আসন্ন দুর্গাপূজাকে উপলক্ষে কেউ যেন ভয় ভীতি প্রদর্শন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে না পারে সেজন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এ বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ৪৬০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে ঘোষাণা দেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ সব ধর্মমতের মানুষকে নিয়ে সহিষ্ণুতা ও শান্তির সঙ্গে বাস করতে আগ্রহী। এখানে প্রতিটি ধর্মের উৎসব স্বাধীন ও নিরাপদে নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী পালনের পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে এবং সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে তা পালিত হবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সব ধর্মের উৎসব পালনে নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর দুঃখের সাথে দেখছি বিগত কয়েক দশক ধরেই পূজার সময় আসলেই একটি মহল ধর্মভিত্তিক উত্তেজনা ছড়িয়ে এবং নানা ধরণের নাশকতার চেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না।
ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ভাঙচুর চালানোর উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি। তারই ধারাবহিকতায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ধর্ম বিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার, ফেসবুকে নানা ধরণের সাজানো গল্প ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আমরা প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্যও পেয়েছি। সেই সাথে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মহল বেআইনি এবং নৈতিকতা বিরোধীভাবে পূজার সময় হিন্দু ধর্মাবালম্বীরা কি করতে পারবেন কি করতে পারবেন না তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। আইন শৃঙ্খলার অনিবার্য প্রয়োজনে কি করা যাবে বা যাবে না তা বলার এখতিয়ার সরকারের, অন্য কারো নয়।
আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, দুর্গাপূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বহাল থাকবে। সেই সাথে তারা জানিয়েছেন অনাকাঙিক্ষত কোন ঘটনা ঘটার আগেই তারা যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে তার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সেই সাথে আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, যারা এ সব উত্তেজনা তৈরি করছে কিংবা কোন সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আগেভাগেই কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ সব ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ছাত্র জনতার বৈষম্যরিরোধী গণ অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যকে বিঘ্নিত করার এই সব অপপ্রয়াস জনগণ কোন অবস্থায়ই মেনে নেবে না।
সে জন্যই সরকার ও প্রশাসনের উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দলমত ও ধর্ম/বর্ণ/গোত্র/লিঙ্গ নির্বিশেষে সব স্তরের নাগরিক ও ছাত্র-জনতাকে আমরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলারও উদাত্ত আহবান জানাই।
বিবৃতি দাতারা হলেন- আনু মুহাম্মদ, সুলতানা কামাল, ড. ইফতেখারুজ্জামান, খুশি কবীর, অ্যাড. জেড আই খান পান্না, পারভীন হাসান, অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার সারা হোসেন. গীতি আরা নাসরিন, সামিনা লুৎফা, ড. সুমাইয়া খায়ের, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, জোবায়দা নাসরিন, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, মির্জা তাসলিম সুলতানা, অধ্যাপক, অ্যাড. তবারক হোসেন, ড. শহিদুল আলম, রেহনুমা আহমেদ, নাসরিন খন্দকার, শামসুল হুদা, সাঈদা গুলরুখ, ড. শাহনাজ হুদা, এড. সালমা আলী, অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, রোজিনা বেগম, মাইদুল ইসলাম, ড. স্বপন আদনান, মনিন্দ্র কুমার নাথ, রেজাউল করিম চৌধুরী, নোভা আহমেদ, জাকির হোসেন, অ্যাড. সাইদুর রহমান, ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, ব্যারিস্টার শাহদাত আলম, অ্যাড. নাজমুল হুদা, অ্যাড. মো. আজিজুল্লাহ ইমন, দীপায়ন খীসা, হানা শামস আহমেদ ও মুক্তাশ্রী চাকমা।