সত্যজিৎ রায়ের দুই’শ বছরের পৈতৃক বৈশাখী মেলা বন্ধ, হতাশ ব্যবসায়ীরা
-
-
|

দূর থেকে মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন
অস্কার বিজয়ী কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ির ঐতিহ্যের বৈশাখী মেলা প্রায় দুই শত বছরের পুরোনো। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এ মেলাটি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়নি ৷
এ কারণে দূর থেকে মেলায় আগত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই খবরে এলাকাবাসীসহ দূর থেকে আগত পর্যটকদের মনে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে৷ কেননা এই মেলার জন্য একবছর ধরে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিকরা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকেন।
বুধবার (৮ মে) থেকে মেলাটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। মেলা না হওয়ায় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর বড় আঘাত হিসেবে দেখছেন সংস্কৃতি কর্মী ও সাহিত্যিকরা৷ দ্রুত সময়ে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অচলাবস্থা নিরসন করে মেলা আয়োজনের দাবি জানান তারা৷
জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ শিশুসাহিত্যিক হরি কিশোর রায়চৌধুরী শ্রীশ্রী কালভৈরব পূজা উপলক্ষে বৈশাখের শেষ বুধবার এ মেলার প্রচলন করেছিলেন। এই রায় চৌধুরী বাড়িতেই ১৮৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। রায় চৌধুরী বাড়ির প্রায় চার একর ভূমিসহ আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে এ মেলা বসে। মেলায় রকমারি পণ্যের কয়েক শ স্টল বসে। বাউলগান ও কবিতা পাঠের আসরও হয়। এতে দেশের প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকরা অংশ নেন। এছাড়াও থাকে বিনোদনের নানা আয়োজনও।

স্থানীয় সূত্র ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কটিয়াদীর মসুয়া ইউনিয়নে রায় বাড়ির মাঠে প্রতিবছর মেলা হয়ে আসছে। এবছর মেলার নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব নিতে নজর পড়ে একটি পক্ষের। ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের একটি অংশের কোন্দল দেখা দেয়৷ এতে বিভক্তির শুরু৷ মেলা কমিটিতে নিজের পছন্দের কিছু লোককে যুক্ত করতে চেষ্টা চালান স্থানীয় মো. রুবেল হোসেন৷ তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন না হওয়ায় মেলাটি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি৷ যদিও তিনি এটি অস্বীকার করেছেন।
মেলার অনুমতি না দেয়ার জন্য রুবেল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরসহ বিভিন্ন দফতরে একটি লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন, মেলার ওই দিন পার্শ্ববর্তী উপজেলা পাকুন্দিয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলার পোড়াবাড়ী মেলায় কিশোর গ্যাং দৌরাত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণে মারামারি ঘটনা থেকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই মেলাতেও তা হতে পারে বলে তিনি কারণ উল্লেখ করেন৷
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এবারও সেই তারিখ অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা থেকে হরেক রকম পণ্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা এসে মেলার অনুমতি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ৷ অনেকের কাছে ফিরে যাওয়ার ভাড়ার টাকাও নেই৷
মেলাতে নরসিংদী জেলা থেকে আসা কসমেটিক ব্যবসায়ী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি ৫ বছর ধরে এই মেলাতে এসে ব্যবসা করি। এবারও এসেছিলাম। মেলার অনুমতি না থাকায় মনডা খারাপ হইয়া গেল। যাওয়ার টাকা নেই। খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।’
কটিয়াদী সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি মেরাজ রাহীম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেলা হচ্ছে না এটি আমাদের জন্য হতাশার৷ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত। এটি কটিয়াদী তথা কিশোরগঞ্জের জন্য ঐতিহাসিক স্থান। মেলা যেন কখনো বন্ধ না হয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এটা হোক, এই দাবি জানাচ্ছি৷’
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহ জালাল সাজু জানান, মেলা নিয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি জেলা প্রসাশক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। আমরা মেলার অনুমতির জন্য গেলে উপজেলা প্রশাসন মেলার অনুমতি দেয়নি।
মেলা বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া মো. রুবেল হোসেন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় মেলা বন্ধের পক্ষে আমি ছিলাম। এটা সত্য। কিন্তু মেলা নিয়ে আমার কোনো স্বার্থ বা আগ্রহ ছিল, এটি সঠিক নয়৷ এবং বনিবনা না হওয়া এ কথাও সঠিক নয়৷’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেলার দিন বুধবার পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল। আগামী ২১ মে কটিয়াদী উপজেলা নির্বাচন থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক বিবেচনা করে বৈশাখী মেলার অনুমতি দেয়নি।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরে দেবেন কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবস্থার উন্নতি হলে পরে অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা হতে পারে৷