বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
পৌর মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অভিযোগ

পৌর মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের অভিযোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলেন করেছেন পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ। এতে মেয়র মুহিবের অপসারণ করার জোরদাবি জানিয়েছেন কাউন্সিলর সদস্যরা।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে পৌর শহরের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া।

এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম, ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলররা বলেন, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ইচ্ছে মতো যা খুশি, তা করে যাচ্ছেন। মেয়র মুহিবের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ গত ৯ এপ্রিল দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ের কাউন্সিলর হল রুমে প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়ার সভাপতিত্বে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক বিশেষ জরুরি সভা করে মেয়র মুহিবের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থার প্রস্তাব’ গ্রহণ করেছেন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে ও ১৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ‘অনাস্থার প্রস্তাব’ প্রদান করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে কাউন্সিলররা উল্লেখ করেন, দুর্নীতি করার সুবিধার্থে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌরসভার কার্যালয় থেকে সব অফিসিয়াল কাগজপত্র তার (মেয়র) বাসভবনে নিয়ে গেছেন, এমনকি পৌর কার্যালয় হতে পৌরসভার ফার্ণিচার-ল্যাপটপ তার (মেয়র) নিজ বাসভবনে নিয়ে অফিসের সব স্টাফ দিয়ে পৌর কার্যালয়ের পরিবর্তে বাসভবনে অফিসের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পৌরসভার প্রত্যেক মাসের সাধারণ সভা পৌর কার্যালয়ে না করে, তার বাসভবনে করে আসছেন। এতে জনগণ সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মুহিবুর রহমান পৌর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত স্থায়ী কমিটি ও টিএলসিসি’র কমিটির কোনো সভা করেন নাই। এমনকি পৌরসভায় অডিটও হয়েছে তার বাসাতেই।

পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া একক ক্ষমতা বলে মাস্টার রোলে নিজের আত্নীয়-স্বজনকে পৌরসভায় নিয়োগ দিয়ে জনপ্রতি ২/৩ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। সরকারের রাজস্ব খ্যাত থেকে বাজেট অনুসরণ না করে নামে-বেনামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে, ডেঙ্গু মশক নিধন ও কোভিড-১৯ নামে সরকারি টাকা এবং বিশ্বনাথ পুরাণ বাজারের গরু-হাটের উন্নয়ন কাজ দেখি বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এছাড়া মেয়র মুহিবুর রহমান রাজস্ব খাত থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করার ব্যয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এমনকি পৌরসভার টাকা ‘অন্য ইউনিয়নে ও অন্য উপজেলায়’ স্বদর্পে বিতরণ করেন। অথচ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা না করেই পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ‘প্রবাসী চত্ত্বর, হাজী মফিজ আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড করেজ ও মাদানিয়া মাদ্রাসার’ পাশে জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ও বাসিয়া নদীতে ডাম্পিং করছেন।

তারা বলেন, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিষদের অগোচরে নিজের (মেয়রের) পছন্দের লোক দ্বারা পরিচালনা করে কাউন্সিলরগণের প্রত্যয়ন ছাড়াই লক্ষ লক্ষ টাকার বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।

এমনকি ‘বিশ্বনাথ পৌরসভা’র নামে ‘সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এজেন্ট ব্যাংকিং, ব্যাংক এশিয়া’য় পরিষদের অজান্তে অনেক একাউন্ট আছে এবং উক্ত একাউন্টগুলোতে লক্ষ লক্ষ টাকাও জমা ছিল। মেয়র মুহিব নিজের একক ক্ষমতা বলে এসব একাউন্ট থেকে কিছু পৌর কর্মচারী (জগন্নাথ সাহা, সাজেদুল হক, মোতালেব হোসেন, নাজির হোসেন গংর) মাধ্যমে সেই টাকাগুলো উত্তোলন করে ভুয়া চালানের মাধ্যমে কোনো প্রকল্প না করেই লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেছেন।

মেয়র মুহিব পৌরসভার মাসিক সভায় সাদা কাগজে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর করিয়ে ও মাসিক রেজুলেশনের কপি না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মাফিক কার্যবিবরণী লিখে সেটাকে কৌশলে পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। পৌর পরিষদ পৌরসভার বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করার জন্য মেয়র মুহিবকে অনুরোধ করলেও, আজ পর্যন্ত মেয়র তা করেননি।

এছাড়া জনশ্রুতি রয়েছে মেয়র পৌরসভার সব কার্যাদেশের বিলের জন্য গড়ে ৫% করে ঘুষ গ্রহণ করেন। এমনকি পৌর পরিষদের সভায় সবার সম্মুখে মেয়র সেটা নিজেও স্বীকার করেছেন। পৌরসভার নকশাকার আশরাফুজ্জামান চয়নকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে ‘সহকারী প্রকৌশলী’ পদে এবং আয়কর কর্মকর্তা সাজেদুল হককে একাউন্টন্টেস পদে পদায়ন করে নিজের (মেয়র) বাসায় বসিয়ে নামে, বে-নামে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে রাজস্ব খাত থেকে টাকা উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন। নিজের ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করে সরকারি আইন উপেক্ষা করে রাজস্ব থেকে গাড়ির তেল ক্রয়, গাড়ির ড্রাইভারের বেতন পরিশোধ, গাড়ির মেরামত ব্যয় দেখিয়ে পরোক্ষভাবে জনগণের প্রদত্ত ট্যাক্সের টাকা আত্মসাৎ করছেন। বিচার সালিশের ভিডিও করে তার ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল করে জনগণের মানহানি করে আসছেন।

   

রক্তদাতারা মানবিক গুণের অধিকারী: কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা



Sajid Sumon
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেছেন, 'রক্তদান মুমূর্ষুদের জীবন বাঁচাতে শ্রেষ্ঠ কাজ। একজন মানুষের মধ্যে মানবিক গুণ জাগ্রত হলেই রক্তদানের মতো এমন মহৎ কাজ করতে পারেন। আর রক্তদাতারা মানবিক গুণের অধিকারী।'

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদাতা সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, রক্তের যেহেতু বিকল্প নেই। রক্তদাতারা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই মহতী এ কাজটি করে যাচ্ছেন। রক্ত কাকে দিচ্ছেন সেটিও তাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। রক্তদানই আত্মত্যাগী- এটাই মানুষদের কাছে বড় কথা। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ভূপেন হাজারিকার গানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মানুষ মানুষের জন্যে। সবাই একটু সহানুভূতি চায়।

তিনি বলেন, এরকম সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে রেখেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজগুলো স্বাধীনভাবে ভোগ ও পরিচালনা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ জাতিকে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট দেশ উপহার দিতে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একজন মহৎ মানুষ, যার ভিতর গুণ আছে, মানবিক মূল্যবোধ আছে, প্রজ্ঞা আছে, যিনি অপরের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করছেন, এর চেয়ে দুর্লভ দান আর কিছু হতে পারে না। আজ এ মহতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়াটাও আমার জন্য এক দুর্লভ মুহূর্ত। প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, যারা প্রজ্ঞাদ্যোতি জ্বালিয়ে অন্যের আলো জ্বালাচ্ছেন তাদের এই আলোকচ্ছটা অন্যের কল্যাণে আরও ছড়িয়ে পড়ুক। এটাই যেন হয় সকলের প্রেরণার উৎস। সবাই এগিয়ে আসুক। এ ধরনের মহৎ মানবিক কাজের সাথে সক্রিয় থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা জানান, দুই যুগে ১৬ লাখ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান সরবরাহ করে মুমূর্ষু মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে দেশের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী রক্তদানের সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ২০০০ সালে ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ২৪ বছরে সংগঠনটি মোট সরবরাহ করেছে ১৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬৩ ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান। নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছা রক্তদাতার সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। দুই যুগে ১৬ লাখ ইউনিট রক্ত দিয়ে সেবা করতে পারার জন্যে কোয়ান্টাম ল্যাবের পক্ষ থেকে সকল স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা। একই সাথে কমপক্ষে ৩ বার রক্তদান করে লাইফ লং, ১০ বারের দানে সিলভার, ২৫ বারে গোল্ডেন এবং ৫০ বার রক্তদান করে প্লাটিনাম ক্লাবের সদস্য হয়েছেন- এমন তিন শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রধান অতিথি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এসময় তাদের হাতে সম্মাননা সনদ, ক্রেস্ট ও মেডেল তুলে দেন।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক নাহার আল বোখারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোটিভেশন এম রেজাউল হাসান। স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি দেশে রক্ত চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে তরুণ স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের মানবিক এ সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আলোচকরা।

;

‘আমরা বিক্রি না হলে বউ-বাচ্চার পেটে ভাত জোটে না’

