আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হতো। ভিন্ন ভিন্ন দুটো অংশকে জুড়ে দিয়ে এক রাষ্ট্র হওয়ার কথা না। তখনই ভিন্ন রাষ্ট্র হলে পরবর্তীতে আর একাত্তরে পাকিস্তানিদের সাথে লড়াই করা লাগত না। লাহোর প্রস্তাব পাশ হলে সাতচল্লিশেই বাংলাদেশ গঠন হতো। সেই বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। সেখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসেবে থাকতো ইসলাম। সেখানের সংবিধান হতো কুরআন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নয়। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাধান্য থাকে, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোই থাকে। তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগাগোড়া সবজায়গায় ইসলামকে ধারণ করা চাই। যদি ইসলামকে ধারণ না করা যায় তাহলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামের স্বার্থকতা থাকে না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, ঠিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও যদি এরকম অবস্থা হয় তাহলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার স্বার্থকতা নাই।
গণ-সমাবেশে কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল লতীফ খান সভাপতিত্বে করেন, ইবি'র আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইবি সভাপতি মুহাম্মদ নোমান আহমদ।
গণ সমাবেশ ও আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন,যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হোসেন, মাওলানা শরীফ সাইদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা জহিরুল ইসলাম, খেলাফত ছাত্র মজলিস সভাপতি মুহাম্মাদ কামাল উদ্দীন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ডঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডির ডিন প্রফেসর ডঃ আ ব ম সিদ্দিকুর রহমান আশরাফী, প্রফেসর ডঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মাদ সাদেক আহমদ, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মাদ দিদারুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইবি শাখার আহবায়ক শাহেদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত, জমিয়তে তলাবায় আরাবিয়া ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ উল্লাহ শেখ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এইচ এম সুইটসহ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।