এমভি জাহান মণির নাবিকদের মুক্তি ৯৯ দিনে, এবার কতদিনে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবিঃ সংগৃহীত

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ 'এমভি আবদুল্লাহ' জিম্মি হওয়ার সাতদিন পেরিয়ে গেছে। সোমালিয়ার উপকূলের একেবারে কাছে নোঙর করা এই জাহাজ নিয়ে এখনো আসেনি কোনো সুখবর। কেননা এখন পর্যন্ত দস্যুদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ কিংবা দাবির বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে জিম্মি নাবিকদের মুক্তি ঠিক কতদিনে সম্ভব সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে যাচ্ছে। যদিওবা ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটিকে উদ্ধারে সোমালি পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে।

জিম্মি হওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি বাংলাদেশের কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেডের। প্রায় ১৪ বছর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর একই মালিকের মালিকানাধীন এমভি জাহান মণি নামের আরও একটি জাহাজ দস্যুদের কবলে পড়েছিল। বাংলাদেশি পতাকাবাহী এই জাহাজটি জলদস্যু-আক্রান্ত হওয়ার সাত দিন পর মুক্তিপণ চাওয়া হয়। আর ৪০ দিনের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যায়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে অপহরণের শিকার ২৫ জন নাবিকসহ জাহাজটি ছাড়া হয় ৯৯ দিনের মধ্যে। কিন্তু এবার সাতদিন পেরিয়ে গেলেও দস্যুরা এখনো ‘নীরব’ আছে। তাই নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমছে না।

বিজ্ঞাপন

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। পরে গত বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে নিজেদের উপকূলে নিয়ে যায় দস্যুরা। অবশ্য এরপর দু বার জাহাজটিকে সরিয়ে নেয় দস্যুরা। এখন জাহাজটি সোমালিয়ার গোদবজিরান উপকূল থেকে প্রায় ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে।

সাধারণত দস্যুরা নাবিক ও জাহাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার পর সময় নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজটি দস্যুদের নিয়ন্ত্রিত সোমালিয়ার উপকূলীয় এলাকায় নেওয়ার পর পাঁচদিন পেরিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জিম্মি জাহাজের মালিক কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম সোমবার রাতে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জিম্মি জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে আমাদের মালিকপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। নাবিকেরা সবাই সুস্থ আছেন। জাহাজটিও আগের অবস্থানে আছে। তবে এখনো দস্যুরা যোগাযোগ করেনি।'

এখনো কেন নীরব দস্যুরা:

জাহাজের মালিকপক্ষ ও জাহাজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে, দস্যুদের এখনো নীরব থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, দস্যুরা এখনো থিঁতু হতে পারেনি। নিজেদের উপকূলে নেওয়ার পরও বারবার জাহাজ সরিয়ে নেওয়ায় সেটি আঁচ করা যাচ্ছে। আবার এমনও হতে পারে যে দস্যু গ্রুপটি জিম্মি করেছে, সেটি ছোট গ্রুপ। তারা বড় কোনো দস্যু গ্রুপের কাছে নাবিকদের হস্তান্তর করতে পারে। সেটি নিয়ে দেনদরবার করার জন্যও সময় লাগতে পারে। আবার বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারে ভারতীয় নেভি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের দুটি যুদ্ধজাহাজ তাড়া করেছিল। এক পর্যায়ে সোমালিয়ার উপকূলে অগ্রসর হওয়ার সময় ইউরোপ আর ভারতীয় দুটি নেভিরই যুদ্ধজাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের থামানোর চেষ্টা করেছে। আশপাশের পানিতে গোলাগুলিও করেছিল। এরই মধ্যে গত শনিবার প্রায় ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে মাল্টার পতকাবাহী জাহাজ এমবি রুয়েন উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এ সময় ১৭ জন নাবিককে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। জাহাজে থাকা ৩৫ জলদস্যুর সবাই আত্মসমর্পণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতেও দস্যুদের মনে ভয় ঢুকে থাকতে পারে, সেজন্য তারা আরও সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

জাহাজটির মালিকপক্ষের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'অতীতে দস্যুরা নিজেদের দেশ থেকে কোনো চাপ পায়নি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সোমালিয়ান সরকারও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে দস্যুদের নিয়ে বিব্রত। তারাও এখন দস্যুদের ধরতে সচেষ্ট হয়েছে।'

এই কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড অঞ্চলের পুলিশের ভূমিকার।

সোমবার (১৮ মার্চ) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সঙ্গে সোমালি পুলিশও এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এর আগে একই মালিকের জাহাজ এমভি মণি জলদস্যুদের কবলে পড়ার সাতদিন পর ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর দস্যুরা প্রথম জাহাজমালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৯০ লাখ মার্কিন ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছিল। তবে চূড়ান্ত সমঝোতা হয় একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি। মুক্তিপণ পেয়ে জলদস্যুদের জাহাজ ছাড়ার কথা ছিল ১৩ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যে। কিন্তু জলদস্যুরা জাহাজ ছাড়ছিল না। পরদিন অবশ্য জাহাজ থেকে নেমে যায় দস্যুরা। এরপর জাহাজটি নাবিকদের নিয়ে ফিরে আসে।

তবে তখন কোন সংস্থা কি পরিমাণে মুক্তিপণ দিয়েছিল, তা কৌশলগত কারণে গোপন রেখেছিল। এখন কি সমাঝোতায় নাবিকদের মুক্তি মিলবে, নাকি অভিযানে- সেই দিকে তাকিয়ে ২৩ নাবিকের পরিবার।