বিতাড়িত সরকারের দ্বারা নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে জার্নালিস্টস ফর জাস্টিস (জে ফর জে) নামের একটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন আহবায়ক কাজী জেসিন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক ও সংবাদকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো গত ১৫ বছরে কত সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা কেউ জানে না। আবার শুধু সাংবাদিকরা নিজেরাই নন, তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে পর্যন্ত মামলা, হামলা এবং হয়রানির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জেরে তাদের ওপর নেমে আসা নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে অনেক সাংবাদিককে দেশান্তরিত হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশে বসে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কারণে সাংবাদিক তাসনীম খলিল, জুলকারনাইন সায়ের, কনক সরওয়ারসহ আরও অনেকের পরিবারের সদস্যরা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন ক্যাডারদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
জেসিন বলেন, আমার দেশ, দিগন্ত টিভিসহ অনেক সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; অনেক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সংগঠনের উদ্দেশ্য এই ধরনের নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা, যাতে তারা যথাযথ বিচার ও ক্ষতিপূরণ পায়।
‘একইসাথে আমরা অন্তর্র্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারের সময় যাতে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত কাজের জন্য নিপীড়নের শিকার না হয় এবং হয়ে থাকলে তারা যেন যথাযথ বিচার পান সেজন্য আমরা কাজ করে যাবো,’ বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জে ফর জে’র যুগ্ম আহ্বায়ক আলফাজ আনাম ও সদস্য জাহেদ চৌধুরী, অলিউল্লাহ নোমান, মারুফ মল্লিক ও এহসান মাহমুদ।
জাহেদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোতে সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনাগুলো এই ফোরামের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, চাকরি হারানো সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে আমরা সোচ্চার থাকবো এবং নির্যাতিত সাংবাদিকরা যাতে ন্যায়বিচার পান তা নিশ্চিত করতে সরকার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা নিরলসভাবে কাজ করবো।
ভুক্তভোগী আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাহেদ চৌধুরী।
ছাত্রদের ত্যাগের কল্যাণে আমরা আজ স্বাধীনভাবে কথা বলছি। তাদের ত্যাগ ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না উল্লেখ করে নোমান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আইন লঙ্ঘন করে অনেক গণমাধ্যম জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করতে না পারে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অতীতে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় থেকে সাংবাদিকতার জন্য কালো অধ্যায় শুরু হয় উল্লেখ করে মারুফ বলেন, গত ১৫ বছরে তা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ওই সময়ে দলদাস সাংবাদিকতার নজির বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায় না। আমরা এই কালো অধ্যায় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকতার জন্য সুস্থ একটা পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই। আশার কথা যে, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে মিডিয়া সংস্কারের জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। গণমাধ্যমকে পদলেহী মাধ্যম হওয়া থেকে বের করে আনতে হবে।
এহসান মাহমুদ বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।