নারী দিবস কি জানেন না উপকূলীয় নারীরা!

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক ষষ্ঠী সরকার। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা উপকূলীয় এক সংগ্রামী নারী। খুলনার কয়রার সুন্দরবন ঘেঁষা বীণাপানি গ্রামে তার বসবাস। বয়সের ভারে চলতে পারেননা তিনি। জীবিকার তাগিদে এক রকম বাধ্য হয়েই ঘর থেকে বের হতে হয় তাকে। খোঁজেন জীবিকার সন্ধান। 

বৃদ্ধা ষষ্ঠী সরকারের দেখা মেলে শুক্রবার (৮ মার্চ) সুন্দরবনের পাশে। মাথায় বিশাল আকারের একটি লাকড়ীর বোঝা নিয়ে ছুঁটছেন তিনি। তার মুখ দিয়ে তখন ঘাম ঝরছে। উনাকে দেখে হাত ইশারা দিতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। জানতে চাইলাম-কেমন আছেন?

বিজ্ঞাপন

তারপর সরাসরি প্রশ্ন করলাম- নারী দিবস কি জানেন? ফ্যালফ্যাল চোখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জবাব দিলেন- না। উত্তর দিয়েই তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। আমিও তাকে ঠেকালাম না।

উপকূলীয় এক সংগ্রামী নারী  ষষ্ঠী সরকার

 

বিজ্ঞাপন

শুধু ষষ্ঠী সরকারই নয়। উপকূলীয় হাজারও নারীরা জানেনই না নারী দিবস কি, কবে পালন করা হয়। বীণাপানি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়ক মেরামতে কাজ করা নারী শ্রমিকরাও জানেন না নারী দিবস কেন পালন করা হয়। অন্যদিকে নারী দিবস শব্দটিই প্রথম শুনেছেন সুন্দরবনে কাজ করা নারীরা।

সড়কে কাজ করা নারী শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা কোনো দিবসের খোঁজ জানিনা। কি হবে দিবসের খোঁজ রেখে? আমাদের ছুঁটে চলা শুধুই জীবিকার সন্ধানে। কাজ করি মজুরি পাই। কাজ না থাকলে কোনো মজুরি নাই। তাও আবার যে মজুরি পাই তা নিয়েও বৈষম্য রয়েছে।’

বীণাপানি গ্রামের বাসিন্দা মহুয়া গাইন জানান, ‘তারা পুরুষের সাথে সুন্দরবনে কাজ করতে যান। একমুঠো ভাতের সন্ধানে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে থাকি। অন্য খবর রাখার কোনো সময় নাই। নারী দিবস কি জানিনা।’ 

প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছেন তারা 

 

শাখবাড়িয়া নদীতে ডিঙ্গি নৌকায় বসে থাকা অঞ্জলি দাস জানান, তারা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছেন। আইলা, সিডরের মতো ঘূর্ণিঝড়কে তারা মোকাবেলা করে টিকে আছেন। নারী দিবস দিয়ে কি হবে তাদের এমন পাল্টা প্রশ্ন করেন সে।

সুন্দরবন ঘুরতে আসা পর্যটক কুতুব উদ্দিন মোল্লা বলেন, নারী দিবস উপযাপন সেদিনই সফলতা অর্জন করবে যেদিন প্রতিটি সেক্টরের নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। উপকূলের নারীরা অনেক কর্মঠ। সংগ্রামী জীবন তাদের। তারা সফলও। নারী দিবসটি যথাযথ পালন করতে হলে উপকূলীয় যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তাদের উচিত এ সকল নারীদের নিয়ে বিভিন্ন জনসচেতনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। সমাজে এখনও উপকূলীয় নারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত।