৫৩ বছরেও হয়নি ব্রিজ, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

  • শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বার্তা ২৪

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। ছবি: বার্তা ২৪

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ও তিলকপুর ২ ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে ছোট যমুনা নদী। দুই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা দড়িটানা নৌকা। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার মানুষ দুই ইউনিয়নে যোগাযোগ করে একটি মাত্র নৌকার উপর ভর করে। যুগের পর যুগ পার হলেও দুর্ভোগের মুক্তি মেলেনি আজ পর্যন্ত। এলাকাবাসির দাবি এই ঘাটটিতে একটি সেতু হলে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি গতি আসবে অর্থনীতিতে।

বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা যখন পানিতে টইটুম্বুর তখন এক ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কমে আসে পানি। এই দুই মৌসুমে দঁড়িটানা নৌকার উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় ২ পাড়ের বাসিন্দাদের। আবার ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকবার নৌকা ডুবে ঘটছে দুর্ঘটনা। নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে বই খাতা ও পোশাক ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বক্তারপুর গ্রাম। গ্রামে রয়েছে হাট-বাজার, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়। এই গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে বাইপাস শীবপুরে এবং আরেকটি ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ত্রিমোহনীতে রয়েছে সেতু। তাই বাধ্য হয়ে ২ পাড়ের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, 'চাকলা নতুন হাটে নদীর ওপার থেকে লোকজন এসে বাজার করে নিয়ে আবার ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আমাদের একটা একান্ত ব্রিজের খুব দরকার কারণ পাশে যে একটা ব্রিজ আছে সেটা প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে আরেকটা ২ কিলোমিটার দূরে। এতে করে শিক্ষার্থীরাও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। চাকলা ঘাটে ব্রিজ হলে হাট টাও জাকজমক হবে আবার অন্যদিকে ওপারের বাসিন্দারাও খুব সহজে পারাপার হতে পারবে।'

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, 'চাকলা ঘাটে অতি শীঘ্রই একটা ব্রিজ দরকার কারণ ওপারের লোকজন খুব সহজে এপারে আসতে পারেনা। এপারে উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি বিদ্যালয় থাকায় ওপার থেকে নৌকা পার হবার সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আবার এপারে চাকলা হাট আছে সেখানে প্রতিদিন বিকেলবেলা মানুষ জন বাজার করতে আসে এজন্য দ্রুত একটা ব্রিজ দরকার আমাদের সবার।'

দঁড়িটানা নৌকার উপর ভরসা করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয় গ্রামের ২ পাড়ের বাসিন্দাদের।

চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চৌতি জানায়, 'আমি চাকলা প্রাইমারি বিদ্যালয় থেকে এপাড়ে যাতায়াত করছি, প্রায় ৯ বছর ধরে এপাড়ে পড়াশোনার জন্য ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে এবং শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, পোশাক ভিজে যায় তাই আমাদের সবার দাবি চাকলা ঘাটে একটা ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।'

ইকরতাড়া গ্রামের শিক্ষার্থী হাজেরা বলেন, 'আমি চাকলা বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে যাতায়াত করি। আমি ক্লাস ওয়ান থেকে পড়াশোনা করি। অনেক সময় মাঝি তার পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে আমাদের দেরি হয়। আবার মাঝে মাঝে নৌকা ডুবে যায় এতে করে আমরা ভোগান্তির মধ্যে পড়ি। অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আছে যারা সাঁতার পাড়েনা এদের জন্য পারাপার আরও ঝুঁকি।'

ইকরতাড়া গ্রামের গৃহবধূ মুক্তা বলেন, 'আমার ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু একটা ভয় সব সময় কাজ করে কারণ নদীতে এখন অনেক পানি। যদি নৌকা ডুবে যায় তাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। এজন্য সব সময় চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। চাকলা ঘাটে একটা ব্রিজ থাকলে সবার জন্য সুবিধা হতো।'

চাকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সোহেলী পারভীন বলেন, 'আমার বাড়িও ইকরতাড়া গ্রামে মানে নদীর ওই পারে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা দিয়ে পার হয়ে বিদ্যালয় আসে, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ছেলে মেয়েরা যখন পার হয় তারা ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পার হয়। অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে আবার নৌকা থেকে পড়েও যায়। এই অবস্থায় নদীর উপর একটা ব্রিজ জরুরী, ব্রিজ হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং তারা উপকৃত হতো। ছেলে মেয়েরা নিশ্চিন্তে ব্রিজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারতো আবার অভিভাবকরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত।'

চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর রশীদ বলেন, 'চাকলা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে যার অধিকাংশ নদীর ওপার থেকে অর্থাৎ ইকরতাড়া গ্রাম থেকে আসে। শিক্ষার্থীদের নদী পার হওয়ার সময় একটি নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। নদী পার হওয়ার সময় বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। নদীর পানি যখন বেড়ে যায় তখন নদীতে প্রবল স্রোতে হয় তখন খুবই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। আবার মাঝে মাঝে ছেলেমেয়েরা নৌকা ডুবিরো ঘটনাও ঘটে এতে করে শিক্ষার্থীদের বই খাতা ভিজে যায় তখন পাশের স্থানীয় বাসিন্দারা সহযোগিতা করে তাদের উদ্ধার করে নাহলে অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতো শিক্ষার্থীরা। আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার আবেদন যে এখানে একটা যেন ব্রিজ হয়, ব্রিজ হলে ওপারের শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই এপারে বিদ্যালয় আসতে পারবে এবং ভোগান্তি কমবে দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন হবে।'

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) তোফায়েল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর উপর চাকলা খেয়া ঘাট স্থানীয় একটি ঘাট রয়েছে। এখানে খেয়া ঘাটের মাধ্যমে দিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়, বর্ষাকালে পার হতে বেশ কষ্ট হয়। এখানে আমাদের একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। আসলে এগুলো ব্রিজ আমরা নির্মাণ করে থাকি স্থানীয় সাংসদের অনুমতিক্রমে তাদের সাথে আলোচনা করে, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আলাপ আলোচনা করে থাকি। ইতিমধ্যে স্থানীয় সাংসদের ব্রিজ বাস্তবায়ন করার জন্য দিয়েছিলেন আমরা হেড কোয়ার্টারে প্রস্তাব প্রেরণ করেছিলাম সেটির এখনো অনুমান পাওয়া যায়নি, অনুমোদন পাওয়া গেলে আমরা বাস্তবায়ন পর্যায়ে চলে যাবো।'