শিশু হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি- বার্তা২৪.কম

ছবি- বার্তা২৪.কম

ছোট্ট হাতে ক্যানোলা লাগানো, কিছুটা লাল হয়ে ফুলে আছে  সে স্থানটি। সেখানে নীডেলের মাধ্যমে স্যালাইন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন দুই নার্স। কিন্তু উমায়িরের নড়াচড়া ও কান্নায় কিছুতেই লাগানো যাচ্ছিল না স্যালাইন। মা নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলেও কান্না থামছিল না তার। দূর থেকে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখছিলেন বাবা শুক্কুর আলী।

যখন সবাই ব্যর্থ তখন এগিয়ে গেলেন বাবা। কোলে তোলে নিলেন প্রায় দশদিন ধরে ডেঙ্গুতে ভোগতে থাকা ছোট্ট সন্তানকে। উমায়িরের মাথা তার কাঁধের উপর রেখে পিঠ চাপড়ে দিচ্ছিলেন তিনি ধীরে। এই ফাঁকে কান্না কিছুটা কমে আসলে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন নার্স। আবারও শুরু হয় কান্না।

বিজ্ঞাপন

পরে বাবা শুক্কুর আলী সন্তানকে কোল থেকে নামিয়ে স্যালাইনের প্যাকেটটা এক হাতে উঁচু করে ধরেন, অন্য হাতে উমায়িরের হাত ধরে বের হন হাঁটতে। ওয়ার্ডের দুই পাশ সারি সারি বেড, তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে করিডোর। সে করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে নার্সের টেবিল পার হয়ে চলে যান প্রায় ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তে, আবার সেখান থেকে ফিরে আসেন নিজের বেডে। এখন কিছুটা স্থির হলেও কান্নার ভাবটা রয়ে গেছে তার চেহারায়। 

উমায়ির, শুক্কুর আলী ও সায়মা হক দম্পতির ২ বছরের সন্তান। এই দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে উমায়ির ছোট। প্রায় ১০ দিন আগে জ্বর আসলে স্বাভাবিক ভেবে খুব একটা পাত্তা দেননি তারা। ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে খাওয়াচ্ছিলেন। কিন্তু দুই দিনেও জ্বর না কমায় করান ডেঙ্গু টেস্ট, সেখানে ডেঙ্গু পজিটিভ আসলে ৭ দিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে ভর্তি করান হাসপাতালে। তারপর থেকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডটি তাদের ঠিকানা।

শুক্কুর আলী দম্পতি থাকেন শ্যামলীতে ভাড়া বাসায়। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট, আগামী মাসেই চিন্তা ছিল বাসা পরিবর্তনের কিন্তু এর আগেই সন্তানের ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ৭ দিন হয়ে গেল হাসপাতালে আছি। এখন অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। যদি আরেকটু উন্নতি করে তাহলে এক/দুই দিনের মধ্যেই রিলিজ দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। 

শুক্কুর আলী বলেন, ১০ দিন আগে সন্ধ্যা থেকেই শরীর কিছুটা গরম গরম মনে হচ্ছিলো। রাত হতেই প্রচণ্ড জ্বর  আসে। তখন নিচের ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনে খাওয়ায়। তারপরও জ্বর না কমায় এখানে নিয়ে আসি। পরে ডেঙ্গু ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করাই। এখন তো দেখতেই পাচ্ছেন অবস্থা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,  চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটি ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৮৯ জন রোগী। যেখানে শুধু সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২০৩৩ জন। যেখানে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ভর্তি হয়েছিল ৪৮৫ জন।

সন্তানের ডেঙ্গু নিয়ে দুই দিন আগে ভর্তি হয়েছেন আছমা বেগম। তার ৭ বছর বয়সী মেয়ের জ্বর আজ এক সপ্তাহ। তিন দিন ধরে ঔষধ খাওয়ানোর পরও যখন কমছিল না জ্বর, তখন মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে আসেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। ডেঙ্গু টেস্টে পজিটিভ আসলে ভর্তি হন হাসপাতালে।

আছমা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুই দিন আগেই জানলাম যে জান্নাতের ডেঙ্গু হইছে। এরপরেই ডাক্তার বলছে ভর্তি হইতে, এখন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। জ্বর এখন কিছুটা কমছে তবে প্লাটিলেট কমে গেছিল। আজকের টেস্টে কিছুটা বাড়ছে। এখন আরও কয়েকদিন থাকা লাগবে হাসপাতালেই।

এবার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কেমন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক সিনিয়র নার্স বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই মাসে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। তবে এখনো খুব বেশি না। তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে।

সরেজমিনে হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরেও পাওয়া গেছে একই চিত্র। এবছর রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় আলাদা কোন ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়নি। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সবগুলো ওয়ার্ডেই। রোগী আসা ও বেড খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি করা হচ্ছে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরত মাসুদুর রহমান বলেন, এবছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম, তাই আলাদাভাবে ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। তবে প্রতিদিনই আমরা ১০-১৫ জন করে রোগী পাচ্ছি। যারা আসছেন তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করাচ্ছি।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. এস এম খালিদ মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, এখনো এই বছর রোগীর প্রকোপ ঐভাবে বাড়েনি। আমরা রোগী কম পাচ্ছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েকগুণ  কম এবার রোগীর সংখ্যা।

তিনি বলেন, আমাদের ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি আছে।  রোগীর প্রকোপ বাড়লেও আশা করি আমরা চিকিৎসা দিতে পারবো। আমাদের একটি ওয়ার্ডের রেনোভেশনের কাজ চলছে, যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ে তাহলে সেই ওয়ার্ডটি ডেডিকেটেড রাখবো। আমরা মিডিয়া সেন্টার নির্মাণ করছি, সেখান থেকেও আপনারা সমস্ত তথ্য নিতে পারবেন।