জার্মানিতে রফতানি হলো ‘হাঁড়িভাঙা আম’

  • আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রংপুরে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে রফতানি হলো। প্রথম পর্যায়ে ২০০ কেজি আম রফতানি করা হয়েছে। অচিরেই বিভিন্ন দেশে আম রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে রংপুরের এই জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আম সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও ব্রুনাই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে হাঁড়িভাঙা আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুমান ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী হয়।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সেখানে তিনি হাঁড়িভাঙা আম রফতানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত মন্ত্রীর আগ্রহে ঢাকার গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাওসার আহমেদ স্যাম্পল হিসেবে ২০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে পাঠিয়েছেন।

রংপুরে প্রতি বছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় আঁশহীন সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম। শুরুর দিকে দাম কিছুটা চড়া হলেও হাঁড়িভাঙার স্বাদ নিতে হাট-বাজারে কমতি নেই ক্রেতাদের। এই আম ঘিরে চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় থেকে দুইশো কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

ভালো মানের হাঁড়িভাঙা আম চেনার উপায় প্রসঙ্গে খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমচাষি আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের ওপরটা যত কালচে, ভেতরে ততই সুন্দর। এর স্বাদ ও মিষ্টি লোভনীয়। দেখতে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন আম বাগান কিনে নেওয়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভের জন্য কীটনাশক ও স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন। এতে আম দেখতে ভালো, সুন্দর ও পাকা রঙের মনে হয়।

মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নিয়মিত বিভিন্ন জাতের আম রফতানি করে আসছে। হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের আগ্রহে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে আম রফতানি করেছে। জার্মানি আরও আম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের মো. খলিলুর রহমানের বাগান থেকে ওই আম সরবরাহ করা হয়।

বর্তমানে হাঁড়িভাঙা আম নেপাল ও থাইল্যান্ডে রফতানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা জিআই পণ্য হয়েছে তা বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। আম চাষিদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কৃষি অফিস কাজ করছে বলেও জানান সাইফুল আবেদীন।

হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আঁটিও খুব ছোট। ছোবলা পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০-৩০০ গ্রাম। মূলত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে হাঁড়িভাঙা আম পরিপক্বতা পায়। বড় সাইজের এক মণ (তিনটিতে এক কেজি) আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট সাইজের এক মণ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।

এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়।