গাইবান্ধায় সাংবাদিক-আন্দোলনকারীসহ আহত শতাধিক
গাইবান্ধায় এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তিন সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন এক নারী ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১৫ জন। আহতরা গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আহত তিন সাংবাদিক হলেন, ঢাকা টাইমসের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জাভেদ হোসেন, ঢাকাপোস্টের গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি রিপন আকন্দ ও বার্তাবাজারের গাইবান্ধা প্রতিনিধি সুমন মিয়া। সাংবাদিকরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীদের ভিড়ে চিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে তিনজনেই শহরের বেসরকারি একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
রোববার সকালে তা জনসমুদ্রে রূপ নিলে গাইবান্ধা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল হয় এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। তারা ধীরে ধীরে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটি বিশাল মিছিল শহরের প্রধান সড়ক (ডিবি রোড) প্রদক্ষিণ করে পৌর পার্কের শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে ডিবি রোড হয়ে আবারো পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে পুলিশ। এর এক পর্যায়ে বিক্ষিপ্ত আন্দোলনকারীরা পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। এতে তিন সাংবাদিক, পথচারী ও শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. কল্লোল মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, মুহূর্তেই স্রোতের মতো আহতরা হাসপাতালে আসতে থাকে। আমরা সব বিভাগের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি নিজেও আহতদের শরীর থেকে প্রচুর গুলি বের করেছি।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন স্রোতের মতো আহতরা হাসপাতালে আসতে ছিল তখন আর প্রসেস মেইনেটেইন করা সম্ভব হয়নি। কেননা, অনেক আহতদের ভিড়ে সেবা পেতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষেপে গিয়ে ভাঙচুরের উপক্রম হয়। তখন ভর্তি ফরম পূরণ ছাড়াই আমরা আহতদের চিকিৎসা শুরু করি।
এসময় হাসপাতালে থাকা গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহকারী সমন্বয়ক জয়িতা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে ডিসি অফিসের সামনে গেলে পুলিশ আমাদের উপর ওপেন ফায়ার করে। সাথে রাবার বুলেট এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় তিনি ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার দাবি করেন।
এসময় তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সকল জনগনকে যার যা আছে তাই নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তার নেমে আসার আহবান জানান।
এদিকে, এ ঘটনার পর জেলা শহরজুড়েই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে ব্যবসায়ীরা। শহরে যান চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
তবে এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেনের। এছাড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।