প্রস্তাবিত বাজেট টেকসই জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে: সিপিডি



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ টেকসই জ্বালানি এবং জ্বালানি রূপান্তরের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমানো, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসা, বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ ব্যয় কমানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রণোদনা বাড়ানো সংক্রান্ত সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নির্দেশনাও নেই প্রস্তাবিত বাজেটে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

জ্বালানি খাতের রূপান্তর ও টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিত করতে গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে যৌক্তিক প্রাধিকার পুনঃনির্ধারণ করে বাজেটের বরাদ্দে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার (২৩ জুন) সিপিডির পক্ষ থেকে আয়োজন করা ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এ বিদ্যুৎ ও শক্তি সেক্টর: চ্যালেঞ্জ এবং প্রস্তাবিত ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এ সব কথা বলেন গোলাম মোয়াজ্জেম।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য একে আজাদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন, বুয়েটের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমামসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে চলমান ম্যাক্রো ইকোনমিক চ্যালেঞ্জের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এই খাতের চ্যাালেঞ্জগুলো পুরো অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলেছে।

তিনি বলেন, লোডশেডিং কমানো, বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা, এ খাতে ভর্তুকি কমানো ও জ্বালানির জন্য আমদানি নির্ভরতা কমাতে অভ্যন্তরীণ গ্যাস আহরণের বিকল্প না থাকলেও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উন্নয়ন ব্যয় প্রস্তাবিত বাজেটে কমানো হয়েছে। এই বরাদ্দ দিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬ গ্যাস কূপ অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি পূরণ সম্ভব হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগটিকে অযোৗক্তিক আখ্যা দিয়েছেন গোলাম মেয়াজ্জেম। তিনি বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি কমাতে হবে। তবে সেটা দাম বাড়িযে নয়, বরং উৎপাদনে দক্ষতা নিশ্চিতের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ কমাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে সিস্টেমে যেতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বাতিল না করা, বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কেনা ও দেনা পরিশোধে চড়া সুদে ঋণ নেওয়া অব্যাহত থাকলে এ খাতে ভর্তুকি কমবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আমাদের ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্ট রয়েছে। এর কারণে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং না হওয়ায় বাজারমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুতে না বরং নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও এমনটা হচ্ছে, মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার কারণে দাম বাড়িয়েও এ খাতে ভর্তুকি কমছে না।

আগামীতে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আর বিনিয়োগে দর সুযোগ নেই দাবি করে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ১৪ হাজার ২৬১ মেগাওয়াটের এই বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশ ২০৩০ সালেও অব্যহার্য থাকবে।

বাড়তি উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যেও সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা আর জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদার চেয়ে উৎপাদনে প্রতিদিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত ঘাটতি থাকছে। এর ফলে ময়মনসিংহ, খুলনা ও কুমিল্লা বিভাগে প্রায়শই লোডশেডিং হচ্ছে।

এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছে সিপিডি।

এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বরাবরের মতই অবহেলার প্রবণতা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বৈষম্যমূলক রাজস্ব কাঠামোর মোকাবিলা করছে দাবি করে তিনি বলেন, এ খাতে বিনিয়োগকারীদের অন্তত জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান সুযোগ দিতে হবে, এবং তা পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে।

বাজেটে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ট্যাক্স হলিডে পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরে উন্নীত করা, ছোট আকারের সৌরভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে শতভাগ শুল্ক মওকুফ এবং সৌর বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত উপকরণে ক্রমবর্ধমান করের হার কমানোর সুপারিশ করেন তিনি।

গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত চার উপজেলা, ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি



মাসুম বিল্লাহ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির ফলে গাইবান্ধায় তিস্তা নদী ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। এছাড়া তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ৮০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল ছয়টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ সেন্টিমিটির বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৩৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর ২৮ সে.মি কমে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার (সরকারি হিসেবে) মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত গাইবান্ধার সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটা উপজেলায় ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানবন্দি হয়ে পড়েছে। এই ২৪ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০টি , সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটা উপজেলায় ৫ পাঁচ হাজা ১৭০টি ইউনিয়ন ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৮০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

পানিবন্দি মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ০৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, চার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও বিদ্যালয়ের ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি বিদ্যালয়, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এছাড়াও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পানিবন্দি এসব এলাকার মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি। এসব এলাকার চারদিকেই পানি থৈ থৈ করছে। নিম্নাঞ্চলের সাথে নদী তীরবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে তারা ধীরে ধীরে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। পানিবন্দি মানুষদের নৌকা যোগে চলাচল করতে দেখা গেছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি এসব পরিবারগুলো। এসব এলাকার পাট, আউশ ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে পাট, ভুট্টা, বাদাম, আউশক্ষেত সহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ সময় ফজলুপুর ইউনিয়নের মালেক মিয়া বলেন, গত তিনদিন থেকেই নদীতে পানি বাড়ছেই। পানিবন্দি হয়ে গবাদি পশু, শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে নানা সংকটে দিন যাচ্ছে আমাদের। বন্যায় পাট, ভুট্টা আউশ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। টিউবয়েল পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট পড়েছি আমরা।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, বর্তমানে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শুধু গজারিয়ায় নয় পানিবন্দি সকল এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে জানান, চলমান বন্যায় ইতোমধ্যে চার উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাক-সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে সেসব ক্ষতির আশঙ্কা কম রয়েছে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয় কিংবা আরো বাড়ে তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে তা পরবর্তীতে জানা যাবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে মোবাইল ফোনে বলেন, জেলার বন্যা কবলিত চার উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকেই থৈ থৈ পানি। এরমধ্যে কিছু স্কুলের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই স্কুলে যেতে পারছে না। যার কারণে সেইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই বা পানি নেমে গেলেই পূর্বের ন্যায় সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু হবে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে অব্যহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঘাঘট ও ব্রহ্মূত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরো কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বিক পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

