বিকাশ ও নগদের অ্যাপস ক্লোন করে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণার টাকায় মাদক ব্যবসা
![ছবি: বার্তা ২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Apr/03/1712136374388.jpg)
ছবি: বার্তা ২৪.কম
পেইড সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি করা হতো আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত বিকাশ ও নগদের ক্লোন অ্যাপস। এরপর কখনো অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেজে আবার কখনো শিক্ষাবৃত্তি ও বয়স্ক ভাতার টাকা পাঠানো হবে জানিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হাতিয়ে নেয়া হতো ওটিপি কোড। এরপরই সেই একাউন্টটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যেতো প্রতারক চক্রের হাতে। যখনই সেই একাউন্টে কোনো টাকা আসতো তখনই বিভিন্ন স্থানের এজেন্টদের মাধ্যমে তুলে নিতো এই চক্রটি। আবার কখনো কখনো অ্যকাউন্টে ঝামেলা জানিয়ে সেটিংসে কিছু পরিবর্তনের কথা বলে ওটিপি হাতিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গ্রাহককে বলা হতো অ্যাকাউন্টে টাকা রিচার্জ করতে। তাহলেই সমাধান হবে অ্যাকাউন্ট। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া দুটি চক্রের ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
বুধবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ) প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি ও বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে এসব জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ও ফরিদপুর জেলায় অভিযান চালিয়ে দুই চক্রের ৯ জনকে সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রধানের নামে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের মূল হোতা ইসমাইল মাতুব্বর (২১), ইব্রাহিম মাতুব্বর (২৭), মো. মানিক ওরফে মতিউর রহমান (১৯) ও মো. সিনবাদ হোসেনকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোন, ৩৫টি সিম কার্ড, ৫টি মোবাইলের চার্জার, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ব্যাগ ও নগদ- ৩০ হাজার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ ও নগদ একাউন্ট হ্যাকড করে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রটির চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- সুমন ইসলাম (২০), মাহমুদুল হাসান পলক (২০), সাব্বির খন্দকার (১৯), সাকিব (১৯) ও রাসেল তালুকদার (২৩)। এ সময় তাদের নিকট হতে ১৪টি মোবাইল ফোন, ৯১টি সিম কার্ড, ১টি ব্যাগ, ১০৪টি ইয়াবা ট্যাবলে ও নগদ-৫২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, গ্রেফতারকৃত সুমন ইসলাম মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ) ব্যবসায় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে প্রতারিত করে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রটির মূল হোতা। তার নেতৃত্বে চক্রটি প্রায় ৮-৯ মাস ধরে বিভিন্ন বিকাশ/নগদ ব্যবসায়ী এজেন্টদের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। তারা সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ উপায়ে নতুন এজেন্টদের নাম্বার সংগ্রহ করতো। সুমন প্রথমে বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ/নগদের প্রতিনিধিদের নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন বিকাশ/নগদ এজেন্টদের ফোন দিয়ে নিজেকে বিকাশ/নগদের প্রতিনিধির পরিচয় দিতো। তারা প্রতিদিন গড়ে ২০টা নাম্বারে কল দিতো। এরপর বিকাশ/নগদ এজেন্টদেরকে হাজারে ৪ টাকার পরিবর্তে ৮-১০ টাকা লাভ করার বিভিন্ন অফার সম্পর্কে অবহিত করতো। এক্ষেত্রে এজেন্টরা সেই অফার সম্পর্কে অবগত নয় বললে সুমন এজেন্টদের নিকট হতে বিকাশ/নগদের এসআরের ফোন নম্বর নিয়ে ক্লোন করে উক্ত নম্বর হতে এজেন্টদের ফোন করে সার্ভিস রিপ্রেজেনটেটিভের (এসআর) পরিচয় দিয়ে বলতো উনি আমাদের বস উনি যা বলেন সেভাবে কাজ করেন বলে ফোন কেটে দেয়।
তিনি আরও জানান, তারপর সুমন মোবাইলে ওটিপি প্রেরণের মাধ্যমে কৌশলে এজেন্টদের নিকট হতে বিকাশ/নগদের এজেন্ট নম্বরের পাসওয়ার্ডটি সংগ্রহ করতো। একইভাবে একাধিক ভিকটিমদের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে একটি মোবাইলে একাধিক বিকাশ/নগদ অ্যাপস ডাউনলোড করে এবং প্রত্যেকটি একাউন্টে লগইন করে রাখতো। সেই একাউন্টে কোনো টাকা প্রবেশ করা মাত্র সুমন মোবাইলে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে তা জানতে পারে এবং সাথে সাথে উক্ত টাকা তার অন্যান্য সহযোগী মাহমুদুল, সাব্বির, সাকিব ও রাসেলের একাউন্টে স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে রাসেল সেই টাকা তাদের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা হতে ক্যাশআউট করে সুমনের কাছে নিয়ে আসে। এ টাকা তারা সবাই মিলে ভাগ করে নিত। এই চক্রটি ২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৬০-৭০ জন বিকাশ/নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তারা সবাই স্বল্প সময়ে কোটিপতি হবার আশায় এবং মাদক সেবনের অর্থ যোগান দিতে এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।