মাথায় ৭ বুলেট, চিকিৎসার সামর্থ্য নেই এনামুলের

  • কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুড়িগ্রামে আন্দোলন করাকালে গুলিবিদ্ধ হন এনামুল। তার মাথায় এখনো ৭টি গুলি আছে। তবে এসকল গুলি বের করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে পারছে না তার পরিবার।

জানা যায়, ৪ আগস্ট কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা শহরে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। বিকেল ৩ টার দিকে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল থানার সামনে আসলে সেটিকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। এতে ঐ মিছিলে থাকা প্রায় ২০ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর নিরাপত্তা বিবেচনায় আহতদের বাড়িতে নিয়ে এসে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করেন পরিবারের সদস্যরা। ঐ ঘটনায় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন এনামুল হক (২৫) । মাথা, হাত-পা ও পিঠে ৫০ টির মতো রাবার বুলেটে বিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি হন ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর নিরাপত্তার অভাবে এনামুলকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে চলতে থাকে চিকিৎসা।

বিজ্ঞাপন

এনামুক হকের বাড়ি ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামে। ঐ গ্রামের মৃত বেলাল হোসেন ও মোছাঃ আমিনা বেগমের সন্তান তিনি। পেশায় দিনমজুর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যা সন্তানের পিতা। বাবা মারা যাওয়ার পর ৬ সদস্যের সংসারের হাল ধরেন এনামুল। তবে আহত হওয়ার পর এখন তাদের পরিবারের হাল ধরার মতো কেউ নেই।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে এনামুলের বাড়ির দুরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। প্রান্তিক আহত যুবকের গল্প পোঁছায়নি অনেকের কাছে। বাড়ানো হয়নি কাঙ্ক্ষিত সহায়তার হাত। শুরুর দিকে আত্মীয় স্বজন, এলাকাবাসী ও কিছু শিক্ষার্থীদের সহায়তায় চিকিৎসা চললেও এখন অপারেশনের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারছেনা পরিবারটি।

মাথার এক্স-রে রিপোর্ট দেখাতে দেখাতে এনামুল হক বলছিলেন, আমার মাথায় এখনও ৭ টি রাবার বুলেট আছে। হা তে ১ টা ও পায়ে ৫ টা আছে। সেগুল এখনও বের করা যায়নি। ডাক্তার বলেছে সেগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নাই। তাই অপারেশন হচ্ছেনা। তবে এখনও ওষুধ খেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার সারা শরিরে ৫০ টির মতো রাবার বুলেট লেগেছিলো। হাসপাতালে যাওয়ার পর ১৫ টা বের করে দেয় ডাক্তার। তারপর বাড়িতে এসে ডাক্তার ডেকে বাড়িতেই বের করা হয় ১৬ টা। রংপুরে যাওয়ার পর সেখানে বের করা হয় ৩ টা। মাথায় ৯ টা ছিলো, ২ টা বের করা হয়েছে। বুলেট মাথার ভেতরে থাকার জন্য মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা সহ ঝিমঝিম করে। ডাক্তার বলেছে অপরেশনে বেশি দেরি করলে ঝুঁকি বাড়বে।

এনামুল হকের মা মোছাঃ আমিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর এনামুলের কামের ট্যাকা দিয়া সংসারটা চলছিলো। এমন অবস্থায়ত কামে যাতি পারেনা। অপারেশনের জন্যও ট্যাকা নাগে। অপারেশন না করলে আরও ক্ষতি হয় নাকি সেই চিন্তায় আছি। কার কাছে গেলে সাহায্য পামো একনা কইবেন?