পূর্বাচল প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তরা ১২ দফা দাবি নিয়ে রাজউকে মানববন্ধন
পূর্বাচল প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তরা বৈষম্যের বিরোধের দাবি নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনের সামনে মানবন্ধন করেছেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্তরা অবিলম্বে আবেদন জমা নেয়া ও আবেদনকৃতদের বৈষম্যহীনভাবে প্লট বরাদ্ধের দাবি জানান।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে 'পূর্বাচল আদিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত সমন্বয়ক কমিটির' ব্যানারে প্রায় কয়েকশ মানুষ এই মানববন্ধন ও রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
এসময় মানববন্ধনে আসা ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, আমরা যারা প্লট পাবার জন্য টাকা জমা দিয়েছিলাম তাদের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে ৫ কাঠার প্লটের জন্য ৩০ হাজার টাকা করে জমা নেয়া হয়েছিল। দুই কিস্তি জমা দিয়েছি। কিন্তু গাজী (গোলাম দস্তগীর গাজী) আমাদের ৫ কাঠার প্লট তিন কাঠা করেছে।
জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করে তারা বলেন, আমাদের পাচ কাঠার প্লটগুলো পূর্বমূল্যমানে চাই। আর যারা আমরা তিন কাঠার প্লটগুলো পাই নাই তাদের টাকা জমা নিয়েও দুই কাঠা করা হয়েছে। কিন্তু সেই প্লটগুলোও জালিয়াতদের মাধ্যমে ডিক্লেয়ারেশন দেয়া হয় নাই। এই সরকারে কাছে দাবি জানাচ্ছি, আমাদের প্লটগুলো আমাদের আইনিভাবে বুঝিয়ে দেখা হউক।
আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক মোহাম্মদ দুলাল হোসেন বলেন, গত সরকার ১৪০০ প্লট দিয়েছে। সেই প্লটগুলোর মধ্যেও ভুয়া প্লট দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দালাল চক্র একেক জনকে ১০০/২০০ করে প্লট দিয়েছে। তাদের এই প্লট বাতিল করতে হবে।
পূর্বাচলের আদিবাসীরা গত ৩০ বছর যাবত ক্ষতিগ্রস্ত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের এই এলাকার লোকজন গত ৩০ বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত। খুবই দুর্দশার মধ্যে আছে, অসহায় জীবন যাপন করতেছে। যার দালান ছিলো সেও টিনের ঘরের মধ্যে জীবন যাপন করতেছে। তাই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি করি, অনতিবিলম্বে আমাদের দাবি পূরণ করুন।
পরে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের আওতাধীন আদিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
১। ১৩/এ ধারায় হাসিনা পরিবারসহ আওয়ামী নেতাকর্মীদের নামীয় বরাদ্দকৃত সকল প্লট বাতিল করতে হবে।
২। আদিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা আবেদন করতে পারে নাই। তাদেরকে নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
৩। বৈষম্যহীন ভাবে আদিবাসীদের নামে ৩ কাঠা ৫ কাঠা সারে ৭ কাঠা ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দিতে হবে।
৪। যৌথ নামীয় বরাদ্দকৃত প্লট একক নামে আলাদাভাবে প্লট বরাদ্দ দিতে হবে। ক, খ ও গ এয়ার্ড যাদের আছে তাদের আলাদা প্লট দিতে হবে।
৫। মূল আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কথা ছিলো উন্নয়নমূলক কাজ বাবদ প্রতি কাঠা ২৫০০০ হাজার টাকা কিস্তি নয় উন্নয়ন ফি হিসেবে প্লট রেজিষ্ট্রেশন এর পূর্ব পর্যন্ত পরিশোধ করিতে পারিবে। সেটা বহাল রাখতে হবে।
কালো আইন তৈরি করে মূল আদিবাসীদের ক্ষেত্রে কাঠা প্রতি ২৫০০০ হাজার টাকার স্থলে অতিরিক্ত ২০০০০০ লক্ষ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তা বাতিল করতে হবে। এবং পূর্বের ধার্যকৃত ২৫০০০ হাজার টাকা বহাল রাখতে হবে।
৬। উদাহরণ স্বরুপ ঝিলমিল উত্তরা ৩য় প্রকল্পে ১৬ শতাংশ জমির ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট দেওয়া হয়েছে এবং বাড্ডা প্রকল্পে ৮ শতাংশ জমির ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্লট দেওয়া হয়েছে। পূর্বাচল ক্ষতিগ্রস্তদের বেলায় বৈষম্য কেন? আমাদের এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
৭। ছিন্নমূল আদিবাসী যাদের জমি নাই ঘরবাড়ি নাই তাদের মাঝে শুধু মাত্র ডেভেলপমেন্ট খরচের বিনিময়ে ফ্ল্যাট দিতে হবে।
৮। বৈষম্য দূর করে জলসিড়ি এবং বসুন্ধরা আবাসন প্রকল্পের সাথে মিল রেখে বিল্ডিং করার ছাড়পত্র /প্ল্যান দিতে হবে।
৯। উন্নয়নের নামে ১৭ বছরে ১৪২ তলা ভবন স্ট্যাডিয়াম এবং রাস্তা সহ উন্নয়নের নামে যে সকল দুর্নীতি করা হয়েছে। তদন্ত করে তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০। প্রয়োজন হলে আদিবাসীদের /ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নতুন হুকুম দখল করে /একোয়ার ভুক্ত করে আদিবাসী ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট বরাদ্দ দিয়ে দীর্ঘ দিনের দুঃখ- দুর্দশা দূর করতে হবে।
১১। ৫ কাঠা আবেদন করার ৩ কাঠা দেওয়া হয়ে সেইগুলো ৫ কাঠা দিতে হবে।
১২। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। স্কুল কলেজ মাদ্রাসা মসজিদ থানা আইন প্রশাসন বিদ্যুৎ পানিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা করে দিতে হবে।