নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ভয়, ঘুম আসেনা জেলে পল্লীতে

  • মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘরের সাথে নদীর পানি ছুইছুই অবস্থা, ছবি:বার্তা২৪.কম

ঘরের সাথে নদীর পানি ছুইছুই অবস্থা, ছবি:বার্তা২৪.কম

জেলে পল্লীর পলোদাসি। দুর্যোগে সহায় সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক ঝুপড়ি ঘরে। যেখানে রান্না সেখানে খাওয়া আর সেখানেই থাকা। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন চু জেলে পল্লীতে। শারীরিকভাবে অসুস্থ স্বামীকে ভর করে থাকতে হয় স্ত্রীর উপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্বামী থাকতে ও পরিবারের সিঙ্গেল মাদার পলোদাসি। বয়স হলেও পরিবারের হাল ধরেছেন সে।

পলোদাসির মেয়ে নমিতা রানী। তার ও অবস্থা একই। মৃরগি রোগ হওয়া স্বামীকে নিয়ে তার ঘরের এক পাশেই বসে আসেন তিনি। চোখে মুখে অসহায় বোবা কান্না। একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই পল্লীতে। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে আছে তারা।

বিজ্ঞাপন

তাদের ঘরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চুনা নদী। তারই কূল ঘেসে কল্পনা রানীর বাড়ি। স্বামী ছেলে মেয়ে নিয়ে তার সংসার। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই খাওয়া দাওয়া বন্ধ। চুলায় পানি উঠায় বন্ধ হয়ে যায় রান্নাবান্না। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে বসে আছেন ঘরের বারান্দায়। ছেলেকে কোলে নিয়ে বিষন্ন মনে বসে আসেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।

কল্পনা রানী বার্তা২৪কম’কে বলেন, রাতে আমরা ঘুমাতে পারিনি। কখন না জানি জোয়ারের পানিতে আমাদের ভাসায় না নিয়ে যায়। আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে রাতে বসে বসে রাত জেগে পার করি। দুর্যোগের সময় খুবই ভয়ে ভয়ে রাত পার করি। কখন না জানি ভেসে যায় এই ভয় কাজ করে সব সময়। আমোদের যদি সরকার কেনো জায়গায় জমি দিয়ে ঘর করে দিতো আমরা সেখানে গিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করতে পারতাম।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে থাকে তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওইসময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে যেয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায় সম্বল হারিয়ে এই পল্লীতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলে ও ভাগ্যের পরিবতর্ন ঘটাতে পারেনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দূর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার।

চুনা নদীতে নৌকা বেয়ে মাছ ধরছিলো হৃদয়। বাবার সাথে মাছ ধরতে গিয়েছে নদীতে। নৌকা চালাতে চালাতে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, বাবার সাথে ছোট থেকে নদীতে আসি মাছ ধরতে।। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক। তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্তায় জীবনের কাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই ছোট থেকে বয়স্ক সকল বয়সী উপকূলে থাকা মানুষের। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় তার বসতবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় রেমাল বলে কথা না! যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে দিনের পর দিন চুলাতে আগুন দিতে পারিনি এই জেলে পল্লীর মানুষ। ওইসময় শুকনা খাবার খেয়ে থাকা লেগেছে। এমনও দিন গেছে পানি খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নামতে হয়েছে তাদের।