বাবার স্বপ্নপূরণে দেশে ফিরে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী
![প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌজন্য: ফোকাস বাংলা](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/May/17/1715943778539.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌজন্য: ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল এ দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত করা। বাবার সেই স্বপ্নপূরণের জন্যই এদেশে ফিরে এসেছি।
তিনি বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগুতে পারে না। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে। জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।
শুক্রবার (১৭ মে) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা শুভেচ্ছা জানাতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে বিদেশ যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে, আমাকে এতবড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমি কখনো এটা ভাবতে পারিনি।
ছোটবোন শেখ রেহানার বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু যখন তার বাচ্চা হবে, মিসেস গান্ধী আবার ক্ষমতায় এলেন, তিনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন, আমি গেলাম। এরপর আবার দিল্লিতে ফেরত এলাম।
তখন আমাকে লন্ডন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টেলিফোন করে বললেন আপনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম আমি তো আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাই না, আমাকে কেন করবে? আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছে।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সেই দিনে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখ লাখ জনতা তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়।
শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরেন তখন যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার হত্যাকারীরা ক্ষমতায় ছিল। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার পাশে ছিল বাংলাদেশের জনগণ। আমি জানতাম আমাকেও আমার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। কিন্তু দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আস্থা ছিল।
সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমি আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলবো- আমার সব শক্তি ও সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় এত বড় সংগঠন চালানোর অভিজ্ঞতা আমার ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এখন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী, বৃহত্তম এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল। দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। তারা বরং শত শত সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন ও হত্যা করেছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করেনি। ভবিষ্যৎ কী সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ যেন আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
নেতাদের আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, এটাই মনে রাখবেন একটা দল করি শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম। এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।
সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকার পেয়েছিল, তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছিল ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার ও জয় বাংলা স্লোগানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু জয় বাংলা স্লোগান আবার ফিরে এসেছে এবং জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে যেমন স্থান করে নিয়েছে। তেমনি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণভবনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।