সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধি-নিষেধ চায় মানবাধিকার কমিশন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিক মোহসিন কবিরের ‘গর্ভবতী মাকে মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে বের করে দিলেন গাইনি চিকিৎসক’ শিরোনামে লেখাটি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়।

সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, রাজধানীর শ্যামপুর থেকে এক গর্ভবতী নারী মিডফোর্ড হাসপাতালে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক আছে মর্মে স্বাস্থ্যকর্মী জানান। দায়িত্বরত চিকিৎসক তার আর্থিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করেন এবং সিজার করতেই হবে বলে জানান। কিন্তু গর্ভবর্তী নারীর পূর্বে দুটি সন্তান স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে উল্লেখ করেন এবং সিজার করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে ওই চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর ওপর মানসিক চাপ তৈরি করেন। চিকিৎসক আপত্তিকর মন্তব্যসহ হয়রানিমূলক কথা বলেন মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই নারী মুগদা নবস্বাস্থ্য নামক একটি সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়।

আরও বলা হয়, গত বছরের ১০ জুন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার অনলাইনে ‘শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার যেন সুনামির মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) ৩১তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের একটি অধিবেশনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার যেন সুনামির মতো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অস্ত্রোপচার বাড়ছে। দুটি শিশু জন্মের একটি হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। এতে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্য ব্যয়।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে সিজারিয়ান প্রসবের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মর্মে পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার করা মা ও নবজাতকের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরূপ। যেখানে স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণে অর্থ ভর্তুকি প্রদান করতে হয়, সেখানে মিডফোর্ডের মতো একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে চিকিৎসক কর্তৃক সিজার করতে চাপ প্রয়োগ করার বিষয়টি কমিশনের নিকট বোধগম্য নয়। এরূপ সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার প্রকৃত কারণ কী তা খতিয়ে দেখা এবং সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন মর্মে কমিশন মনে করে।

এ অবস্থায়, মিডফোর্ড হাসপাতালের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক কমিশনকে অবহিত করতে পরিচালক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড) হাসপাতালকে বলা হয়েছে। একইসাথে প্রসবে অপ্রয়োজনীয় সিজার/সি-সেকশন বন্ধ, এ লক্ষ্যে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সিজারিয়ান প্রসবের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

   

রোহিঙ্গাদের অতিসত্বর মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন আবশ্যক: মানবাধিকার চেয়ারম্যান



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রোহিঙ্গা সংকট নিরসন দ্রুত নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো উচিত। সময়ের সাথে বহুমাত্রিক সংকট তীব্র হচ্ছে এবং মানবিক অবস্থার অবনতি ঘটেই চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস এর পরিচালক জন কুইনলি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাতে আসলে তিনি এই কথা বলেন। সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গা সংকটের বহুমাত্রিক দিক উপস্থাপন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান।

আলাপকালে কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, রোহিঙ্গারা বর্বরোচিত আক্রমণ, সহিংসতা ও গণহত্যার শিকার হয়ে নিজেদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে। বৃহৎ পরিসরে হত্যা, যৌন নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ছে তারা। সহিংসতার ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক প্রভাব এখনো রয়েছে। তাদের অধিকার সুরক্ষা করে ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের কাজ।

সাক্ষাৎকালে জন কুইনলি ‘My Tears Could Make a sea’-The Infliction of Mental Harm as Genocide Against Rohinga’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা উপহার দেন এবং সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রকাশনাটিতে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ রয়েছে। প্রকাশনাটি মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস এবং ইয়েল ল কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটিস ক্লিনিক যৌথভাবে প্রকাশ করেছে। বইটিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ রয়েছে এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বইটি।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশনা ও গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বর্তমান কমিশন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।

;

ফোনে ঘোষণা দিয়ে হত্যা: আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের গড়িমসি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের গড়িমসি

আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের গড়িমসি

  • Font increase
  • Font Decrease

মুঠোফোনে কল করে ঘোষণা দিয়ে ঈদের দিন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে শাহীন আহমদকে (২৫) হত্যা করা হয়। ঘটনার পর নিহতের বড়ভাই মো. শামীম আহমদ স্থানীয় থানায় ১০জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার আসামিরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতারে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি মামলার বাদী ও পরিবারের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সিলেট জেলা প্রেসক্লাব ও অনলাইন প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন কোম্পানীগঞ্জের নিহত শাহীনের বড়ভাই ও ইছাকলস নিজগাও গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে মো. শামীম আহমদ ।

তবে, পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামীম আহমদ জানান, গত ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিবাগত রাত পৌনে আটটায় সংঘবদ্ধ একটি সন্ত্রাসীচক্র সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইছাকলস নিজগাও গ্রামের পাকা সড়কের উপরে প্রকাশ্যে তার ছোট ভাই রাজধানী ঢাকার ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শাহীন আহমদকে (২৫) নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে মামলার মূল আসামিদের গ্রেফতারে অসহযোগিতা ও গড়িমসি করছে পুলিশ।

তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের মাসখানেক আগে থেকে সন্ত্রাসীরা তাকে ও তার ভাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। তাদের ক্রমাগত হুমকিতে ভয় পেয়ে তিনি নিরাপত্তার চেয়ে ঢাকার বংশাল ও কোম্পানীগঞ্জ থানায় একাধিক জিডি করেন। ঈদুল ফিতরের জামাত থেকে খুনি সন্ত্রাসী চক্র তাদের উপর আক্রমণ করার জন্য আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে আসছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা ঘর থেকে বের হননি। সন্ধ্যায় তাদের এলাকার ইউপি সদস্য নেছার মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উভয় পক্ষের মধ্যে সালিশ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করলে তারা নিজেদেরকে একটু নিরাপদ মনে করে ঘর থেকে বের হন। কিন্তু বের হয়েই সড়কে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী চক্রের আক্রমণের শিকার হন তিনি, তার চাচা ও ছোটভাই শাহীন আহমদ। এই হামলায় তিনি ও তার চাচা আমির আলী বেঁচে গেলেও সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান তার ছোট ভাই শাহীন।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর কোম্পানীগঞ্জ থানায় ১০জনকে আসামি করে মামলা দেন। মামলার ১নং আসামি মরম আলী ও ৮নং আসামি র‌্যাব ও পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু হুমকিদাতা এবং হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি শাহেদ ও আনোয়ারসহ সকল আসামিরা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আসামিদের সঠিক অবস্থান পুলিশকে জানানোর পরও রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ গড়িমসি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি পুলিশ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের কাছে তার ভাই হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহতের চাচা আমির আলী, ছোটবোন শামিমা আক্তার, ছোট বোনের স্বামী শাহিন মিয়া ও আত্মীয় রিপন আহমদ।

এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোম্পানীগঞ্জ থানার এসআই মো. মনজুর রহমান জানান, মামলার প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামিদের গ্রেফতারেও পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয় ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম দস্তগীর আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

;

নরসিংদীতে নগদের মাঠকর্মীকে গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৩



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদীতে নগদের দুই মাঠকর্মীকে গুলি করে ৬০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ১৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- সদর উপজেলার শালিধা এলাকার মৃত অলি মিয়ার ছেলে বিধান মিয়া (৩০), জীতরামপুর এলাকার মৃত লিটন মিয়ার ছেলে হৃদয় (২৪) এবং পলাশ উপজেলার ইছাখালী এলাকার মোশারফ মিয়ার ছেলে সোলাইমান মিয়া (৩৭)।

পুলিশ সুপার জানান, গত ৪ এপ্রিল নগদের নরসিংদী ডিপো থেকে মোটরসাইকেলে করে রায়পুরায় যাচ্ছিলেন নগদের দুই কর্মী। এ সময় রায়পুরা থানার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের মাহমুদ নগর এলাকার একটি ব্রিজের পাশে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গুলি ছুড়ে তাদের আহত করে ৬০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এ বিষয়ে রায়পুরা থানায় মামলা হলে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযানে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া আসামিদের নামে জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

;

