শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণসহ ৭টি দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
শনিবার (৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো বৈষম্য থাকা যাবে না। এখন বর্তমানে শিক্ষার মর্যাদা নেই বললেই চলে। শিক্ষকদেরও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। সেজন্য আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, বিগত সরকার শিক্ষার মান তলানিতে নিয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচুর দুর্নীতি করেছে। পেটোয়া বাহিনী দিয়ে শিক্ষকদের উপর নির্যাতন করেছে। শিক্ষকদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে।
অন্তবর্তীকালিন সরকারে কাছে অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের এই দাবি গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি গুলো হলো-
১. শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী বৈষম্য দূরীকরণে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করতে হবে। ২. সরকারি শিক্ষকদের সমপরিমাণ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে। ৩. শিক্ষা প্রশাসনে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রেষণে নিযোগ দিতে হবে। ৪. ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে শিক্ষকদের মর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে। ৫. চাকুরীর মেয়াদ ৬৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। ৬. কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর ভাতা বোর্ড পুনঃগঠন করতে হবে। ৭. শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইউনূস মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. আহমেদ জামাল আনোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মুহম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান, অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাবেক মহাসচিব নজরুল ইসলাম, শিক্ষক নেত্রী অধ্যক্ষ নূর আফরোজ জ্যোতি প্রমুখ।
কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এসময় আটা ও ডিমের মূল্য উল্লেখ না থাকায় তিন ব্যবসায়ীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়া পৌর বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডলের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে লালন শাহ অটো ফ্লাওয়ার মিলের আটার প্যাকেটে মূল্য না থাকায় ১৫ হাজার টাকা, মিতুল ডিমের আড়তে বেশি দামে ডিম বিক্রির দায়ে ৫ হাজার টাকা এবং মেসার্স এ হাই এন্ড সন্সকে বেশি দামে ডিম বিক্রির দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সুচন্দন মন্ডল জানান, পণ্যের মোড়কে নির্ধারিত দাম উল্লেখ না থাকা এবং ডিমের দাম বেশি দামে বিক্রি করার দায়ে ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে তিন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসময় সদর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সুলতানা রেবেকা নাসরিন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১৭ ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া ওই দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের স্থাপিত কন্ট্রোল রুম।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ ৭ শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে হালুয়াঘাট সীমান্তবর্তী চারটি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপচে পড়ে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। পরে রাতেই বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোরাঘাট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
সূত্রগুলো আরও জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েক হাজার বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে পড়ে ও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌর শহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের উপরে তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুড়ের মাছ সব চলে গেছে, আজ সকাল ১১টার দিকে পানি কমতে শুরু করলে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুইটি অংশে পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এদিকে, জেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর। এর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে। ৭ ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোন খোঁজখবর নিতে পারিনি। ওইসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌছাতে পারেনি। তাছাড়া, ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে আরও সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও প্রায় টানা দুই ঘন্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি আবার বেড়ে গেছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয় নারী-শিশুসহ প্রায় ৭ শতাধিক লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া শতাধিক গরু ছাগলও আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য ১০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে। খাদ্য সহায়তা বিতরণ চলমান আছে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার সঠিক কোন তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, তাঁত শিল্পের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করবে সরকার। এই খাতের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটসহ যে সকল সমস্যা রয়েছে সেসব বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানে কাজ করা হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো লোকসান নয় অন্তত নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারে এমন পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। নরসিংদীর মত শিল্প এলাকায় বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনারও কথা জানান তিনি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে নরসিংদীতে বস্ত্র ও তাঁত সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ, নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী, পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।