রোহিঙ্গাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

  • আবদু রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আনন্দ দেওয়ার মতো কোনো ভালো সংবাদ নেই। সেইসঙ্গে রাখাইন রাজ্যের গৃহযুদ্ধে নতুন কেউ বাস্তুচ্যুত হলে তাদের জায়গা দিতেও প্রস্তুত নয় বাংলাদেশ।
প্রায় সাত বছর হতে যাওয়া রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এমনই মন্তব্য বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গারাও অন্ধকার দেখছেন, নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে বাড়বে মানবপাচারসহ নানান ভয়াবহ অপরাধ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাশেই দীর্ঘতম আশ্রয় শিবির। দেখলেই মনে হবে, এ যেন নীল সাগরের কূল ঘেঁষে লাখো মানুষের আরেক বেদনার সাগর! উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে বাস করা ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হওয়ার সাত বছর হতে চললো। এই সময়কালে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নানান কার্যক্রম চললেও ফিরে যেতে পারেননি তারা।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশন বলছে, প্রত্যাবাসন নিয়ে শুধু আশা করা ছাড়া আনন্দ দেওয়ার মতো ভালো কোনো সংবাদ তাদের হাতে নেই।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের তত্ত্বাবধান, ক্যাম্পগুলোর ম্যানেজমেন্ট, ন্যূনতম মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা এবং তাদের দেশে প্রত্যাবাসনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা মিয়ানমারের কাছ থেকে যে ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার কথা বলে আশা করেছিলাম, দুঃখজনকভাবে সে ধরনের কোনো সহযোগিতা ২০১৭/১৮ সালের পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে পাইনি।

যুদ্ধে যুদ্ধে জীবন কাটে রোহিঙ্গাদের, তারপরেও ভবিষ্যত অন্ধকার যেন তাদের, ছবি- সংগৃহীত

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও সাত বছরেও তারা যাচাই-বাছাই করতে পারেনি। তারা তিনটি ভাগে রোহিঙ্গাদের ভাগ করেছে- একটি রেজিস্ট্রারে পাওয়া, আরেকটি পাওয়া যায়নি এবং আরেকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে। এরপর মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে পুরোটাই এখন থমকে গেছে।

রোহিঙ্গা নেতা ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের জানালেন, নিজেদের অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা। দোষারোপ করলেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।

মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, শুরুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের কাছ কেড়ে নেওয়া অধিকারসহ মিয়ানমারে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল কিন্তু এখন বাংলাদেশের ওপর বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তারা পিঠ দিয়ে ফেলেছে।

দুর্ভোগ যেন রোহিঙ্গাদের জীবনের পরতে পরতে! তেমনি বাংলাদেশের কাছেও বোঝা হয়ে উঠেছেন তারা, ছবি- সংগৃহীত

অন্যদিকে, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিও আমাদের কাছে নিরাপদ নয়, ঐতিহাসিকভাবে। আরাকান আর্মি বলেছে, রোহিঙ্গাদের তাদের পায়ের নিচে থাকতে হবে। এটা তো বেহিসাবি কথা! তাদের তো বলা উচিত ছিল, রোহিঙ্গারাও মিয়ানমারের একটি জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু তারা সেটি বলছে না।

এদিকে, নতুন করে মিয়ানমারের সংঘাতে ফের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বলছে, নতুন করে আর কাউকে (রোহিঙ্গা) জায়গা দিতে প্রস্তুত নয়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের বক্তব্য, আমরা শুনতে পাচ্ছি, রাখাইনে বসবাসরত ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা যুদ্ধের মধ্যে আছেন। তারা বাংলাদেশের দিকে চলে আসতে চান। এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে এখন বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে আছে। এমতাবস্থায় একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশ প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।

শরণার্থী বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. রাহমান নাসির উদ্দীন বলেন, রোহিঙ্গারা অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যত নিয়ে জীবনযাপন করছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ভেস্তে গেছে। যেমন, মিয়ানমারও তাদের (রোহিঙ্গা) ফেরত নেবে না। বাংলাদেশও তাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছুক হয়ে উঠেছে। একারণে এই সংকট যত দীর্ঘ হবে, মানবপাচারসহ নানান অপরাধ তত বাড়বে!

একদিকে, অনিশ্চিত ভবিষ্যত অন্যদিকে তৈরি হচ্ছে, নানান সংকট। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোথায়, সেই প্রশ্নই থেকে গেল সাত বছরেও!