আজমিরীগঞ্জে সন্তানের মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার অভিযোগ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়

ছবি: সংগৃহীত, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর মরদেহ বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত শিশু দুটির নাম প্রলয় দাস (৭) ও সূর্য দাস (৬)।

শিশুদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের দোহাই দিয়ে তোপের মুখে ফেলে প্রলয় দাস ও সূর্য দাসের মরদেহ বস্তায় ভরে কালনী-কুশিয়ারা নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাসের অভিযোগ, প্রলয়ের মরদেহ মাটি চাপা দেওয়ার পর স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের তোপের মুখে সন্ধ্যায় মরদেহটি মাটির নিচ থেকে উত্তোলন করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

একইভাবে সূর্য দাসের মরদেহটিও নদীতে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মাটি চাপা দেওয়া নিজ ছেলে প্রলয় দাসের মরদেহ উত্তোলন না করতে সমাজপতিদের পায়ে পড়ে কান্না করেও মন গলাতে পারেননি তার বাবা রুবেল দাস।

বিজ্ঞাপন

গোবিন্দ দাস বার্তা২৪.কম বলেন, ২৯ জুন (শনিবার) দুপুর ১২টার দিকে আমার ৭ বছরের ছেলে প্রলয় ও প্রতিবেশী রুবেল দাসের ৬ বছর বয়েসি ছেলে সূর্য দাস অন্যান্য শিশুর সঙ্গে মাহমুদপুর মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠের কাছে থাকা সোমেশ্বরী পুকুরে স্নান করতে নামে। এক পর্যায়ে তারা দু’জন পা পিছলে পুকুরের গভীরে তলিয়ে মারা যায়।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানের দেওয়াল সংলগ্ন মাটির নিচে সমাহিত করি। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারি দীপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রামের মুরব্বিরা আমাকে ডেকে মরদেহ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন।

আমি মরদেহ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারি, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করি। তারপরেও তারা আমার কথা শোনেননি! পঞ্চায়েত কমিটির চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে সন্ধ্যায় আমি ছেলের মরদেহ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিই।

সূর্য দাসের বাবা রুবেল দাসও একই অভিযোগ করে বলেন, শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের মরদেহ সমাহিত করতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানার পর বাধ্য হয়ে আমার ছেলে সূর্যের মরদেহ বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সেক্রেটারি দীপেশ দাস বলেন, এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্তে এটা করা হয়েছে।

কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্ত হলো শ্মশানের পরিবেশ পরিষ্কার রাখার জন্য এর পাশে কোনো সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য, আমার একার নয়!

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ঘটনাটি অমানবিক! শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাহিত করা হলে শ্মশান পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে’!

আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।