রংপুরে বাড়িঘর-সম্পত্তি লুটপাটে নিঃস্ব, পুনরুদ্ধার চায় পরিবারটি
সিএস রেকর্ড, আরএস রেকর্ড, এসএ রেকর্ডসহ ডিজিটাল প্রিন্ট পরচায় নামজারি করা বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে স্থাপনার সরঞ্জামসহ অন্যান্য মালামাল লুটপাট করে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী এক প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ। বাড়িঘর-সম্পত্তি লুটপাটে নিঃস্ব পরিবারটি, সরকার বদলের পর এবার চান এর পুনরুদ্ধার।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ এ ঘটনায় একাধিকবার স্থানীয় মাতব্বর ও থানাসহ ফাঁড়িতে অভিযোগসহ আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আদেশ নিয়েও রক্ষা করতে পারেননি পৈতৃক ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার বৈরাতী হাট এলাকায়।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রসহ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বৈরাতী হাট বাজার ঘেঁষে মৃত আফাজ উদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত মতিয়ার রহমান পৈত্রিক অংশপ্রাপ্ত সম্পত্তিসহ বোনদের অংশের জমি ভোগদখল করে আসছিল। এরই মধ্যে প্রতিবেশী মৃত সফিয়ার মিয়ার ছেলে শাহাজাদা ও আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে কামরুলসহ তাদের অন্যান্য ওয়ারিশ গংদের সাথে মতিয়ার রহমানের ৬ শতক জমি (এওয়াজ) রদবদল হয়। এতে মতিয়ার রহমান চলাচলের রাস্তা বাদ দিয়েই শাহাজাদা গংদের ৬ শতক জমি নেন পূর্ব দিকে। এবং শাহাজাদা গং মতিয়ার রহমানের জমি ৬ শতাংশ নেন দক্ষিণ দিকে। এরপর থেকেই শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছিল উভয় পরিবার।
তবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রকরে শাহাজাদা ও কামরুল গং বিগত ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দিন-দুপুরে সন্ত্রাসী কায়দায় বহিরাগত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ মধ্যে হামলা ভাঙচুর, লুটপাটসহ রদবদলকৃত সম্পত্তিসহ বাড়তি আরও ৬ শতক জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন।
এই ঘটনায় তৎকালীন মিঠাপুকুর বৈরাতী হাট ফাঁড়িতে এজাহার দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি ভুক্তভোগী পরিবারটির। অবশেষে ফৌজদারি অপরাধসহ ১৪৪/১৪৫ ধারায় মামলা করেন অবসরপ্রাপ্ত মতিয়ার। যদিও বিচারাধীন অবস্থায় ফৌজদারি মামলা তদন্তাধীন থাকলেও ১৪৪/১৪৫ ধারার মামলাটি মতিয়ার রহমানের পক্ষে রায় আসলেও এখন পর্যন্ত দখল পাচ্ছে না সম্পত্তির।
ভুক্তভোগী মতিয়ার রহমান বলেন, আমার (এওয়াজ) রদবদলকৃত সম্পত্তির উপর স্থাপনার মালামাল এখন পর্যন্ত ব্যবহার করছে অপরাধীরা। আমরা তাদের শরিক অংশীদার না হওয়া সত্ত্বেও তারা আমাদের অংশীদার বানিয়ে বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেছে, যা হয়রানিমূলক।
মতিয়ার রহমানের স্ত্রী রোকসানা ফেরদৌস আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, স্বামীর এলপিআরএ যাওয়ার সমস্ত অর্থ দিয়ে ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়। আর সেই ভাড়া দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলতো আমাদের। এখন সেই সম্পত্তি হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। লুটপাট হওয়া বাড়িঘর সম্পত্তির পুনরুদ্ধার চাই।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মতিয়ার রহমানের বড়ভাই মকবুল হোসেনের ভূমিকা রহস্যজনক। স্থানীয়রা বলছেন, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাপট এবং মতিয়ার রহমানের আপন বড়ভাই মকবুল হোসেনের মধ্যে এই সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ কামরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখলে নিয়েছি। আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান রয়েছে। যদি বিজ্ঞ আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়, তাহলে তাদের প্রাপ্ত সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে সন্ত্রাসী কায়দায় বহিরাগতদের নিয়ে তাণ্ডবের বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি।
এবিষয়ে বৈরাতী হাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুজ্জামান বলেন, ইতোপূর্বে কী হয়েছে জানি না। তবে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি, অভিযোগ বা আদালতের আদেশ আসলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।