বরিশালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে নতুন করে ৭১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। গত কয়েক মাসে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের ফলে বরিশাল জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
সেপ্টেম্বর মাসে বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। মাসব্যাপী বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ১,২৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে, মাসের শেষ ১০ দিনেই মৃত্যু হয় ৭ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর রোগীদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
অক্টোবরে বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই নতুন করে ৭১০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৬ জন মারা গেছেন, যা পরিস্থিতির আরো অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
বরিশাল জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র বরিশাল জেলা সদর ও আশেপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১,০০৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। জেলার অন্যান্য ছোট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার সংকট দেখা দেওয়ায়, গুরুতর রোগীদের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে, যেখানে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের ৩,৫৩৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৩,২১৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন, হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া আরও অনেক রোগী রয়েছেন, যাদের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য পৌরসভাগুলো মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর চেষ্টা করলেও বৃষ্টির কারণে তেমন কার্যকর ফল মিলছে না। মশার ওষুধ ছিটানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টির পানিতে তা ধুয়ে যাচ্ছে, ফলে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এডিস মশা নির্মূলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস এবং জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি।