‘বিদেশি পানি’র বন্যা



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
‘বিদেশি পানি’র বন্যা

‘বিদেশি পানি’র বন্যা

  • Font increase
  • Font Decrease

কানাইঘাটের তালবাড়ি এলাকার ‘চড়া ভাই’ বৃষ্টি ভেঙে পাড়ি দিয়েছেন সুরমা নদী। ‘চড়া ভাই’ মূল নাম নয় তার; তবে এ নামে এলাকায় বেশ পরিচিত। মূল নাম আড়ালে পড়ে গেছে এ নামের আড়ালে, অথবা বলা যায়, কখনো জিগ্যেস করা হয়নি অন্য কোন নামের। ‘চড়া’ বলতে কঠিন মেজাজ কিংবা অতিরিক্ত কিছু নয়, তিনি নরম স্বভাবের, সজ্জন; এবং এ নাম এসেছে নাকি তার চড়ুই পাখি থেকে। এমনটা হেসে-হেসে তিনিও বলেন। লোকজন মায়া করে ‘চড়া ভাই’ নামে ডাকে, দাবি করেন তিনি।

সুরমায় বেশ স্রোত। এমন স্রোতে নৌকার মাঝি কায়দা করে নৌকা চালান। পাড়ের কাছ দিয়ে উজানের দিকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এরপর নদী অতিক্রম করতে ভাসিয়ে দেন স্রোতে। স্রোতের টান আর ইঞ্জিনের শক্তিতে নৌকা এগোয়। এরপর নির্ধারিত ঘাটের কাছাকাছি এসে তীরে ভেড়ান। বৈঠার নৌকা নয় এটা, ইঞ্জিনচালিত বলে এই স্রোতে এখনো মানুষ নদী পাড়ি দিতে পারছে।

আলীনগর ঘাটের নদীর এই পাড়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা, অন্য পাড়ে কানাইঘাট। বিয়ানীবাজারের পাড়ের নদীর তীর তুলনামূলক উঁচু। উপচে পানি ঢুকেনি এখনো। তবে কানাইঘাট পাড়ের তীরের অনেক জায়গায় পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। রাস্তাঘাট ডুবিয়েছে, কারো কারো ঘরেও ওঠেছে পানি; এছাড়া বেশিরভাগই আছেন ঝুঁকিতে। মানুষই কেবল নয়, গবাদি পশু, গোলার ধান সব আছে ঝুঁকিতে। গত ক'বছর এমনটা হয়ে পড়েছে নিয়মিত দৃশ্য, যেন নিয়তির লিখন।

‘চড়া ভাই’র ভাষায় এটা ‘বিদেশি পানি’। সত্তরোর্ধ তিনি। অনেক বন্যা দেখেছেন জীবনে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর বন্যা তার কাছে যেন অন্যরকম। দুই বছর আগে তার ঘরে পানি ওঠেছিল। এবার এখনই তেমনটা না হলেও লক্ষণ সুবিধার না বলছেন তিনি। বললেন, বিদেশি পানি আর বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবারের অবস্থা আগের চাইতে খারাপ নাকি হবে! আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেঘ (বৃষ্টি) কমার লক্ষণ নাই। বৃষ্টি সিলেটের নিয়মিত দৃশ্য এখন। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ কেবল বৃষ্টি নয়, যেন কলসি উপচে পানি পড়া!

‘চড়া ভাই’ নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত আসেন এ পাড়ে, কাজের সন্ধানে। ছয় সদস্যের সংসার তার। একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। এই বয়সে দিনমজুরের কাজ করেন। হাসিমাখা মুখ আর মজার ছলে কথা বলেন বলে প্রয়োজন ছাড়াই অনেকেই তাকে দিয়ে কাজ করায়। আধাবেলা কাজ করে বেশিরভাগ সময় মজুরির অর্ধেক নিয়ে তিনি চলেও যান। তার পাড়ের লোকজনের কাছে তার কাজ নাই বলে এখানে আসেন। বন্যা-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এবার এসেছেন তিনি কোরবানির মাংসের সন্ধানে। ঈদের দিন কিছু সংগ্রহ করেছেন, ঈদের পরের দিনও কিছু সংগ্রহ করবেন। মায়া করে কেউ কেউ তার জন্যে ফ্রিজে রেখে দেয়, বলেন তিনি।

সেলিম উদ্দিন, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন। ত্রিশের কোটার যুবক। তার ঘরের বেড়ার কাছাকাছি পানি চলে গেছে। আরেকটু বাড়লে ঘরে ঢুকে পড়বে। পরিবার নিয়ে আছেন ঝুঁকিতে। বললেন, বন্যার সময় এক কষ্ট, আর বন্যার পরে আরেক কষ্ট। বেড়া ধ্বসে পড়ে যায়। তার এলাকা এরইমধ্যে প্লাবিত। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। নদীর পাড়ের কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি। আছে স্রোতও। সন্তানদের নিয়ে ঝুঁকি আর ভোগান্তির অন্ত নেই। সঙ্গে আছে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা। ত্রাণ কি পৌঁছেছে কিছু, এমন প্রশ্নে সেলিম উদ্দিনের ভাষ্য—অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় বেঁচে থাকা যায় না। দুই-তিন কেজি চাউল আর কয়েক মুঠো ডাইল দিয়ে কি দিন যায়; একদিন দিলে বাকিটা সময় নাই, সব নাকি লোকদেখানো!

উল্লিখিত দুইজন, সামগ্রিক পরিস্থিতির খণ্ড চিত্র। এরা নদী পাড়ি দিয়ে এ পাড়ে এসেছে বলে তাদের মুখ থেকে জানা গেল। এরবাইরে বৃহত্তর একটা শ্রেণির মানুষ আছে সেখানে যারা না পারছে বের হতে, না পারছে কিছু করে নিয়ে যেতে। অনেকেই আছে বিবিধ সামাজিক সীমাবদ্ধতায় কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। নদীর পাড় ঘেঁষে তালবাড়ি-রাজাগঞ্জের বাসিন্দাদের অনেকেই গরিব। অনেক পরিবারে আছে প্রবাসী, তারা অবশ্য সচ্ছল। তারাও প্লাবিত, তবে অন্যদের মতো আর্থিক দুর্দশায় নয় এমন।

গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে যে বন্যা হয়েছিল সিলেটে, সে সময়ও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জের মতো কানাইঘাটও প্লাবিত হয়েছিল। বানের পানি নামতে না নামতেই এবার ফের বন্যা এসেছে। আষাঢ়ের আগ থেকে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে, সবচেয়ে বড় কথা উজানে, তাতে এবারের এ বন্যায় দীর্ঘ হচ্ছে। উজান বলতে আমরা বুঝে থাকি ভারতকে। ভারতের পানি বরাক হয়ে সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহের এই সময়ে প্লাবনে ঢাকা পড়ে সিলেট বিভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এ পানিকে গণমাধ্যম বলে পাহাড়ি ঢল অথবা উজানের পানি, স্থানীয়দের কাছে এটা ভারতের পানি বা বিদেশি পানি। এজন্যে সিলেটে যত বৃষ্টিই হোক এটাকে স্থানীয়রা বন্যা বলার চাইতে ‘মেঘের পানি’ বলতেই আগ্রহী। চড়া ভাইদের কাছেও এবারের এই পানিও তাই বিদেশি পানি।

সিলেট বিভাগের অনেক উপজেলা এরইমধ্যে বন্যায় প্লাবিত। সিলেট নগরও প্লাবিত, জলাবদ্ধতায়। অতিবৃষ্টির প্রভাবে নগরের বেশিরভাগ এলাকা ঈদের দিনে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। সঙ্গে আছে সুরমার পানি বিভিন্ন ছড়া বা খাল দিয়ে নগরে প্রবেশ। কেবল সিলেট শহরই নয়, সুনামগঞ্জ শহরেও পানি প্রবেশ করেছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভারতের পানিতে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, চলতি, চেলা, খাসিয়ামারা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এই ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীর পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটের মধ্য দিয়ে যে নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে তার অন্তত তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি এরইমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে মঙ্গলবার সকালের খবর। এছাড়া যেভাবে প্রতিবার ভারি বৃষ্টিতে নগর যেভাবে ডুবছে তাতে বৃষ্টি সিলেটে ভয়ের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

সিলেট নগর কেন ডুবছে বারবার—এনিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। দুই বছর আগের বন্যার পর বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সুরমা নদী ভরাট হওয়ার কারণে বন্যা। বলছিলেন, পানিপ্রবাহের বাধা পাওয়ার কথা। এরপর কয়েকটি জায়গায় নদী খনন কাজের শুরু হয়েছিল, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি দুই বছরেও। নগরে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের দীর্ঘসূত্রিতা এবং পানিপ্রবাহের বাধা থাকার কথা। কারণগুলো কারণ হিসেবেই থেকেছে, উদ্যোগ নেয়নি কেউ। ফলে সিলেটে বৃষ্টি এখন অভিশাপ হয়ে ওঠেছে।

বিদেশি পানির কারণে বন্যায় হয়তো আমাদের কোন হাত নেই, কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কাজে দীর্ঘসূত্রিতা এবং নদী ভরাটে আমাদের হাত রয়েছে অবশ্যই। হাত রয়েছে উন্নয়নের নামে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টিতেও। এসব আমাদের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ঠিক ততটা পাচ্ছে না।

সিলেটে বন্যা এখন তাই স্বাভাবিক ঘটনা। বছরে কয় বার ডুবল সিলেট, এটা এখন তেমনই বুঝি এক সংখ্যার হিসাব!

   

মতিউরের স্বজনদের সম্পদের পাহাড়, দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে হতবাক গ্রামবাসী!



এস এল টি তুহিন,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,বরিশাল
মতিউরের গ্রামের দ্বিতল আলিশান বাড়ি

মতিউরের গ্রামের দ্বিতল আলিশান বাড়ি

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান সময়ে দেশের আলোচিত ঘটনা 'ছাগল কাণ্ড' ঘটনার মূল চরিত্রে আসীন হওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের জন্ম বরিশালের মুলাদী উপজেলায় বাহাদুরপুর গ্রামে। নিজ গ্রামের মানুষ তাকে চেনেন পিন্টু নামে।

পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলায় খালা বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করা মতিউর রহমান পিন্টুর সম্পদের পাহাড় এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে পুরো গ্রামজুড়েই চলছে সমালোচনার ঝড়। একজন স্কুল শিক্ষকের সন্তান হয়ে কীভাবে গড়েছেন এতো সম্পদের পাহাড় সেই প্রশ্নে হতবাক গ্রামবাসী।

নিজ গ্রাম মুলাদীতে তেমন সম্পদ নেই মতিউর রহমান পিন্টুর নামে। তবে স্বজনদের রয়েছে বাড়ি, গাড়িসহ অঢেল সম্পদের পাহাড়। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে মতিউর রহমান পিন্টুর হাত ধরে। স্থানীয়দের দাবি, মতিউর রহমান রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার পরপরই অর্থ-সম্পদে ফুলে ফেঁপে ওঠেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।

বুধবার (২৬ জুন) সরেজমিনে মুলাদীর কাজিরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপর গ্রামে দেখা যায়, মতিউর রহমানের গ্রামের বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল আলিশান বাড়িসহ রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নানান স্থাপনা। খালের ওপর নির্মিত পাকা সেতু পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন মাদ্রাসা ও মসজিদ। একপাশে তিনতলা মাদ্রাসা এবং অপরপাশে দ্বিতল মসজিদ। দুটি স্থাপনার মাঝেই রয়েছে বিশাল দৃষ্টিনন্দন গেট। সেই গেট পার হয়ে যেতে হয় মতিউর রহমান পিন্টুর বাড়িতে। তবে বুধবার বিকেলে সেই বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি কাউকে। বাড়ির কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা। ভেতরে লোক থাকলেও সাংবাদিক দেখেই লুকিয়ে পড়েন তারা।

মতিউর রহমান পিন্টুর বাড়ির দক্ষিণ দিকে রয়েছে রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ। তার পাশেই তিনতলা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যা ব্যবহার করা হচ্ছে কলেজ ভবন হিসেবে। এদিকে, পিন্টুর বাড়ির সামনে দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া খালের দুই পাড় বাঁধানো হয়েছে সিমেন্টের ব্লক দিয়ে। খালের দুই পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক দুটি পাকা রাস্তা। খালের দুই পাড়ের প্রতিটি বাড়ির সামনে বাঁধানো হয়েছে অসংখ্য ভানায় খাটলা। খালের ওপর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি সেতু।

স্থানীয়দের দাবি, নিজের এবং স্বজনদের বাড়িঘর রক্ষায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান পিন্টুর প্রচেষ্টায়।

মতিউর রহমান পিন্টুর মেঝ ভাই কাইয়ুম শের হাওলাদার। যিনি একসময় শিক্ষকতা করলেও বর্তমানে ঢাকার বড় শিল্পপতি। মুলাদী পৌর এলাকায় থানার পাশেই রয়েছে তার দোতলা বাড়ি। গ্রামে আসলে ওই বাড়িতেই থাকেন কাইয়ুম হাওলাদার।

বরিশাল মুলাদীর প্যাদারহাট বাজারে পিন্টুর ছোটভাই নুরুল হুদার রয়েছে বহুতল ভবন। সেই ভবনেই পিন্টুর মায়ের নামে চালু করা হয়েছিল একটি ক্লিনিক। স্থানীয়দের দাবি, ক্লিনিকটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে গ্রামে অনেক জমিও রয়েছে পরিবারের সদস্যদের। এসব সম্পত্তি মতিউরের পরিবার করলেও এর প্রকৃতি মালিক কে তা জানা নেই কারোর।

স্থানীয়দের দাবি, সকল প্রতিষ্ঠানই গড়ে তোলা হয়েছে পাওলাদার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। এমনকি সেই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই পরিচালনা হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এ ফাউন্ডেশনে কারা জড়িত এবং অর্থের উৎস কী জানা নেই গ্রামবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুস ছত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'মতিউর রহমান নামেই পরিচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য পিন্টুর বাবা হাকিম হাওলাদার একসময় ঢাকার টঙ্গীতে একটি কারখানায় চাকরি করতেন। সেখান থেকে এসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। অবসরে গিয়ে কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর দায়িত্ব পালন করেন টানা ৯ বছর। গ্রামে যে বাড়িটি নির্মাণ করেছে সেটা হাকিম হাওলাদারের নির্মাণ করা, দাবি আব্দুস ছত্তারের। তবে মতিউর ও তার পরিবার কীভাবে এতো অর্থ সম্পদের মালিক হলেন তা জানা নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ২০০৩ সালে কাজিরচর ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন মতিউরের বাবা হাকিম হাওলাদার। জীবদ্দশায় তিনি কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। মুলাদী উপজেলা ১৪ দলের বর্তমান সমন্বয়ক ইউসুফ আলীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবার ওয়ান-ইলেভেনের সময় চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হলেও নানা উপায়ে আরও প্রায় চার বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন হাকিম।

অপরদিকে, স্কুলজীবন থেকেই মেধাবী ছিলেন মতিউর। তবে পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মুলাদীর পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলায় খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পরিবারে ৩ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে বড় মতিউর রহমান পিন্টু বিএনপি শাসনামলে বিএনপি নেতা মোশারেফ হোসেন মঙ্গুর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।

রাজস্ব ক্যাডারে যাওয়ার আগে ১১তম বিসিএসে ট্রেড ক্যাডারে চাকরি হয়েছিল তার। ট্রেড ক্যাডার বিলুপ্ত হলে পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ পান ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, মতিউর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত হাকিম হাওলাদারের পরিবারে তেমন সচ্ছলতা ছিল না। গ্রামে জায়গা-জমির পরিমাণও খুব বেশি ছিল না। তবে ৯১-পরবর্তী বিএনপির শাসনামলে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের উত্থানের পর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে এই পরিবারের অর্থবিত্তের চিত্র।

তারা আরও জানান, মতিউর রহমানের মেজভাই কাইয়ুম হাওলাদারের শুরু শিক্ষকতা দিয়ে। ভাই রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার পর সম্পদের পাহার গড়ার মিশনে নামেন তিনি। রাজধানী ঢাকার টঙ্গীতে গড়ে তোলেন ট্রাভেল ব্যাগ তৈরির কারখানা। ছাগল কাণ্ডের আগে অর্থাৎ ঈদের একমাস আগেও সোনালী ব্যাংক থেকে বড়ভাই মতিউর রহমানের প্রভাবে তিনশত কোটি টাকার লোন নেন কাইয়ুম হাওলাদার। বাবা বিএনপি নেতা হলেও সম্প্রতি মুলাদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজের নাম লেখান কাইয়ুম। অর্থবিত্তের প্রভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন আধিপত্য। বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে প্রচুর টাকা খরচ করেছিলেন মতিউর। কারণ ২০০৩ সালে মতিউর ছাড়া তখন অন্য ভাইয়েরা স্বাবলম্বী ছিলেন না।

এদিকে, মতিউর ঢাকার বিত্তশালী হওয়ার বিষয়টি জানলেও তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানা ছিল না এলাকাবাসীর। মতিউরের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী মাসুম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মতিউর রহমানের পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়িতে তাদের খুব একটা যাতায়াত নেই। গ্রামের বাড়িটি দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকার রয়েছে। তার বাড়িও খুলনায়।

তিনি জানান, ২০১৮ সালে মতিউর রহমানের বাবা আবদুল হাকিম হাওলাদার মৃত্যুবরণ করেন। তখন মতিউর রহমান বাড়িতে এসেছিলেন। পরের বছর মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বাড়িতে আসেন। বাড়িতে তার ছোট ভাই নুরুল হুদা ও মেজ ভাই কাইয়ুম হাওলাদার মাঝেমধ্যে আসেন। তিনি জানান, নুরুল হুদা ঈদের এক দিন আগে এসে কোরবানি দিয়েছেন। পরে আবার ঢাকায় ফিরে গেছেন।

বাহাদুরপুর রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, 'এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমান। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়েছে। এখানের বর্তমান সভাপতি মতিউর রহমান। তবে আমি যোগদান করেছি প্রায় ৮ মাস। এর মধ্যে একবারের জন্যও গ্রামে আসেননি তিনি। বিদ্যালয় পরিচালনার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমান ঘটনার পর থেকে তার সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাহাদুরপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় খাল ভরাট করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষক এবং জনপ্রতিনিধিরা বিরোধিতা করলেও সুফল পাননি তারা। মতিউর রহমানের প্রভাবের কাছে হার মানতে হয় তাদের।

এ প্রসঙ্গে মুলাদীর কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি গড়ার সময় এলাকার কৃষকেরা প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। জোয়ার-ভাটার খাল আটকে দেওয়ায় শুকনো মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচ দিতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।

;

আওয়ামী লীগ আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিবে আজ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: আওয়ামী লীগ

ছবি: আওয়ামী লীগ

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ পঞ্জিকা বছর ২০২৩-এর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)। এজন্য সকাল ১১ টায় নির্বাচন কমিশন অফিসে যাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। 

বুধবার (২৬ জুন) আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। 

তিনি জানান, আগামীকাল ২৭ জুন, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন অফিসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পঞ্জিকা বছর ২০২৩-এর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা প্রদান করবে।



;

ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, সিলেটে অপেক্ষায় যাত্রীরা 



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
কালনী এক্সপ্রেস ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো আটকা পড়েছে

কালনী এক্সপ্রেস ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো আটকা পড়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ২ বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীরা আটকা পড়েছেন।

বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা পৌণে সাতটার দিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর এলাকায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দুটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো আটকা পড়েছে। 

এদিকে, রাত ১০টার দিকে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষা করছেন। অনেকে ট্রেন সঠিক সময়ে না আসায় বিকল পথ হিসেবে বাস ও মাইক্রোবাসে যাত্রা শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ বসে ট্রেনের অপেক্ষা করছেন।

ট্রেনের অপেক্ষমান যাত্রী মোহাম্মদ খোকন বলেন, আখাউড়া যাওয়ার জন্য এসেছি। রাত ১০টায় ট্রেনে যাত্রা শুরু কথা থাকলেও ট্রেন এখনো আসেনি। কর্তৃপক্ষ বলছে অপেক্ষা করার জন্য। তাই এখানে বসে আছি।

কুলাউড়া যাওয়ার জন্য একইভাবে অপেক্ষা করছিলেন আনহার মিয়া। তিনি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কখন ট্রেন আসবে আর কখন বাড়ি যাব জানি না।

সালেহ আহমেদ নামে একজন বলেন, চট্রগ্রাম যেতে ট্রেনের অপেক্ষায় আছি। ট্রেন আসতে দেরি হবে। টিকিট কেটে ফেলেছি। এখন আর কি করবো অপেক্ষা করি দেখি কখন ট্রেন আসে।

যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, সিলেট রেল স্টেশন থেকে কুলাউড়াগামী বাস ও মাইক্রোবাসে ৫০-১০০ টাকা বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। চালকদের দাবি গাড়ি কম থাকায় তারা ৫০-১০০ টাকা ভাড়া বেশি ভাড়া নিচ্ছেন।

সিলেট রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ৬টি বগি মোগলাবাজার রেলস্টেশন নিয়ে আসা হয়েছে। বাকিগুলো মাইজগাঁও রেলস্টেশনে নিয়ে রাখার কাজ চলছে। উদ্ধার কাজে আনুমানিক আরও ১-২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

এই রিপোর্ট রাত পৌণে ১১টায় লেখা পর্যন্ত ট্রেনের লাইন স্বাভাবিক হয়নি। উদ্ধার কাজ চলছে।

;

বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া
বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

বগুড়ায় ট্রাকের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন।

বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকার জেকে কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের আকরাম হোসেনের ছেলে সাদেকুল ইসলাম (১৯) ও একই এলাকার নবাব আলীর ছেলে মোকাদ্দেস (১৮) ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাদেকুল ও মোকাদ্দেস মোটরসাইকেল নিয়ে বগুড়া থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। জেকে কলেজ গেটের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে চালক ও আরোহী রাস্তার ওপর পরে যায়। এ সময় মোকাদ্দেস ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সাদেকুলকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, নিহতদের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

;