ফেনীর বিচ্ছিন্ন এলাকা থেকে বন্যাদুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্যাদুর্গত মানুষদের বাঁচার আকুতি

বন্যাদুর্গত মানুষদের বাঁচার আকুতি

‘বাঁচাও বাঁচাও ,পানি গলা পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে । সেনাবাহিনী কোস্ট গার্ড খবর দাও। আল্লাহ আমাগো বাঁচাও’- এমন আহাজারি, আকুতি আর জীবন বাঁচানো লড়াই নিয়ে ভয়াবহ রাত কেটেছে ফেনীবাসীর।

কয়েকদিনের অতি ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্লাবিত ফেনী জেলা প্লাবিত হওয়ায় বন্যায় প্রাণ নিয়ে সংশয়ে কয়েক লাখ মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ফেনীর এমন চিত্র উঠে আসছে
প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ এ বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও বিভিন্ন স্থাপনাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বন্যার পানি এসে মুহূর্তের মধ্যে প্লাবিত করছে গ্রাম। ফসলের মাঠ। গলা সমান পানি থেকে বাঁচতে শিশুদের নেওয়া হয়েছে গামলায়। ভিন্ন ভিন্ন বেশ কয়েকটি ভিডিওতে মানুষের আহাজারিও দেখা গেছে। শিশুদের উদ্ধার করছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে,৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ফেনীর মুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। এছাড়া ফেনীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদী, কহুয়া নদীসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ফেনী বাসিন্দারা। রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ফেনীর মানুষ। এত ত্রাণ নয় জীবন বাঁচাতে নৌকা চাচ্ছেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মত,ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে । এই দুই উপজেলা সহ বাকি উপজেলা গুলোও সময়ের সাথে প্লাবিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু অঞ্চল । তীব্র হচ্ছে খাদ্য ও পানি সংকট। যা বিপর্যয় ডেকে আনছে জনজীবনে।

স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখা যায়নি ফেনীতে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বন্যার পানি নেমে আসায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বন্যার কবলে ঘর বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে মানুষ৷ বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের অবস্থাও নাজুক। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারছে না অনেকে। এতে কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর উদ্ধার সহযোগিতাও চাচ্ছেন প্লাবিত এলাকার মানুষ।

এদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ৫০০ অধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বন্যার্তদের জন্য । ব্যবস্থা করা হয়েছে শুকনো খাবারও।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাতেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এছাড়াও দেশের প্রায় সকল সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বন্যার্তদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই বিভিন্ন উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অনতিবিলম্বে সরকারি-বেসরকারি সব বোট দেশের বন্যাদুর্গত এলাকায় নিয়োজিত করতে হবে। বৃহস্পতিবার (২২আগস্ট) সকাল ৬টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান করে বলুন প্রধান উপদেষ্টা থেকে নির্দেশ আছে। এক ঘণ্টার মধ্যে কন্ট্রোল রুম চালু করুন।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংকটের সময় দায়িত্ব পালনে যারা অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকে যেন আর শিক্ষার্থীদের ঘেরাও করা না লাগে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ শুরু করুন। সব বাহিনী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। আপনাদেরকে যেন আর নির্দেশনা দেওয়া না লাগে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সব শ্রেণির মানুষকে তিনি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।