কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিলেও সেবা দিতে প্রস্তুত নয় থানা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি- বার্তা২৪.কম

ছবি- বার্তা২৪.কম

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের দমনে সরকারের হয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ। ফলে একদিকে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষের যেমন মৃত্যু হয়েছে। তেমনি বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় বহু পুলিশ সদস্য হতাহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা। এমন কি বাদ যায় নি পুলিশ সদর দফতরও। সরকার পতনের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও কর্মে ফিরতে পারেনি পুলিশ। যার অন্যতম কারণ মানুষের ক্ষোভের কারণে থানায় নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না পুলিশ সদস্যরা।

যদিও ইতোমধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে শুরু করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে পোশাকে দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারেন নি। বরং থানা, পুলিশ মেসসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে গিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)তে আটটি বিভাগে ৫০টি থানা রয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি থানায় সেবা কার্যক্রম চালুর কথা জানিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে বাস্তবচিত্রের সঙ্গে ঘোষণার মিল পাওয়া যায়নি।

রবিবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন সেনা সদস্য থানার নিরাপত্তায় কাজ করছেন। থানার মূল ফটকের সামনে একটি টেবিলে কিছু বই খাতা রাখা। যেখানে বসে এজন সেনা সদস্য সংবাদপত্র পড়ছেন। তবে থানার ভেতরে প্রবেশ করে কাউকে পাওয়া গেলো না।

বিজ্ঞাপন

থানার ডিউটি অফিসার, ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের রুমে ভাঙা টেবিল ছাড়া কিছুই নেই। পোড়ার ক্ষত সর্বত্র। তবে গতকাল শনিবার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পুড়ে যাওয়া মোহাম্মদপুর থানা পরিস্কার করেছেন। ফলে আসবাবপত্র না থাকলেও কয়েকটি রুম পরিস্কার দেখা গেছে। তবে থানার বিভিন্ন স্থানে এখনো পুড়ে যাওয়া নানা জিনিসপত্র স্তুপ হয়ে আছে।

দায়িত্বরত সেনা সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানার বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থানায় সেবা দেওয়ার মতো পরিস্থতি না থাকায় তারা এসে হাজিরা দিয়ে চলে গেছেন।

থানা ভবনের দোতলায় গিয়ে কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া গেলো না। তবে ভেঙ্গে যাওয়া দরজার সিটকানি ঠিক করতে দেখা গেছে একজনকে। কাছে গিয়ে জানা যায়, তার নাম মাওলানা দিদারুল ইসলাম। তিনি মোহাম্মদপুর থানায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নামাজ পড়ান। থানার প্রতিটি রুমের মতো তার থাকার রুমটিতেও লুট হয়েছে।

মাওলানা দিদারুল বলেন, ১৬ বছর ধরে থানায় নামাজ পড়াই। পুলিশ আসে আবার চলে যায় কিন্তু আমি তো ১৬ বছর ধরে আছি। সব কিছুর জন্য একটা মায়া হয়ে গেছে। চোখের সামনে সব পুড়ে গেছে। কিন্তু কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। চেষ্টা করতে গিয়ে আমি নিজেওে হামলার মুখে পড়েও বেঁচে যাই। থানার সব কিছু নিয়ে গেছে। নামাজ ঘরের এসি, ফ্যান, এমনকি কোরআন শরীফ রাখার একটি র‌্যাক ছিল, কোরআন ফেলে দিয়ে সেই র‌্যাকটিও নিয়ে গেছে। আমার রুমের খাট, ফ্যানও নিয়ে গেছে।

আনন্দ মিছিল থেকে থানায় হামলা হয়েছে উল্লেখ করে দিদারুল বলেন, গত ৫ তারিখ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এমন খবরে থানার সামনে দিয়ে একেরপর  এক আনন্দ মিছিল যেতে দেখি। এর একটু পরই মিছিল থেকে হামলা করা হয়। থানার প্রতিটি রুমে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। পাশাপাশি অস্ত্রসহ সব কিছু লুট করা হয়। চেষ্টা করেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।

ডিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু মোহাম্মদপুর থানা নয় কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেওয়া বেশিরভাগ থানা এখনো সেবা দিতে পারছেনা। প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকা ও কমপিউটারসহ সকল আসবাবপত্র লুট হওয়ায় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় কর্মস্থলে আসলেও পুলিশের পোশাক গায়ে জড়াননি অনেকে।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ডিএমপির ৪৫টি থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ারি বিভাগের যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, গুলশান বিভাগের খিলক্ষেত, উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব থানা ও রমনা বিভাগের পল্টন থানা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এখনই কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।