আ.লীগ নেতা কামালকে কুপিয়ে হত্যা

অতর্কিত হামলা চালায় মাস্ক পরিহিত কয়েক যুবক

  • আল-আমিন রাজু, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত, নিহত আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ

ছবি: সংগৃহীত, নিহত আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদ

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার কাঁটাসুর এলাকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কামাল আহমেদকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৯ জুলাই) রাত ৯টার দিকে বাসার সামনে ৪ থেকে ৫ জন মাস্ক পরিহিত যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা কামালকে উদ্ধার করে জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কামাল একই এলাকার মো. আলম চাঁনের ছেলে। তিনি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের (সাবেক ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি মূল দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৯ সালে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও প্রচারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পেশায় ইট-বালু ব্যবসায়ী কামালকে হত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না স্বজনেরা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ বাবা আলম চাঁন। তাকে ঘিরে রয়েছেন অন্য স্বজনেরা। সবাই মরদেহের অপেক্ষায়।

আলম চাঁন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কারো বিরোধ নেই। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের জন্য এলাকার মানুষও কান্না করছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

বিজ্ঞাপন

আলম চাঁন বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের সময় মোহাম্মদপুরে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের সময়েও সাধারণ মানুষকে রক্ষায় কাজ করেছে আমার ছেলে। সে সব সময় মানুষের জন্য কাজ করতো। তাকে কারা মারলো, তা ঠিক বুঝতে পারছি না। পুলিশের কাছে দাবি, তারা যেন তদন্ত করে হত্যাকারীদের বের করে।

রাজনৈতিক কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কিনা জানতে চাইলে আলম চাঁন বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ নেই। সে আমার ইট-বালুর ব্যবসা দেখাশোনা করতো। সে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতেও ছিল। রাজনৈতিক পদ-পদবি নিয়ে তার কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজিবের সঙ্গে রাজনীতি করতেন কামাল আহমেদ।

ক্যাসিনো কাণ্ডে রাজিব গ্রেফতার হওয়ার পর মোহাম্মদপুরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তার গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। স্বজনেরা আশঙ্কা করছেন, রাজিবের সঙ্গে সখ্যতাই কাল হয়েছে কামালের জন্য। তবে তারা স্পষ্ট কোনো ব্যক্তি বা নেতার নাম বলতে চাইছেন না।

কামাল আহমেদের হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবুল হোসেন। হামলার সময় তিনি সঙ্গে কাঁটাসুর তিন নম্বর রোডে কামালের বাসার সামনে বসে লুডু খেলছিলেন। এরই মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। চোখের সামনে এমন হত্যাকাণ্ডের পর বাকরুদ্ধ আবুল হোসেন।

আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি আর কামালভাই বাসার সামনে বসে লুডু খেলছিলাম। হঠাৎ ৪/৫ জন ধারালো অস্ত্র হাতে দৌড়ে আসে। সবার মুখেই মাস্ক ছিল। সে কারণে তাদের চিনতে পারিনি। অস্ত্র হাতে দৌড়ে আসতে দেখে আমরাও দৌড় দিই। এরই মধ্যে কামাল ভাইয়ের ওপর হামলা করে তারা। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা কামালভাইকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কামাল আহমেদের সুরতহাল তৈরি করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। সুরতহাল সূত্রে জানা যায়, কামালের বাম হাত, বাম বাহু ও ডান বাহু ও বাম পায়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে।

চার ভাইবোনের মধ্যে নিহত কামাল আহমেদ সবার বড়। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে কাঁটাসুর এলাকার তিন নম্বর রোডে বাস করতেন।

আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, নিহতের বাবা থানায় এসেছেন। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।

এই ঘটনায় কেউ আটক আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।