হাসপাতালে কাটল যাদের ঈদ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাসপাতালে কাটল যাদের ঈদ

হাসপাতালে কাটল যাদের ঈদ

আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে উৎসবে মেতে উঠেছে দেশবাসী। তবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য এবার ঈদে ছুটি মেলেনি সংবাদমাধ্যমকর্মী, শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, কারাগারে দায়িত্বরত, হাসপাতাল, পরিবহনকর্মীর অনেকেই। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদেরও মেলেনি এবার ঈদের ছুটি। পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও কেউ কেউ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এবার ঈদে ছুটি কাটিয়েছেন হাসপাতালের বেডে।

অসুস্থতায় কাবু হয়ে ঈদ বিসর্জন দিতে হয়েছে তাদের। পরিবার-প্রিয়জনরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করলেও হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঈদ উপভোগ না করার যন্ত্রণায় কেঁদেছে অনেকেই।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের দিনে প্রায় ৪৯৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগীর আত্মীয়রা ঈদের দিন সেমাই ও খাবার নিয়ে দেখতে আসলেও বেশিরভাগ রোগী ও পরিবারের দিন কেটেছে বিষাদে। রেস্টুরেন্ট থেকে কেনা খাবার অথবা হাসপাতালের খাবারেই ঈদ কেটেছে অসহায় অনেক রোগীর।

রিকশাচালক মান্নান হোসেন তাদের একজন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১২৭ নং ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন তিনি। ঠান্ডা জ্বর নিয়ে গত ৪ এপ্রিল ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অসুস্থতায় স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়েও পড়ে আছেন হাসপাতালে। ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা নার্স জানালেন ঠান্ডা জ্বর থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ঈদ কেমন কেটেছে মান্নান ও তার পরিবারের জানতে চাইলে মান্নান বলেন, ভাগ্য বদলের জন্য ভোলা থেকে ঢাকা আসছি। রিকশা চালিয়ে সংসার চলে। এবার ঈদে বাচ্চাটারে কিছু কিনে দিতে পারিনি। মেডিকেলেই কাটল সব। টাকাপয়সা জমানো ছিল সব গেছে। ঈদ আমাগো গরিবের এমনিতে নাই, তার ওপর অসুস্থ।।

মান্নানের স্ত্রী আশরিফা বেগম বলেন, স্বামী অসুস্থ থাকলে কি বউয়ের ঈদ থাকে? এক সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে এভাবেই আমাদের ঈদ গেছে।

আরেক রোগী শহিদুল ইসলাম। শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। ছেলেমেয়েরা দেখে গেছেন ঈদের দিন বিকালে। তবে ঈদের নামাজ আদায় করতে না পেরে কিছুটা বিষণ্ণ তিনি।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের নামাজটাই তো আসল। রোজা রাখতে পারিনি, নামাজটাও গেল। হাসপাতালে ঈদ কাটানো কি ভালো? ভালো না তো। কিন্তু কী করব কিছু তো করার নাই।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রোগীদের সেবা দিতে এবার ছুটি পাননি সেখানে দায়িত্বে থাকা ১২৩ জন নার্স। পরিবারে সময় দেওয়ার বিপরীতে তাদের ঈদ কেটেছে রোগীদের সেবা করে। দায়িত্ব পালনে তাদের ঈদ আনন্দ অনেকটা বিলীন হলেও মানুষের সেবা করতে পেরে খুশি তারাও।

মিফতাফি তাবাসসুম নামের এক নার্স বলেন, দেখেন মানুষের সেবা করা মহৎ কাজ। এই আশায় এসেছি সেবা করার জন্য। ঈদ তো একদিনের জন্য। তবে এই সেবা আমার প্রতিদিনের কাজ। আফসোস পরিবার পাশে নেই, তবে খারাপ কাটেনি।

সিমরান আক্তার সীমা নামের আরেক নার্স বলেন, পরিবারের সাথে আমাদের ঈদ খুব একটা কাটানো হয় না। দায়িত্ব পালনে অনেক ঈদ একা কাটাতে হয়েছে। তবে আক্ষেপ নাই। পরিবারের কয়েকজন মানুষের বিপরীতে অনেক মানুষের সেবা করতে পেরেছি।

হাসপাতালটিতে শতাধিক নার্স ও রোগীর পাশাপাশি ৭ জন ডাক্তার। এছাড়া প্রায় ২৫ জন সাপোর্ট স্টাফ ছুটি পাননি এবার ঈদে। অন্য সবার মত তাদেরও ঈদ কেটেছে মানুষের সেবা নামের দায়িত্ব পালন করেই।