সিন্ডিকেটের মূল হোতাসহ পরিকল্পনাকারী, নিয়ন্ত্রণকারীর বিচার দাবি
বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেই সময় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়েছে। তাই সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনসহ সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী, নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ সরকারে জড়িত মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেট চক্রের পুনরায় তৎপরতা বন্ধে' আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত এফডাব্লিউসিএমএস অনলাইন পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অনলাইন পদ্ধতি এবং মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত ইপেক্স পদ্ধতি বা ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করার দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করা হয়। যার মূলহোতা ছিলেন বায়রার সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন ও কাজী মফিজুর রহমান। এই হোতাদের সহযোগিতা করতেন তখন মন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বায়রাকে একটি দলীয় সংগঠন হিসেবে ব্যবহার করতেন। সিন্ডিকেটে রহুল আমীনের সঙ্গে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেইসময় ৫০ হাজার শ্রমিক প্রতারণা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ফলে এই সেক্টরের উদ্যোক্তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত এমওইউতে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির সিলেকশন করার জন্য মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কিন্তু কোনো প্রকার ক্রাইটেরিয়া ছাড়াই ঘুষের মাধ্যমে রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতুশ্রী আমিন নিজেদের পছন্দ মত রিক্রুটিং এজেন্সি সিলেকশন করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরও কিছু দাবি তুলে ধরে ফখরুল ইসলাম বলেন, সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিন্ডিকেটে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। যদি সিন্ডিকেট করার পুনরায় সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের সাথে পূর্বের সরকারের কোনো পার্থক্য থাকবে না। দুই দেশের এমওইউ সন্নিবেশিত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করার সুযোগ বাতিল করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি সিলেকশন করবে নিয়োগকর্তা। সিন্ডিকেট মুক্তভাবে সকল এজেন্সি কম খরচে বা বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল অনলাইন পদ্ধতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যে সকল কর্মী যেতে পারেনি, তাদেরকে কম খরচে সিন্ডিকেট মুক্তভাবে পুনরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর দাবি করছি। নেপালসহ অন্যান্য ১৩টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী গ্রহণ করে ঠিক বাংলাদেশ থেকেও একই প্রক্রিয়ার শ্রমিক প্রেরণের দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র সদস্য বিএনপি নেতা খন্দকার আবু আশফাক বলেন, বায়রা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি ব্যবসায়ী হিসেবে এখানে এসেছি। আমি বলবো বায়রায় কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। যদি কোনো সিন্ডিকেট থাকে, আমরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো। সিন্ডিকেট না থাকলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে খরচ হবে দু'থেকে তিন লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব নূরুল আমীন, কার্যনির্বাহী সদস্য কামাল উদ্দিন দিলু ও সদস্য হক মাজহারুল ইসলামসহ প্রমুখ।