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে। এর মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের আধুনিক চক সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাত ভরে উঠেছে মানুষের আনাগোণায়। সংখ্যায় ওরা ২০০-২৫০ জন। তাঁদের পরিচয় শ্রমিক, আরও স্পষ্ট করে বললে দিনমজুর। কেউ নির্মাণ-শ্রমিক, কেউ আসবাবের কাজ করেন, কেউবা করেন বাসা-বাড়ির মালামাল উঠানামা।

কেউ এলেই বসা থেকে এক দৌড়ে ঘিরে ধরে শ্রমিকের দল, আর অক্লান্ত গলায় হাঁক ছাড়তে থাকেন, ‘ভাই/স্যার আমাকে কিনেন…!’ মে দিবসের দুদিন আগে গত সোমবার ভোরের চিত্র এটি। তবে শুধু এইদিন নয়, মানুষ বিক্রির এই হাট বসে প্রতিদিনই। এভাবেই চলে আসছে অন্তত ৫০ বছর ধরে।

‘ঘরে ছয় ছেলে মেয়ে আর আমি ও আমার স্ত্রী। এই সময়ে আটজনের সংসারের ঘানি টানা কত কষ্টের বুঝতেই তো পারছেন। ভোর হওয়ার আগেই তাই এখানে আসি বিক্রি হওয়ার আশায়।’-এক টানে বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলেন আবদুর রহিম। ‘তারপর’ বলে প্রশ্ন ছুঁড়লেও কথা বের হচ্ছিল না এই মধ্যবয়সীর মুখ থেকে। গলায় কি যেন দলা পাকিয়ে আছে। একটু পর স্যাঁতস্যাঁতে চোখে বলতে শুরু করলেন, ‘আমি বিক্রি না হলে বউ-বাচ্চাদের পেটে ভাত জোটে না। তাই শরীর যতই খারাপ হোক প্রতিদিন চলে আসি। কোনো সময় নিয়মিত কাজ পাই, কখনো পাই না।’

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

কথা বলতে বলতেই এক ব্যক্তি এসে নির্মাণকাজের জন্য আবদুর রহিমকে নিতে চান। দরদাম শেষে ‘বিক্রি’ হতেই মুখে এবার খুশির হাসি। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের ভাত নিয়ে আজ আর কোনো টেনশন নেই।’

৩৫ বছর ধরে এখানে ‘বিক্রি’ হওয়ার আশায় আসেন সত্তরোর্ধ আবুল কাশেম। বয়স যথই ছোবল বসাক, সবসময় নিজেকে সবল দেখানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন এই প্রবীণ। বয়স লুকানোর রহস্য জানতে চাইলে কাশেমের মুখে অট্টহাসি। বলতে শুরু করেন,‘বয়স বেশি বললে কে কাজে নেবে? বলবে এই বুড়ো বয়সে কোনো কাজ পারবে না। তাই চেষ্টা করি নিজেকে সুস্থ দেখাতে।’ কি কাজ করেন এমন প্রশ্নে ভোলার আঞ্চলিক ভাষায় কাশেম জানালেন, তিনিও নির্মাণশ্রমিক।

ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাসিন্দা কাশেম বহুবছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে থাকছেন পরিবার নিয়ে। এতবছর বেশ ভালোভাবে কাজ করে গেলেও এখন বয়স ভাড়ায় প্রায় সময় থাকছেন অসুস্থ। কিন্তু তবুও তাঁকে প্রতিদিন ভোরে কাজের উদ্দেশে বের হতে হয় বাসা থেকে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করার জন্য কোনোদিন পান ৭০০ টাকা, কোনোদিন পান ৮০০টাকা।

বয়সে অনেকটাই তরুণ কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মোহাম্মদ ইসমাইলও এখানে ৫-৬ বছর ধরে এসে কাজ খুঁজে নিচ্ছেন। মে দিবস সম্পর্কে জানেন নাকি-এমন প্রশ্নে বললেন, ‘জানি, কিন্তু জেনে কি হবে? ওইদিনও তো কাজ করতে হবে। কাজ না করলে খাব কি?’


ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

ইসমাইলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক বলতে শুরু করেন, ‘পেটে যদি ভাত না থাকে দিবস পালন করে কি হবে? সবকিছুর দাম যে এত বেশি। আমরা কি খাই, কীভাবে খাচ্ছি-কেউ তো খবর নেয় না। আবার দেখা যায় ১ হাজার টাকায় ভাড়া করে দিন শেষে হুট করে ছুতা বের করে ধরিয়ে দিচ্ছেন ৭০০-৮০০টাকা। যে যেভাবে পারে সেভাবেই আমাদের ঠকান। সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে।’-শ্রোতা পেয়ে যেন দুঃখের গল্পের জানালা খুলে দিলেন ইট-বালি বহন করার এই শ্রমিক।

সময়ের বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই কমতে শুরু করে ভিড়। কারণ বিক্রি হওয়া শ্রমিকেরা যেতে শুরু করেন কাজে। কিন্তু অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের অপেক্ষা যেন ফুরাচ্ছে না। একটু আগেই ঘড়ির কাটারা মিলেমিশে জানান দিয়েছে সময় এখন ৯টা। সেটি দেখে চল্লিশোর্ধ হাফিজের কপালে ঘামের পারদ যেন বেড়েই চলেছে। তিনিও অন্যদের মতো দাঁড়িয়েছিলেন ‘বিক্রি’ হতে। অপেক্ষা করতে করতে সকাল ১০টা বেজে গেলেও আরও অনেকের মতো থেকে যান অবিক্রিত। ঘড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে হাফিজ বুঝে যান কপাল-লিখন। কি আর করা। ইট-বালি ভরার ঝুঁড়িটা পিঠে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন হাফিজ। তবে ফেরার সময় শেষবারের মতো একটা চেষ্টা করলেন হাফিজ। ফোন দিলেন ‘নব্যবন্ধু’ আবদুল খালেককে। খালেক বিক্রি হয়েছেন তাঁরই সামনে। প্রতিদিন একই সঙ্গে ‘মানুষ বিক্রি’র এই অঘোষিত হাটে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তার সঙ্গে পরিচয় হাফিজের। ‘তুমি যেখানে কাজ করছো সেখানে কি আর লোক লাগবে? লাগলে কথা বলে দেখো তাদের সঙ্গে। মজুরি কম হলেও আমি কাজ করতে রাজি।’–খালেককে দুঃখ নিয়ে বলে গেলেন হাফিজ। খালেক ওদিকে কথা বলে উত্তর দিলেন হাফিজকে।

কি উত্তর দিয়েছেন সেটি জানতে আর হাফিজের সঙ্গে কথা না বললেও চলে। তার মলিন চেহেরাতেই যেন লেখা আছে সব!!

;

মহান মে দিবস

শ্রমে ঘামে মাঠে ঘাটে যে জীবন

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



মানসুরা চামেলী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: নূর এ আলম

ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

মাথার উপর তপ্ত সূর্য। ঘামে ভিজে সপসপে শরীর। জীর্ন মুখে মুক্তার মতো চক চক করছে ঘামের ফোঁটা। বিরতি দিয়ে টপটপ করে গাল-থুতনি বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা সেই ঘাম পড়ছে মাটিতে। রোদের এমন প্রখরতা; চোখ খুলে তাকানোটা দায়! আবহাওয়ার এমন বৈরিতায় দৃষ্টি কাড়ে মুখভর্তি হাসি নিয়ে দাঁড়ানো এক সরল চাহনী! তাকে দেখলে মনে হবে বলছেন ‘আজন্ম কাঁধে শোষণের চাকা বইবো না/ এবার লড়াই, এবার লড়াইয়ে অস্ত্র শানিয়ে দাঁড়া।’

সূর্যের উগ্রতা তোয়াক্কা করে তুরাগের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা সরল চাহনীর এই নারী একজন দিনমজুর। ঢাকার আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে তুরাগ নদীর তীরে বালু লোড-আনলোডের কাজ করেন তিনি। দিনভর উত্তপ্ত গরমে শ্রম দেন, তার বিনিময়ে যৎসামান্য মজুরির জুটে তার কপালে। তাদের বলা হয় শ্রমজীবী মানুষ। যাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকে। দুবেলা ভালো খাবার জুটত না। সংসারের অভাব দূর করতে করেন অমানসিক পরিশ্রম।

ছবি: নূর এ আলম

এমন শ্রমজীবী মানুষের জন্য অধিকার রক্ষায় ১ মে পালিত হয় আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবস। দিনটি মে দিবস বলেও পরিচিত। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিকদের সম্মানে মে দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশ।

উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চাইতেও বেশি। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিল স্বল্প। যা তাঁদের জীবনধারণের জন্য যথাযথ ছিল না। একটা পর্যায়ে শ্রমিকপক্ষ ক্ষুব্ধ হতে থাকে। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে নির্ধারণ করেন শ্রমিকেরা। কিন্তু কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকেরা। সেখানে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করলে নিহত হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক।


এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। পরে ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে বাধ্যতামূলক কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক দেশের শ্রমিকেরা মে মাসের ১ তারিখ সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালনের দাবি জানান। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে পালিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এ দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি।


শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস।

তবে শ্রমিকদের কাছে মে দিবস যেন আরেকটা দিন। এ বিষয়ে অনেকেই অবগত নন। কারণ এই দিনেও তাদের জীবিকার সন্ধানে বের হতে হবে। না হলে জুটবে না দুমুঠো ভাত। অনাহারে থাকবে পরিবারের সদস্যরা। সুতরাং যাদের জন্য শ্রম দিবস তাদের কাছে এই দিনটির কোন গুরুত্ব নেই। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের কাছে শ্রমেই ধর্ম, শ্রমই কর্ম। তাই তো বালু শ্রমিকসহ শ্রমিকদের মুখে একই বক্তব্য ‘আমাদের সব দিবসই সমান। কাম করলে টাকা না করলে কোন টাকা পায় না। এই জন্য আমাগো কোন ছুটির দিনও নেই। কাম করায় লাগবে। কাম না করলে সংসারই চলবে না।’

শ্রমজীবী মানুষকে জাগিয়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে সমাজ ও সরকারকে। দেশের অভ্যন্তরে আয় বৈষম্য যে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে, তা প্রতিহত করে শ্রমিকদের হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে প্রতিহত হবে অন্যায়, নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মতো অশুভ শক্তি। এর মাধ্যমে মে দিবসের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নও ঘটবে। সেদিনের প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সুর মেলাবে সবাই– জাগো অনশন-বন্দী, ওঠ রে যত/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত!/ যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি'/হাঁকে নিপীড়িত-জন-মন-মথিত বাণী,/নব জনম লভি' অভিনব ধরণী/ওরে ঐ আগত/আদি শৃঙ্খল সনাতন শাস্ত্র-আচার/মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার!/ভেদি' দৈত-কারা/আয় সর্বহারা!/ কেহ রহিবে না আর পর পদ-আনত।

;

পঞ্চগড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির মদনটাক পাখি উদ্ধার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড়
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পঞ্চগড়ে চলমান দাবদাহের মাঝে অসুস্থ্য হয়ে একটি বাঁশ ঝাড় থেকে অসুস্থ্য অবস্থায় একটি মদনটাক পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পাখিটি ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসময় বাদাম খেতে কাজ করা এক যুবক পাখিটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদা পৌরসভার কলাপাড়া এলাকায় একটি বাঁশঝাড় থেকে পাখিটিকে উদ্ধার করে ওই এলাকার যুবক সাকির ইসলাম। উদ্ধারের পর দ্রুত নিজ বাড়িতে নিয়ে পানি ও স্যালাইনসহ বিভিন্ন খাবার খাইয়ে পাখিটিকে কিছুটা সুস্থ্য করে সে। পরে খবর পেয়ে বন বিভাগের সদস্যরা নিজ হেফাযতে নেয় মদনটাক পাখিটিকে।

এদিকে বিলুপ্ত প্রজাতির এই মদনটাক পাখি উদ্ধারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাখিটিকে দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকাবাসী। জানা গেছে, তীব্র গরমের মাঝে খোঁলা আকাশে উড়তে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে বিপন্ন প্রজাতির বড় আকারের এ মদনটাক পাখিটি।

পাখিটিকে উদ্ধার করা যুবক সাকির ইসলাম বলেন, আমি বাদাম খেতে কাজ করছিলাম। এসময় খেতের পাশের জমিতে থাকা বাঁশ ঝাড়ে উপর থেকে একটা কিছু পড়তে ও শব্দ শুনতে পাই। পরে সেখানে গিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে পানি ও স্যালাইন সহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াই। এর কিছু সময় পর পাখিটা কিছুটা সুস্থ্য হয়ে ওঠে। এদিকে খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন এসে পাখিটিকে নিয়ে গেছে। জানতে পেরেছি এটি বিলুপ্ত প্রজাতির মদনটাক পাখি।

উপজেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল করিম জানান, ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সুস্থ্য হয়ে উঠলে আবাও খোঁলা আকাশে তাকে অবমুক্ত করা হবে।

;