;

বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না বন্যার্তরা



কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
বন্যায় ঘর ডুবে গেলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নারাজ এই নারী।  ছবি: বার্তা২৪

বন্যায় ঘর ডুবে গেলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নারাজ এই নারী। ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর অববাহিকা প্লাবিত হয়ে জেলার ৭ উপজেলার ৪১ টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৮২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারাও বন্যার কবলে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। 

তবে, বন্যায় বাড়ি ডুবে গেলেও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষদের যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছেনা। সংসারের শেষ সম্বলটুকু হারানো ও ভেসে যাওয়ার ভয়ে ডুবে থাকা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও নারাজ পরিবারগুলো। চেষ্টা করছেন ভেসে থাকা টিনের চালা আকড়ে ধরে বাঁচার।

উলিপুরে বন্যার্ত এক খামারির বাড়িতে রাখা গবাদি পশু। 

জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান শাখা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামের প্রায় ৩২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসেব মতে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি মাত্র আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু পরিবার থাকার কথা জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান শাখা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলোর চর আলোর পাঠশালা নামের ঐ আশ্রয়কেন্দ্রে ১২টি পরিবার ও কিছু গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিত ঐ পরিবারগুলো নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে সেখানে উঠেছেন। অপরদিকে, বন্যায় কবলিত পরিবারগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের কয়েকটি বন্যা কবলিত চরে সরেজমিনে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে না যেতে চাওয়ার ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে বার্তা ২৪. কম। দেখা যায়, যাদের বাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছে তারা নিকটবর্তী কোন উঁচু স্থানের আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এবং যাদের বাড়ির টিনের চালা সহ কিছুটা অংশ ভেসে আছে সেখানে কোনমতে কষ্ট করে দিন পার করছেন চরাঞ্চলের বাসীন্দারা। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন টিনের চালায়, কেউবা নৌকাতেই কাটাচ্ছেন দিনরাত।

উলিপুর উপজেলার বতুয়াতুলি মুসার চরের বাসীন্দা নূর জামাল মিয়া। দুজন শ্রমিক ডেকে এনে ঘরের ভেতর গলা পর্যন্ত ওঠা পানিতে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন জিনিসপত্র আরও উঁচুতে বেঁধে রাখছেন তিনি। পাশের উঁচু একটি টিলায় হাঁটু পানিতে গবাদিপশু গাদাগাদি করে রাখা। সারাদিন আঙিনায় বেঁধে রাখা নৌকায় বসে কাটছে তার দিন।

মুসার চর এলাকার বন্যা কবলিত এক বাসিন্দা। 

আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বাড়ির সব মালামাল নিয়ে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। পানি বাড়লে জিনিসপত্র আরও উঁচুতে তুলতে হয়। বাড়িতে না থাকলে সব ভেসে যাবে। সেখানে গরু গুলোর যায়গা হবে কিনে কে জানে। মালামাল রক্ষা করতে আমাদের বাড়িতেই থাকতে হয়।

একই চরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগমের কন্ঠেও একই ব্যাখ্যা। বাড়ির ৩ টি ঘরে বুক পর্যন্ত পানি ওঠার পর ৬টি গরুসহ ৫ জন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির একটি উঁচু টিলায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সেখানেই চলে রান্নার কাজ। তিনি বলছিলেন, খাওয়ার কষ্ট, টয়লেট যাওয়ার কষ্ট, থাকার কষ্ট। তারপরেও চোখের সামনে বাড়িটা আছে এটাই শান্তি। এগুলো ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে সবসময় টেনশন হবে। সেখানেও থাকার ব্যবস্থা কেমন সেটা নিয়েও চিন্তা হয়।

কুড়িগ্রামের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে দুই একটি করে পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন এবং মানুষের থেকে গবদি পশুর সংখ্যাই বেশি। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানিয়েছেন, উলিপুরের চর বাগুয়াতে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এর আশেপাশের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশুর পাশাপাশি দু-একটি করে পরিবার উঠেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় মোট ৪০৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে মানুষদের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আসার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। সাধারণত চরম ঝুঁকি না মনে করলে লোকজন আসতে চায়না। তবে আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।

এদিকে, সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১০৫ মে. টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও নগদ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে এই ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার যথাক্রমে ৭১ সেন্টিমিটার ও ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি আগামী ৩ দিন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধির হার অব্যহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।

;

বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেফতার ৫



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীতে অপহরণের একদিন পর বন্ধুর ভাড়া বাসা থেকে মোহাম্মদ রায়হান রানা (২২) নামে এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে জেলার দাগনভূঞা পৌরসভার সাতবাড়িয়া জামে মসজিদ এলাকার লাতু মিয়ার কলোনী থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, রায়হানকে অপহরণ করে তার এক বন্ধুসহ তাদের একটি চক্র রায়হানের বাবার কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে বন্ধুর ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছ পুলিশ। চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

এর আগে অপহৃত যুবকের বাবা মো. বেলাল বাদী হয়ে দাগনভূঞা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অপহৃত রায়হান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা গ্রামের মোহাম্মদ বেলালের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামে মাছ ধরা ট্রলারে কাজ করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জাহিদুল ইসলাম পিন্টু (৩৪), ফখরুল ইসলাম (৩৩), আল জাবের (২৫), আজমীর হোসেন হৃদয় (২৬) এবং টিটু দাশ (৩৩)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ছুটি কাটিয়ে গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে রামগতি থেকে চট্টগ্রামের কর্মস্থলে যোগ দিতে গাড়িতে উঠেন রায়হান। যাত্রাপথে রায়হান মুঠোফোনে ফেনীর দাগনভূঞার এক বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন।

ওই বন্ধু তাকে দাগনভূঞা নেমে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেন। তার কথা অনুযায়ী দুপুর ১টায় রায়হান দাগনভূঞা বড় মসজিদের সামনে বাস থেকে নেমে তার সাথে দেখা করেন। পরে ওই বন্ধু তাকে ভাত খাওয়ানোর জন্য সাতবাড়িয়া মসজিদের বিপরীতে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে একটি কক্ষে আটকে ফেলেন।

ওই সময় কক্ষে অবস্থান করছিল অন্যান্য অপহরণকারীরাও। পরে রায়হানের মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

পরদিন (৩ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে তাদের কথামতো রায়হানের বাবা ও নিকটাত্মীয় শাহেনাজ দাগনভূঞার জিরো পয়েন্টে এসে পৌঁছালে এ সময় ওই এলাকায় টহলরত দাগনভূঞা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আজমগীরকে দেখতে পেয়ে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সহযোগিতা চান তারা। পরে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

;

সাংবাদিককে 'হাড্ডি' ভেঙে ফেলার হুমকি, সাবেক এমপির বিরুদ্ধে মামলা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাড্ডি ভেঙে ফেলার হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বাঁশখালীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদের আদালতে মামলাটি করেন বাঁশখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী। তিনি স্থানীয় দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি।

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিলেন সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী। বাদী শফকত চাটগামীর জনশক্তি কম থাকার সুযোগ নিয়ে আসামি মোস্তাফিজের স্বার্থে কাজ করার জন্য এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে শফকত হোসাইন চাটগামীসহ সবাই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিলেও মোস্তাফিজ অজানা কারণে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে শফকত হোসাইন চাটগামীকে সাথে নিয়ে মোস্তাফিজ হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তাব দিলে তিনি সেই প্রস্তাব মেনে নেননি। শফকত হোসাইন চাটগামী ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোস্তাফিজ তাকে তখন থেকে শত্রু ভাবতে শুরু করেন।

গত ২৯ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাঁশখালী উপজেলা সদরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, ‘সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন নিজের বাড়ি না করে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। অথচ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভণ্ডামি। দলীয় কার্যালয় নির্মাণে সাবেক এমপি ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। খানখানাবাদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ৭ লাখ টাকা, সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরী ৮ লাখ টাকা, চেয়ারম্যান ইবনে আমিন ৫ লাখ টাকা, পুকুরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মাহবু্ব আলী ১১ লাখ টাকা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী ৩৪ লাখ টাকা দিয়ে অফিস সংলগ্ন ছড়ায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দেন। এভাবে আরও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাফিজ।’

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এরই জের ধরে গত ৩০ জুন ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন মোস্তাফিজ। এসময় মোস্তাফিজ ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে বলেন, ‘এগুলো কী লিখছস?’ জবাবে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘আমি তো নিজ থেকে কিছু বানিয়ে লিখি নাই। গফুর সাহেব মিটিংয়ে যা বলছে, তা লিখছি আর কি।’ এরপর মোস্তাফিজ বলেন, ‘তোর মায়ের... লিখছস খাং...পোলা। আমি আসতেছি। সু..নির পোলা... আমি ঢাকা থেকে আসলে তোর হাড্ডি-মাংস ভেঙে ফেলবো।’

বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন বলেন, শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বাঁশখালী থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এবিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্য জানতে পারেনি প্রতিবেদক।

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। অবশ্য ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে। এর আগে বাঁশখালী থানা কার্যালয়ে হাজির হয়ে মোস্তাফিজুর ওসি তোফায়েল আহমদের দিকে তেড়ে যান। এ কারণে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে মুজিবুর রহমান ৫৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমানের কটূক্তি এবার প্রথম নয়। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য থাকার সময় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও কটূক্তি করেন। তখনো গাড়িতে বসে করা কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়া প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করেও সমালোচিত হন তিনি।

;