জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৭১ শতাংশ মনে করেন বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে এবং ১২ শতাংশ মনে করেন দেশ ভুল পথে রয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘পালস সার্ভে ২০২৪: জনগণের মতামত, অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি সদ্য প্রকাশিত সমীক্ষায় এতথ্য উঠে এসেছে। টেলিফোন-সমীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব জেলা থেকে মোট ২৩৬৩ জন নারী-পুরুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
‘অভ্যুত্থানের চল্লিশ দিন: মানুষ কি ভাবছে?’ শিরোনামের এ উন্মুক্ত আলোচনা সভায় গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আগস্ট মাসে রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মনোভাব নিয়ে বিআইজিডি'র করা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জরিপের ফলাফল সবার সামনে তুলে ধরেন বিআইজিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম হাসান,।
এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মির্জা এম. হাসান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মামুন আব্দুল্লাহি; কর্মসূচি বাস্তবায়ন শাখার সদস্য রওনক জাহান এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ আরও অনেকে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, সুষ্ঠু গণতন্ত্র অনুশীলন করতে হলে গ্রহণযোগ্য জনমত যাচাই জরিপ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে নাগরিকদের কি ধরণের ধারণা বিদ্যমান, তার একটি পূর্ণচিত্র চিত্র তৈরি করতে আমরা এবছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নিয়মিত এধরণের জরিপ পরিচালনা করব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জরিপের ফলাফল দেখাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যাত্রা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই ইতিবাচক। আমরা পূর্ববর্তী ইতিহাসে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এ ধরনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখেছি। অন্যদিকে, আমরা কিন্তু হতাশাও দেখেছি। নাগরিকেরা সংস্কার চায়, কিন্তু প্রকৃত সংস্কার তখনই সম্ভব যখন আমরা আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করব।
জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ২৩৬৩ জন উত্তরদাতার ৭১ শতাংশ মনে করে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে এবং ১২ শতাংশ বিশ্বাস বাংলাদেশ ভুল পথে রয়েছে। এই সমীক্ষার ফলাফলগুলোর সাথে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিআইজিডি-দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফলের অনেকটাই পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, যেখানে মাত্র ৪৩ শতাংশ লোক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন এবং ৪১ শতাংশ হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। আগস্টের পালস সমীক্ষার ফলাফলে জনগণের মধ্যে যে রাজনৈতিক আশাবাদের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেটি সম্ভবত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আশাবাদের ভিত্তিতে প্রাপ্ত, তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নয়।
অনুরূপভাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের গতিপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ সঠিক পথে যাচ্ছে এবং ২৭ শতাংশ বলেছেন দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। বিপরীতে, জানুয়ারি ’২৪ এর সমীক্ষায় মাত্র ৩২ শতাংশ আশাবাদী ছিলেন এবং ৬২ শতাংশ বাংলাদেশে অর্থনীতির গতিপথ সম্পর্কে হতাশ ছিলেন।