ফেনীতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নেমেছে অর্ধেকে

  • মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ফেনীতে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যা, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনে জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপন ও পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ভাঙচুর ও নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে ফেনীতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে। জেলায় প্রতিমাসে ৩ হাজার ৩৫৯ জনের জন্মনিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ও ১ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিগত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও অর্জিত হয়নি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে জুলাই মাসে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে চট্টগ্রামে বিভাগে প্রথম ও দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে ছিল ফেনী। সাম্প্রতিক বন্যায় ও সরকার পতনের সময় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বেশকিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে এবং জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে গত দুইমাসে কম হলেও এখন ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় ভালো অবস্থানে যাওয়ার জন্য কাজ করছে বলে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই জনপ্রতিনিধি শূন্য ফেনী। যার প্রভাব পড়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রমে। সরকার থেকে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও ভোগান্তি যেন কাটছেই না সাধারণ মানুষের। জনপ্রতিনিধি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেয়েও স্বাক্ষর পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন। বর্তমানে প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করলেও সময়মত তাদের না পাওয়ার অভিযোগ আছে সাধারণ মানুষের।

কথা হয় ছাগলনাইয়া ঘোপাল ইউনিয়নের নিজামুল হকের সাথে। ৫ আগস্টের আগে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর সরকার পতন, বন্যা সবকিছুর জন্য দীর্ঘ ১ মাস পর জন্ম সনদ সংশোধন কর‍তে পেরেছেন তিনি। দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সংশোধন করতে দিলেও এরপর সেটি নিয়ে আসার মত পরিস্থিতি ছিল না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ইউনিয়ন পরিষদে বার বার গিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে। চেয়ারম্যান নেই তার সাক্ষর নিতে পারিনি। আমার মত এমন অবস্থা সবার।

নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের আব্দুল কাইয়ুম জানান, ভাগিনার জন্ম নিবন্ধন করতে দিয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নেই, দায়িত্ব পালনে শুরুর দিকে কেউই ছিল না। যার কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাজগুলো একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জন্ম সনদ হাতে পেয়েছি। সার্ভার জটিলতার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে।

ফেনী পৌরসভার আবরার চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টে পৌরসভাতে অগ্নিসংযোগের পরে কোন কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না। প্রশাসক নিয়োগ হয়েছে ঠিক তবে সবসময় ওনাকে পাওয়া যায় না। কারণ তিনি অন্যত্রও দায়িত্ব পালন করছেন। সবমিলিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ে বেশ জটিলতায় আছি আমরা।

এ বিষয়ে ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. সাদ্দাম হোসেন মজুমদার জানান, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ সব সরঞ্জাম, আসবাপত্র পানিতে ডুবে শেষ। যার কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে টার্গেটের ২০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। এখন স্থানীয় এক নেতা একটি ল্যাপটপ দিয়েছে যা দিয়ে কাজ চলছে। তবে অনেক ধীরগতিতে, পাশাপাশি অনেক সংশোধিত জন্ম-মৃত্যু সনদ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসিল্যান্ড রয়েছেন। সাক্ষর জটিলতা কিছুটা কমলেও পরিষদে যতদিন পর্যন্ত সরকারিভাবে সহযোগিতা আসবে না ততদিন আগের উদ্যোমে কাজ সম্ভব হবে না।

ফেনী পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, পৌরসভাতে আগে ৪টা কম্পিউটার দিয়ে কাজ করা হতো, এখন ১টা কম্পিউটার দিয়ে কাজ চলছে। আগে কাজে শৃঙ্খলা থাকলেও এখন উদ্যোক্তাদের বসার মতোও অবস্থা নেই ৷ ৫ আগস্ট পৌরসভাতে অগ্নিসংযোগের পর অনেক জন্ম-মৃত্যু সনদ পুড়ে গেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও ফেনী পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান, ফেনী জুলাই মাসে ১২তম ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১ম ছিল। এরপর আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, পরবর্তীতে বন্যার কারণে আগস্ট মাসে কোন কাজই করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে ফেনী সারাদেশে অনেক পেছনে ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগের পর ঘুরে দাঁড়ানোর কাজ করছি।

তিনি বলেন, বন্যায় ফেনী জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে পৌরসভাগুলোতে নিবন্ধন ভালো হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে, তারা জন্ম নিবন্ধনের কাজ চলমান রেখেছে। আগামীতে যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণে সবাই কাজ করছে।