চট্টগ্রামের পশুর হাট, শেষ মুহূর্তে জমজমাট



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

আর মাত্র একদিন পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির এই ঈদকে ঘিরে শেষ মুহূ্র্তে জমে উঠেছে চট্টগ্রাম নগরীর স্থায়ী-অস্থায়ী সবকটি পশুর হাট। আরও দশদিন আগে থেকে বাজারগুলোতে আশে পাশের উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু-ছাগল আনতে থাকে ব্যাপারীরা। শুরুর ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকলেও শেষ সময়ের এসে বেচা-কেনা জমে চমছে।

শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে নগরীর ষোলশহর এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী গরু বাজার বিবিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে কিছুক্ষণ পর পর বাজারের সামনে এসে থামছে গরু ভর্তি ট্রাক। বাজারের পাশে নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে একের পর এক নামিয়ে গরুগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজানো হচ্ছে। একই সাথে ক্রেতার পাশাপাশি ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরাও। এদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ। বন্ধু বা স্বজনদের নিয়ে গরু কেনার পাশাপাশি অনেকে দেখতেও আসছেন।

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

বাজারের ভেতরে ঢুকতেই দেখা হয় হামজারবাগ থেকে আসা কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি পাঁচ বছর বসয়ী ছেলে ইয়াসিরকে কোলে চড়িয়ে গরু দেখাতে নিয়ে আসছেন, কোলে থাকা ছেলেকে নিয়ে তুলছেন গরুর সাঙ্গে সেলফি। কামাল বলেন, 'ছেলে গরু দেখতে চাচ্ছে তাই বাজারে নিয়ে আসছি। গরু আরও পরে কিনব।'

গোপালপুর থেকে ১০টি গরু নিয়ে এই হাটে আসেন ব্যপারী জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, দুদিন আগে গরু নিয়ে এসেছি। এখনো একটিও বিক্রি করতে পারিনি। যে দাম চাচ্ছি তা পাচ্ছি না। এবার বাজার তেমন ভাল না। শেষে বিক্রি না হলে লস দিয়ে চলে যাব।

এই পশুরহাটে 'রাজ, জসিম ,কৃষ্ঞমালাসহ বিভিন্ন নামের ১৫ টি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন মাগুরার কবির বিশ্বাস।

তিনি বলেন, 'গরু বড় করতে যে পরিমাণ টাকার খাবার খাওয়ানো হয়েছে, একটু বেশি দামে যদি বিক্রি করা না গেলে পোষাবে না। আশা করছি আমরা ভাল দাম পাব। গরু বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আরাম আয়েসে খাব। তারপর মনকে বুঝাতে পারব যে, গরুগুলো যে এত কষ্ট করে বড় করেছি তার সুফল পেয়েছি। তবে আজকের যে হাট সেটি দেখে বুঝা যাবে দাম কেমন পাব।'

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

একইভাবে নিজের খামারে মোটা-তাজা করা ১৯টি গরু নিয়ে আসেন চাপাইনবাবগঞ্জ রাহুল বলেন, ‘এবারের বাজারে তেমন দাম উঠছে না। প্রায় ৭শ কিলোমিটার দূর থেকে একটু বেশি লাভের আশায় চট্টগ্রামের মাটিতে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে গরু নিয়ে এসেছি। নিজেরা থাকছি-খাচ্ছি, জায়গার ভাড়া দিছি। এবারও আমাদের লোকসান হবে মনে হচ্ছে।’

বেপারিরা জানান, এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা, পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা, ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চার থেকে ছয় লাখ টাকায় পাওয়া যাবে।

বড় ভাইয়ের সঙ্গে গরু কিনতে আসা ইব্রাহিম মুনতাছিল বলেন, ‘প্রথম ভাইয়ার সাথে গরু কিনতে এসেছি। বাজারের গরু দেখে ভাল লাগছে। তবে দাম তো অনেক বেশি।’

সেলিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গরু কিনতে এসে দেখি অনেক দাম। মাঝারি সাইজের একটি গরু দাম চাচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। ক্রেতা তো আসছে বাজারে। কিন্তু দরদামে হচ্ছে না। আগের বছরগুলো থেকে এবার দাম দ্বিগুণ।’

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, এবার সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত প্রাণীর হাট রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে স্থায়ী তিনটি। সাগরিকা গরু হাট, বিবিরহাট গরু হাট এবং পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। অস্থায়ী ৭টি হাটের মধ্যে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কর্ণফুলী হাট (নুরনগর হাউজিং এস্টেট হাট), ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব হোসেন আহমদপাড়া সাইলো রোডের পাশের টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডে মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে বড়পোল সংলগ্ন মহেশ খালের দুই পাড়ের খালি জায়গা, ৩৯ নম্বর আউটার রিং রোডের সিডিএ বালুর মাঠ এবং ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম হালিশহর মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পার্শের খালি জায়গা।

এদিকে, চসিকের অনুমোদিত দশটি প্রাণীর হাটের মধ্যে নয়টির ইজারাদার পাওয়া গেলেও তিন দফা দরপত্র আহ্বান করে ইজারাদার পাওয়া যায়নি বিবিরহাট হাটের। এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ হাটটি নানা অনিয়মের কারণে জৌলুস হারিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এবার ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি প্রাণী কোরবানি দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টি গরু, ৭১ হাজার ৩৬৫টি মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩টি ছাগল, ৫৮ হাজার ৬৯২টি ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণী ৮৮টি। এর বিপরীতে কোরবানির জন্য মজুত রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি প্রাণী।’

   

‘বিদেশি পানি’র বন্যা



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
‘বিদেশি পানি’র বন্যা

‘বিদেশি পানি’র বন্যা

  • Font increase
  • Font Decrease

কানাইঘাটের তালবাড়ি এলাকার ‘চড়া ভাই’ বৃষ্টি ভেঙে পাড়ি দিয়েছেন সুরমা নদী। ‘চড়া ভাই’ মূল নাম নয় তার; তবে এ নামে এলাকায় বেশ পরিচিত। মূল নাম আড়ালে পড়ে গেছে এ নামের আড়ালে, অথবা বলা যায়, কখনো জিগ্যেস করা হয়নি অন্য কোন নামের। ‘চড়া’ বলতে কঠিন মেজাজ কিংবা অতিরিক্ত কিছু নয়, তিনি নরম স্বভাবের, সজ্জন; এবং এ নাম এসেছে নাকি তার চড়ুই পাখি থেকে। এমনটা হেসে-হেসে তিনিও বলেন। লোকজন মায়া করে ‘চড়া ভাই’ নামে ডাকে, দাবি করেন তিনি।

সুরমায় বেশ স্রোত। এমন স্রোতে নৌকার মাঝি কায়দা করে নৌকা চালান। পাড়ের কাছ দিয়ে উজানের দিকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এরপর নদী অতিক্রম করতে ভাসিয়ে দেন স্রোতে। স্রোতের টান আর ইঞ্জিনের শক্তিতে নৌকা এগোয়। এরপর নির্ধারিত ঘাটের কাছাকাছি এসে তীরে ভেড়ান। বৈঠার নৌকা নয় এটা, ইঞ্জিনচালিত বলে এই স্রোতে এখনো মানুষ নদী পাড়ি দিতে পারছে।

আলীনগর ঘাটের নদীর এই পাড়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা, অন্য পাড়ে কানাইঘাট। বিয়ানীবাজারের পাড়ের নদীর তীর তুলনামূলক উঁচু। উপচে পানি ঢুকেনি এখনো। তবে কানাইঘাট পাড়ের তীরের অনেক জায়গায় পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। রাস্তাঘাট ডুবিয়েছে, কারো কারো ঘরেও ওঠেছে পানি; এছাড়া বেশিরভাগই আছেন ঝুঁকিতে। মানুষই কেবল নয়, গবাদি পশু, গোলার ধান সব আছে ঝুঁকিতে। গত ক'বছর এমনটা হয়ে পড়েছে নিয়মিত দৃশ্য, যেন নিয়তির লিখন।

‘চড়া ভাই’র ভাষায় এটা ‘বিদেশি পানি’। সত্তরোর্ধ তিনি। অনেক বন্যা দেখেছেন জীবনে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর বন্যা তার কাছে যেন অন্যরকম। দুই বছর আগে তার ঘরে পানি ওঠেছিল। এবার এখনই তেমনটা না হলেও লক্ষণ সুবিধার না বলছেন তিনি। বললেন, বিদেশি পানি আর বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবারের অবস্থা আগের চাইতে খারাপ নাকি হবে! আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেঘ (বৃষ্টি) কমার লক্ষণ নাই। বৃষ্টি সিলেটের নিয়মিত দৃশ্য এখন। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ কেবল বৃষ্টি নয়, যেন কলসি উপচে পানি পড়া!

‘চড়া ভাই’ নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত আসেন এ পাড়ে, কাজের সন্ধানে। ছয় সদস্যের সংসার তার। একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। এই বয়সে দিনমজুরের কাজ করেন। হাসিমাখা মুখ আর মজার ছলে কথা বলেন বলে প্রয়োজন ছাড়াই অনেকেই তাকে দিয়ে কাজ করায়। আধাবেলা কাজ করে বেশিরভাগ সময় মজুরির অর্ধেক নিয়ে তিনি চলেও যান। তার পাড়ের লোকজনের কাছে তার কাজ নাই বলে এখানে আসেন। বন্যা-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এবার এসেছেন তিনি কোরবানির মাংসের সন্ধানে। ঈদের দিন কিছু সংগ্রহ করেছেন, ঈদের পরের দিনও কিছু সংগ্রহ করবেন। মায়া করে কেউ কেউ তার জন্যে ফ্রিজে রেখে দেয়, বলেন তিনি।

সেলিম উদ্দিন, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন। ত্রিশের কোটার যুবক। তার ঘরের বেড়ার কাছাকাছি পানি চলে গেছে। আরেকটু বাড়লে ঘরে ঢুকে পড়বে। পরিবার নিয়ে আছেন ঝুঁকিতে। বললেন, বন্যার সময় এক কষ্ট, আর বন্যার পরে আরেক কষ্ট। বেড়া ধ্বসে পড়ে যায়। তার এলাকা এরইমধ্যে প্লাবিত। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। নদীর পাড়ের কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি। আছে স্রোতও। সন্তানদের নিয়ে ঝুঁকি আর ভোগান্তির অন্ত নেই। সঙ্গে আছে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা। ত্রাণ কি পৌঁছেছে কিছু, এমন প্রশ্নে সেলিম উদ্দিনের ভাষ্য—অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় বেঁচে থাকা যায় না। দুই-তিন কেজি চাউল আর কয়েক মুঠো ডাইল দিয়ে কি দিন যায়; একদিন দিলে বাকিটা সময় নাই, সব নাকি লোকদেখানো!

উল্লিখিত দুইজন, সামগ্রিক পরিস্থিতির খণ্ড চিত্র। এরা নদী পাড়ি দিয়ে এ পাড়ে এসেছে বলে তাদের মুখ থেকে জানা গেল। এরবাইরে বৃহত্তর একটা শ্রেণির মানুষ আছে সেখানে যারা না পারছে বের হতে, না পারছে কিছু করে নিয়ে যেতে। অনেকেই আছে বিবিধ সামাজিক সীমাবদ্ধতায় কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। নদীর পাড় ঘেঁষে তালবাড়ি-রাজাগঞ্জের বাসিন্দাদের অনেকেই গরিব। অনেক পরিবারে আছে প্রবাসী, তারা অবশ্য সচ্ছল। তারাও প্লাবিত, তবে অন্যদের মতো আর্থিক দুর্দশায় নয় এমন।

গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে যে বন্যা হয়েছিল সিলেটে, সে সময়ও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জের মতো কানাইঘাটও প্লাবিত হয়েছিল। বানের পানি নামতে না নামতেই এবার ফের বন্যা এসেছে। আষাঢ়ের আগ থেকে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে, সবচেয়ে বড় কথা উজানে, তাতে এবারের এ বন্যায় দীর্ঘ হচ্ছে। উজান বলতে আমরা বুঝে থাকি ভারতকে। ভারতের পানি বরাক হয়ে সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহের এই সময়ে প্লাবনে ঢাকা পড়ে সিলেট বিভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এ পানিকে গণমাধ্যম বলে পাহাড়ি ঢল অথবা উজানের পানি, স্থানীয়দের কাছে এটা ভারতের পানি বা বিদেশি পানি। এজন্যে সিলেটে যত বৃষ্টিই হোক এটাকে স্থানীয়রা বন্যা বলার চাইতে ‘মেঘের পানি’ বলতেই আগ্রহী। চড়া ভাইদের কাছেও এবারের এই পানিও তাই বিদেশি পানি।

সিলেট বিভাগের অনেক উপজেলা এরইমধ্যে বন্যায় প্লাবিত। সিলেট নগরও প্লাবিত, জলাবদ্ধতায়। অতিবৃষ্টির প্রভাবে নগরের বেশিরভাগ এলাকা ঈদের দিনে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। সঙ্গে আছে সুরমার পানি বিভিন্ন ছড়া বা খাল দিয়ে নগরে প্রবেশ। কেবল সিলেট শহরই নয়, সুনামগঞ্জ শহরেও পানি প্রবেশ করেছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভারতের পানিতে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, চলতি, চেলা, খাসিয়ামারা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এই ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীর পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটের মধ্য দিয়ে যে নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে তার অন্তত তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি এরইমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে মঙ্গলবার সকালের খবর। এছাড়া যেভাবে প্রতিবার ভারি বৃষ্টিতে নগর যেভাবে ডুবছে তাতে বৃষ্টি সিলেটে ভয়ের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

সিলেট নগর কেন ডুবছে বারবার—এনিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। দুই বছর আগের বন্যার পর বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সুরমা নদী ভরাট হওয়ার কারণে বন্যা। বলছিলেন, পানিপ্রবাহের বাধা পাওয়ার কথা। এরপর কয়েকটি জায়গায় নদী খনন কাজের শুরু হয়েছিল, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি দুই বছরেও। নগরে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের দীর্ঘসূত্রিতা এবং পানিপ্রবাহের বাধা থাকার কথা। কারণগুলো কারণ হিসেবেই থেকেছে, উদ্যোগ নেয়নি কেউ। ফলে সিলেটে বৃষ্টি এখন অভিশাপ হয়ে ওঠেছে।

বিদেশি পানির কারণে বন্যায় হয়তো আমাদের কোন হাত নেই, কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কাজে দীর্ঘসূত্রিতা এবং নদী ভরাটে আমাদের হাত রয়েছে অবশ্যই। হাত রয়েছে উন্নয়নের নামে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টিতেও। এসব আমাদের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ঠিক ততটা পাচ্ছে না।

সিলেটে বন্যা এখন তাই স্বাভাবিক ঘটনা। বছরে কয় বার ডুবল সিলেট, এটা এখন তেমনই বুঝি এক সংখ্যার হিসাব!

;

সিলেট সীমান্তবর্তী আসামে বন্যায় ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সিলেট সীমান্তবর্তী আসামে বন্যায় ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র

সিলেট সীমান্তবর্তী আসামে বন্যায় ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রবল বৃষ্টিতে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সীমান্তবর্তী ভারতের আসাম রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র জলের তোড়ে ফুঁসছে। আসামের বন্যার ফলে সিলেটে পাহাড়ি ঢল বেড়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই আসামের রাজধানী গুয়াহাটির অনিলনগর, চাঁদমারির মতো জায়গা জলমগ্ন। বন্যায় রাজ্যের ৩০৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসমের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করিমগঞ্জ জেলা।

উল্লেখ্য, করিমগঞ্জ সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার সংলগ্ন। ফলে বন্যার পানি এদিকেও বেড়ে যেতে পারে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রাজ্যের ১০০৫.৭ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় আসমের সরকার ১১টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। ৩,১৬৮ জন মানুষ এই শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। আরো ত্রাণ ও উদ্ধার কার্য চলছে।

;

কবি অসীম সাহার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  

প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় উল্লেখ করেন, অসীম সাহার মৃত্যুতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অঙ্গণে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মননা ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন অসীম সাহা । এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

;

চিড়িয়াখানা-বোটানিক্যাল গার্ডেনে দর্শনার্থীর ঢল



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটিতে রয়েছে দেশবাসী।
সাধারণত ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও ঈদের দিন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছিল রাজধানী মিরপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে। ছিল না ঈদকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীর ভিড়। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিনের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ যেনো প্রাণ ফিরেছে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। ঢল নেমেছে সাধারণ দর্শনার্থীদের।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানী মিরপুরে অবস্থিত চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।


সরেজমিনে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের উপস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে এই দুটি স্থান। হাজারো দর্শণার্থীর উপস্থিতিতে সরগম হয়ে উঠেছে চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন চত্বর। ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। একই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে এই স্থান কেন্দ্রিক ফুটপাত ব্যবসায়ীদেরও।

ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে, পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পিতা মাতা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন পশু সম্পর্কে জানাচ্ছেন। এছাড়া কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউবা আবার বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন।

মিরপুর ১৪ পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো.তারেক। তিনি বলেন, সব সময় ইচ্ছা করলেই কাজের চাপে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা হয় না। ঈদের ছুটিতে ঢাকাতে ফ্রি সময় পার করছি তাই ভাবলাম ঘুরে আসি। এই জন্য পরিবার নিয়ে ঘুরতে চলে আসছি।


আশুলিয়ার জিরাবো থেকে ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, সাভারে বাসা হওয়ায় সচরাচর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা হয় না। এখানে ঘুরতে আসলে অনেক পশুপাখি সম্পর্কে বাচ্চাদের চেনানো যায়। তাই ঈদের ছুটিতে বাচ্চাদেরকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।

নারায়নগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসেছেন মো.মাসুদ। তিনি বলেন, সবাইকে সাথে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এসে ভালোই লাগছে। তবে একটা বিষয় খারাপ লাগলো। আমাদের দেশে যেখানে তিন বছরের শিশুকে বিমানে টিকিটের প্রয়োজন হয় না, সেখানে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসে তিন বছরের শিশুর জন্যেও ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়টা একটু সুনজর দেন তাহলে সবার জন্য উপকার হয়।

পিয়াসা আইস গোল্লা বিক্রেতা সাব্বির বলেন, গতকাল কিছুই বিক্রি করতে পারি নাই। কয়েকশো টাকার বিক্রি করে চলে গিয়েছিলাম। লোক ছিল না গতকাল। আজ মোটামুটি ভালই বিক্রি হয়েছে।


শিশুদের ক্যান্ডি (পুতুল) বিক্রেতা রোমিও বলেন, বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি ভালো। তবে যেমনটা আশা করেছিলাম তেমনটা বিক্রি নেই।

দর্শনার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা এবং সার্বিক বিষয়ে জানতে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড.মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদারের কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তার কার্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মচারী বলেন, স্যার রাউন্ডে (পরিদর্শনে) আছেন।

;