অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গার্মেন্টস-নির্মাণ শ্রমিকদের ১৩ দাবি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস, ৬০ লক্ষ দোকান ও ৩৭ লক্ষ নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও হত্যার বিচারসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ ৪ ফেডারেশন।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের পক্ষে দাবি তুলে ধরে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন।
শ্রমিকদের দাবি লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন।
তিনি বলেন, পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে পরিচালিত নারকীয় হামলায় দেশের ৮৪ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প গার্মেন্টসের ১১ জন, দোকান কর্মচারী ৩৬ জন ও নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয় ১৭ জনেরও বেশি। যাদের মধ্যে আমাদের জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য ৫ জন। ৪টি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আহত হয়েছেন শতাধিকের অধিক, গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ১০০ জন সদস্যকে। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃজ্ঞতা জানিয়ে একই সাথে পূর্ববর্তী সরকারের এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দাবি সমূহ তুলে ধরেন:
নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি সমূহগুলো হলো:
অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ৫ সদস্যসহ ১১ গার্মেন্টস শ্রমিক, ৩৬ জন দোকান কর্মচারী, ১৭ নির্মাণ শ্রমিকসহ সব শ্রমিক ও গণ হত্যার বিচার, দায়ীদের শান্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং নিহতের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৪টি ফেডারেশনের আহত ২ শতাধিক সদস্যসহ সব আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ ৪ ফেডারেশনের ২ শতাধিকসহ গ্রেফতারকৃত সব শ্রমিককে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত মজুরি অবিলম্বে বৃদ্ধি করতে হবে এবং নিম্নতম মজুরির টার্ম পরিবর্তন করে "লিভিং ওয়েজ" অথবা "শোভন মজুরিকে" আইনগত ভিত্তি দিতে হবে।
অবিলম্বে সারাদেশ এবং সব সেক্টর এবং সব শ্রমিকের জন্য প্রযোজ্য এবং গ্রহণ যোগ্য জাতীয় নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে। অবিলম্বে সারাদেশে কর্মরত ৬০ লক্ষ দোকান কর্মচারীদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে।
দোকান কর্মচারীদের শ্রম আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি ১.৫ দিন, নির্মাণ শ্রমিকদের ১ দিন নিশ্চিত করে এদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দিতে হবে। ৪২ লক্ষ গার্মেন্টস, ৬০ লক্ষ দোকান কর্মচারী ৩৭ লক্ষ নির্মাণ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
ইপিজেড-এ প্রচলিত আলাদা আইন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মূল সংবিধান পরিপন্থি, যা আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এরও পরিপন্থি। তাই অবিলম্বে ইপিজেড এর জন্য প্রচলিত আলাদা আইন অবিলম্বে বাতিল করে দেশে প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় ইপিজেড কে আনতে হবে যেখানে শ্রমিকেরা মত প্রকাশ, সংগঠন করা এবং দরকষাকষি করার অধিকার পাবে।
আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা'কে সংস্কার করতে হবে। বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সব ধরনের আইনী, মালিকসহ সব সামাজিক বাধা বিপত্তি দূর করতে হবে।
নারী শ্রমিকদের সম-অধিকার, সম-মজুরি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মেগা প্রকল্প এবং মেগা দুনীতি বন্ধ রেখে দেশের গার্মেন্টস শ্রমিক, নির্মাণ, দোকান, কৃষক শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দোকান কর্মচারী ফেডারেশন-এর সভাপতি জনাব রফিকুল ইসলাম বাবুল, একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব কামরুল হাসান, বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন-এর সভাপতি আব্দুল মতিন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আলী, ৪ টি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদুল ইসলাম, মোঃ কবির হোসেন, হযরত আলী মোল্লা, মিসেস সুইটি সুলতানা, মোঃ রিয়াদ হোসেন, লোকমান আলী প্রমুখ।