রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয়। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই ভবনটি বছরখানেক আগেই উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের বছর পেরোতেই এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এই কার্যালয়টি।
উদ্বোধনের পর থেকেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে কার্যালয়টি সরগরম থাকতো দিন রাত ২৪ ঘণ্টায়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জনরোষে পড়ে এই ভবনটি। উত্তেজিত জনতা সেদিন কার্যালয়টি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেই।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কার্যালয়টির বর্তমান অবস্থা দেখতে গেলে এমনই চিত্র পাওয়া যায়। যদিও বাহির থেকে গেইট দুটি আটকে রাখা হয়েছে তারপরও বাহির থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো উত্তেজিত জনতার কতটা আক্রোশের মুখে পড়েছিলো এই ভবনটি। ভাঙচুর ও আগুনের লেলিহান শিখায় কঙ্কালসার হয়ে পরেছে ভবনটির কাঠামো।
এদিন দেখা যায়, কার্যালয়টির মূল ফটক অক্ষত থাকলেও কর্মীদের প্রবেশের জন্য যে ফটকটি নির্ধারিত ছিলো সেটির কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে ককশিট ও বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ফটকটি। এক সময়ের ব্যস্ততম এই কার্যালয় এখন জনমানবহীন।
দলের মন্ত্রী-এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসা যাবার পথ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটি সবসময় ফাঁকা করে রাখা হতো। থাকতো পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। তবে এসবই এখন অতীত।
সড়কটি এখন ট্রাক মালিকদের দখলে। ফুটপাত দখল করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট। কার্যালয়টিতে প্রবেশের মত স্থানও আর অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী লীগের এমন আকষ্মিক পতনে মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে অতীতের খাতায় ফেলে দিচ্ছে তাদের যত সৌর্য-বীর্য।
কার্যালয়টির মূল ফটকের পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। এরকমই একটি সদ্য গড়ে উঠা চায়ের দোকানে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। বার্তা২৪.কম কে তিনি বলেন, 'এই রাস্তাটা সবসময় নেতাকর্মীরা দখল করে রাখতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপাচাপিতে দাঁড়ানোটাও ছিলো দুরুহ। এখন এখানেই চায়ের দোকানে গড়ে উঠেছে, সেখানে বসে চা খাচ্ছি।'
এই যে দোকান দিচ্ছেন, সামনে এতো ট্রাক দাড় করিয়ে রাখছে কেউ কিছু বলছে না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বার্তা২৪.কম কে বলেন, 'এইখানে তো আর আগের মত নেতাকর্মীর আসে না। পুলিশও এইদিকে আসে না। রাস্তাটা খালিই থাকে তাই ট্রাক এখানে এনে রেখে দেয়। আমিও দোকান দিছি। এখনো কোন সমস্যা হয়নি।'
এর আগে গত ৬ আগস্ট কার্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুর করে নিয়ে যায় চেয়ার টেবিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আসবাবপত্র। পরে আগুন লাগিয়ে দিলে পুড়ে যায় সব কিছু। সে পোড়া ধ্বংসস্তূপ খুঁজে কিছু মানুষ বের করছেন লোহা ও অন্যান্য ধাতপ পদার্থ।
স্টিলের স্ট্রাকচারের উপর নির্মিত এই আধুনিক স্থাপত্যের ভবনটি আগুনের তান্ডবে কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে গেছে দ্বিতীয় তলার সেমিনার হলের স্টেজও। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পায়নি একমাত্র লিফটটিও। পুড়ে যাওয়া এসব জিনিস ভেঙে লোহাসহ ধাতপ অংশটুকু ভেঙে নিচ্ছিলেন টোকাইরা।
এর আগে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। তার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পরে এসব স্থাপনা।
এদিন, দুপুরের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁও ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা।