আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ৮ সদস্য সহ ১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক ও সকল শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। 

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ৮০০ মানুষ জীবন দিয়েছেন। তাদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকের সংখ্যা ২০০ জন।তাই এটাকে শুধুমাত্র ছাত্র গণঅভ্যুত্থান না বলে ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান হিসাবে উল্লেখ করতে চাই। তাদের এই আত্মত্যাগকে আমরা কখনো ভুলব না। একই সঙ্গে আমরা পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের সকল অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৫ লাখ কোটি টাকা। আর এই ১৫ বছরে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপেছে ১৮ লাখ কোটি টাকার বিদেশী ঋণের বোঝা। এই টাকা ফেরত আনাসহ দেশের মানুষকে বিদেশী ঋণের বোঝা মুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মজুরি বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বদ, নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য, অন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলত ব্যবস্থা না নেয়া সহ বিভিন্ন দাবীতে আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছে। কোথাও কোথাও কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমারা দেখেছি বহিরাগতরা শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আমরা গার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনদের ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাদের দাবিগুলো হলো-

১. অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ৮ সদস্য সহ ১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক ও সকল শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. নিহত ফেডারেশনের ৮ সদস্যের পরিবার ও সকল শ্রমিক পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. ফেডারেশনের আহত ৫০ সদস্যসহ সকল আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গত মজুরী আন্দোলনে ২০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩টি সহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. প্রত্যেক কারখানায় ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।

৬. যে সকল কারখানার শ্রমিকেরা ইতিমধ্যে মিডলেভেল ম্যানেজমেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. বেআইনীভাবে শ্রমিকদের ব্লাক লিস্ট (কালো তালিকা) করা বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে ব্লাক লিস্টকৃত তালিকা বাতিল করতে হবে।

৮. গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৯. শ্রমিক সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে হবে।

১০. কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।

১১. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং পরিচালনায় সকল বাধা দূর করতে হবে।

১২. ৪২ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

১৩. কোন কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে শ্রমিক প্রতিনিধিদেরসহ দ্রুত সামাধান করতে হবে।

১৪. দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পিত্তি করতে হবে। 

১৫. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা'কে সংস্কার করতে হবে।