বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চান ড.ইউনূস

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামতের ভিত্তিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে একথা জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপপ্রেস সচিব আজাদ মজুমদারও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ছয়টি ইসলামি দল ও ইসলামি আন্দোলন, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় হয়।

এতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, আদিলুর রহমান খান, আসিফ মাহমুদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।

বিজ্ঞাপন

প্রধান উপদেষ্টা সবার মতামতের ভিত্তিতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চান বলে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, যার মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সরকার গঠন করেছেন সেটা সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটা পরিবর্তনের জন্য একটা দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারে উদ্যোগ নিতে পারবেন। এই মিশনের অংশ হচ্ছে মতবিনিময় সভা যাতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়৷

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে শনিবারের বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়ে মাহফুজ আলম আরো বলেন, রাষ্ট্রের সংস্কার ও নির্বাচনী রূপরেখা নিয়ে অনেকের মনে সংশয়-সন্দেহ আশঙ্কা আছে। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে শুনতে চেয়েছেন তারা আসলে কি ধরনের সংস্কার চায়, ক্ষমতা পরিবর্তনের রূপরেখা কীভাবে চায়,কিভাবে নির্বাচন তারা নির্বাচনী রূপান্তর দেখতে চাচ্ছেন। এসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব মতবিনিময় সভায় উপস্থাপন করেছেন বলে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আশাবাদ শুনতে পেয়েছেন। তিনিও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে সবার সঙ্গে মিলে, সবগুলো রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্মকে সঙ্গে নিয়ে আগামীর রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা শিগগিরই উপস্থাপন করবেন।

মতবিনিময় সভায় অনেকগুলো প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কীভাবে হবে, বিচারের প্রক্রিয়া কি হবে। সংবিধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান কি সংস্কার করবো, নাকি পুনরায় লেখা হবে সেটা নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। দেশের সংকট প্রধান উপদেষ্টার কাছে রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থাপন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন খুব দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে। খুব দ্রুত সামলিয়ে নেবেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো এবং একজন টানা দুই মেয়াদে সরকার প্রধান হতে পারবেন না এমন আলোচনা মতবিনিময় সভায় হয়েছে।

ইসলামি দলগুলো তাদের নামে থাকা মামলাগুলো আাগমী এক মাসের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরের হত্যাকান্ড, ২০১৬ সাল এবং ২০২১ সাালের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আসেন তখন প্রতিবাদে অনেক লোক মারা গেছেন৷ এ তিনটায় ঘটনায় নতুন করে তদন্ত দাবি করেছেন ৬ টি ইসলামি দল বলে জানান শফিকুল আলম।

সংবিধান পরিবর্তন নাকি পুনর্লিখন রাজনৈতিক দলগুলো চায় সে বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কয়েকজন সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছেন। আবার আরেকজন বলেছেন, ফ্রেমওয়ার্কটা রেখে সংবিধান নতুন করে লেখা যায়। এ নিয়ে আরও বাস্তবসম্মত মতামত প্রধান উপদেষ্টা চান। গণফোরামের ক্ষেত্রেও একই বিষয়।

কোন ক্রাইটেরিয়াতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি উপদেষ্টা কাউন্সিল বলতে পারবেন।

বর্তমান সরকারের সময়কাল নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল বক্তব্য দেয়নি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কোন বৈঠকে সময় নিয়ে কিছু বলেনি। সবাই বলছেন আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। আস্থা প্রকাশ করছেন। সবাই ধৈর্য ধরছেন। মনেহয় পুরো জাতি ধৈর্য ধরছেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, সংবিধান সংশোধন নিয়ে অনেক প্রস্তাবনা এসেছে। একটা হল সাংবিধানিক পরিষদ। সংবিধানে যে সংশোধনী হয়েছে সেগুলো যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় সেক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে কি করে পরিবর্তন হবে।আবার রাজনৈতিক দলগুলো পরামর্শ দিয়েছেন।

কেউ কেউ গণভোটের কথা বলেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবার কেউ কেউ সংবিধান কমিশন করে কি ধরনের পরিবর্তন আসবে, সেটা ধরে পরবর্তী সরকার এসে অনুমোদন করবে৷ তবে এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব আসেনি। প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে লিখিত মতামত দিতে বলেছেন। সেগুলো স্টাডি করে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন অথবা পরিবর্তন, পরিমার্জন যেটার প্রয়োজন হয় সেটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

অপরাধীর মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘন না হয় সেই বিষয়েও মতবিনিময় সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানান মাহফুজ আলম।