স্ক্যানিং মেশিন অচল, স্বর্ণের অবাধ চোরাচালান বেনাপোল কাস্টমসে
বেনাপোল বন্দরে পন্য পরীক্ষণ ও পাসপোর্টধারীদের ব্যাগেজ তাল্লাশীতে ব্যবহৃত ৪টি স্ক্যানিং মেশিনের মধ্যে ৩টি দীর্ঘ ৫ মাস ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকায় ঝুকির মুখে পড়েছে নিরাপদ বানিজ্য ও পাসপোর্টধারীরা যাত্রীরা।
অপরাধীরা অবাধে বাংলাদেশ অংশ পেরিয়ে গেলেও স্বর্ণের বারসহ আটক হচ্ছে ভারতে। গত ৫ মাসে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণের বারসহ ৩৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সীমান্তরক্ষী বিএসএফ।
এদের মধ্যে রয়েছেন ২০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী, ১০ জন পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক চালক ও ৬ জন শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক ও হেলপার। অভিযোগ উঠেছে কাস্টমস ও বহিরাগত এনজিও কর্মীদের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট চোরাচালানে নানানভাবে সহযোগীতা করে আসছে। আর এ সিন্ডিকেট সক্রিয় রাখতে প্রায় ৫ মাস ধরে কাস্টমসে যাত্রীর ব্যাগেজ তল্লাশীতে ব্যবহৃত
স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট করে ফেলে রাখা হয়েছে। ওই মেশিন মেরামতের কোনও তোড় জোড় নেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। আর এ সুযোগে প্রতিদিন পাচারকারীরা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
এদিকে স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার এ্যাসোসিয়েটস জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে কাস্টমস বলছে, তারা অচল থাকা স্ক্যানিং মেশিন মেরামতের চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে ৬ বছর আগে ৪টি স্ক্যানার মেশিন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয় চীন সরকার। বেনাপোল বন্দরে নিরাপদ বানিজ্যের ক্ষেত্রে ঝুকি বাড়ায় এ সময়ে একটি স্ক্যানার স্থাপন হয় বন্দরের বাইপাস সড়কে পণ্য প্রবেশ দ্বারে।
অত্যাধুনিক মেশিনটি পণ্যবাহী ট্রাকে আসা রাসায়নিক, মাদক, অস্ত্রের মতো মিথ্যা ঘোষনার পণ্য শনাক্ত করতে সক্ষম। এছাড়া ইমিগ্রেশন কাস্টমস রুটে চোরাচালান রোধে এনবিআরের অর্থায়নের বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসে আরও ৩টি স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। স্ক্যানিং মেশিনটি কাস্টমসেজ পক্ষে পরিচালনা করে আসছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস। মাঝে মাঝে নষ্ট হতে হতে গত ৬ মাস ধরে যান্ত্রিক ত্রুটিতে একেবারে অচল হয়ে বন্ধ রয়েছে কাস্টমসের একটি মোবাইল স্ক্যানার ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনের দুটি স্ক্যানার। এগুলো মেরামত করতে বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন।
কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী কাস্টমস ব্যয় বহন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় স্ক্যানিং ৩টির কার্যক্রম বর্তমানে সম্পূর্ন বন্ধ আছে। এতে গার্মেন্টস পণ্যসহ জরুরী পণ্য খালাস করতে না পারায় বানিজ্য ব্যহতের পাশাপাশি চোরাচালানের সুযোগ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
সুত্র জানায়, গত ১ নভেম্বর ভারতীয় ট্রাক চালক সুরজ মগকে পেট্রাপোল বন্দর থেকে ৭ কেজি স্বর্ণের বারসহ এবং ২৭ নভেম্বর ১৭টি স্বর্ণের বারসহ ভারতীয় ট্রাক চালক আব্দুল জহাব মল্লিককে আটক করে বিএসএফ।
গত ২৬ সেপ্টম্বর সঞ্জিব নামে এক ভারতীয় ট্রাক চালককে ৬টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিএসএফ।
এ ছাড়াও শ্যামলী এনআর পরিবহনের চালক মোহাম্মদ, দেলোয়ার ও সুপারভাইসার সামিম মাহমুদকে ১১টি স্বর্ণেরবারসহ আটক করে বিএসএফ।
গত ২৯ জানুয়ারি ২টি স্বর্ণের বারসহ মেহেদি হাসান নামে এক পাসপোর্টধারীকে আটক করে বেনাপোল কাস্টমস এবং ৩০ জানুয়ারী ৭৬ হাজার ৫০০ ইউএসডলারসহ নাসরিন আক্তার সামে এক পাসপোর্টধারীকে আটক করে বেনাপোল কাস্টমস।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মিথ্যা ঘোষনার পণ্য ও ভায়াগ্রা, ফেনসিডিল, গাজার বড় চালানও আটক হয়েছে বেনাপোল বন্দরে।
ভারতগামী কয়েকজন পাসপোর্টধারীরা জানান,কাস্টমস ইমিগ্রেশনে স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় হয়রানি বেড়েছে। হাতে ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে। তবে চোরাকারকারীরা কাস্টমসে ম্যানেজ করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ব্যাগ এপাড়ে খোলা হয়না, যা কাস্টমস ও বন্দরের সিসি ক্যামেরা ঘাটলে এর প্রমান মিলবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ‘বানিজ্য নিরাপদ রাখতে স্ক্যানিং কার্যক্রম চালু করা জরুরী। দীর্ঘ দিন বন্ধের সুযোগে অনিয়ম ও চোরাচালানের সুযোগ বাড়ছে।’
স্ক্যানিং মেশিন তদারকিতে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাইবার এ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিস ইনচার্জ বনি আমিন জানান, ‘নষ্ট স্ক্যানিং ঠিক করতে কাস্টমসকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ঠিক না হওয়ায় ৩টি স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, ‘বানিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত নিরাপদ করতে স্ক্যানিং মেশিনগুলো সচল থাকা জরুরী। দ্রুত সমাধান করতে কাস্টমসে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ন-কমিশনার মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম জানান, ‘স্ক্যানিং মেশিনগুলো যাতে দ্রুত চালু করা যায় তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আপাতত সন্দেহভাজন পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীর ব্যাগ হাতে খুলে দেখা হচ্ছে।’