আইন মানছে না সিগারেট কোম্পানি, দিচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তামাকজাত পণ্য ও সিগারেট কোম্পানিগুলো আইন না মেনে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে জানিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা-২০২১ এবং ভোক্তা অধিকার আইন অনুসারে কোনো পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও সিগারেট কোম্পানিগুলো এই আইন একেবারেই মানছে না।

৫৯ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের (জর্দ্দা ও গুল) মোড়কে উৎপাদনের তারিখ পাওয়া গেলেও বিড়ি ও সিগারেটের প্যাকেটে সেই হার মাত্র ৩ শতাংশ। উৎপাদনের তারিখ না দেওয়ায় তামাক কোম্পানিগুলো কর ফাঁকির সুযোগ নিচ্ছে।

পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান না করার সুযোগও নিচ্ছে তারা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) গুলশানের একটি হোটেলে অ্যারিস্টোক্র্যাট ইন-এ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভির্সিটি ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা)-এর আয়োজনে ‘তামাকজাত দ্রব্যের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন- বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) উপউপাচার্য প্রফেসর ড. গনেশ চন্দ্র সাহা।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, সিটিএফকে’র গ্র্যান্ট ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া, ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস অব সোসাইটি (ডাস্)-এর টিম লিড আমিনুল ইসলাম বকুল, এইড ফাইন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেলের অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল বাসেদ।

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী এবং ‘প্রত্যাশা’ মাদকবিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।

টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর সদস্য সচিব ও প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞেরা উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধে মো. বজলুর রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতির মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান অন্যতম। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩)-এর ধারা ১০ অনুযায়ী সব তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের উভয়পাশের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ এলাকা জুড়ে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র সতর্কবার্তা প্রদান করতে হবে।

টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগের বিভাগীয় শহর থেকে ২শ ৭২টি তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গবেষণার উল্লেখযোগ্য ফলাফলের মধ্যে ৮৫ শতাংশ তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া গেছে। ৭৬ শতাংশ মোড়কের উভয়পাশে এই সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি। ২৬ শতাংশ মোড়কে ৫০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়েছে। ৭ শতাংশ মোড়কে ছবির সঙ্গে লিখিত বার্তা প্রদান করেনি। ৭২ শতাংশ মোড়কের লিখিত সতর্কবাণী কালো জমিনে সাদা হরফে মুদ্রিত হয়েছে।

বিড়ির ৮০ শতাংশ মোড়কেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যান্ডরোল দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে এবং ২৫ শতাংশ মোড়কে ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ মর্মে কোনো বাণী প্রদান করা হয়েছে। কোনো সিগারেটের কার্টনেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ৩৩ শতাংশ তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া গেছে। ৯ শতাংশ মোড়কে ট্রেড লাইসেন্স নম্বর ছিল। ৫১ শতাংশ মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ছিল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. গনেশ চন্দ্র সাহা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে উৎপাদিত পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ এবং উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম, ঠিকানা প্রদান বাধ্যতামূলক করা উচিত। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো তামাকপণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে বিক্রি করতে হলে তাদেরও আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে প্যাকেজিং করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু তামাকজাত পণ্যের মোড়কের ভিন্নতা, মানহীন মোড়ক, সাইজের ভিন্নতা, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের উপযুক্ত মোড়ক না থাকা এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং। সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর সঠিক বাস্তবায়নে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আইন লঙ্ঘন করছে। তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করছে। প্যাকেজিং আইন লঙ্ঘন করছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের (জর্দ্দা, গুল প্রভৃতি) ব্যবহার বাংলাদেশের কালচারের সঙ্গে মিশে আছে। এর ব্যবহার কমাতে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে মোড়কে এই সতর্কবাণীর পরিমাণ ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৯০ শতাংশ করা অত্যন্ত জরুরি।

আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, সমস্যা উদ্ঘাটন ও সমাধানের জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নিতে হলে গবেষণা করতে হবে। আজকের এ গবেষণার ফল সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের গবেষণা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করা সম্ভব বলে আশা করছি!

;