সেতু উদ্বোধনের আগেই দেবে যায় ৪ পিলার, ৩ মাস পর ধস

  • মাসুম বিল্লাহ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সেতু উদ্বোধনের আগেই দেবে যায় ৪ পিলার/ছবি: বার্তা২৪.কম

সেতু উদ্বোধনের আগেই দেবে যায় ৪ পিলার/ছবি: বার্তা২৪.কম

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা খেয়াঘাট এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ৩০ লাখ টাকার সেতুর অর্ধেক অংশ ধসে গেছে নদীতে।

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) সকালে সেতুর উত্তর দিক থেকে এই অর্ধেক অংশ স্রোতের টানে ভেঙে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের উদাসীনতা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের দায়সাড়া কাজের জন্যই সেতুটি ধসে বিলিন হয়ে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বিজ্ঞাপন

এর আগে চলতি বছরের ২৪ জুন রাতে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হওয়া এই সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যায়। সে সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটির চারটি পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় প্রকল্পটির কার্যকারিতা এবং পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় সচেতনমহল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। সেখানকার নদীর দুই পাশে হরিপুর-বেলকা ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। ওই খেয়াঘাট দিয়ে ওই দুই ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ মালামালসহ যাতায়াত করতেন নৌকা করেই। নৌকা পারাপারে নানা কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অসুস্থ রোগী এবং স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ মানুষ। পরে সর্বসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ভোগান্তি নিরসনে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। এডিপির ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেতুটির নকশাও করে উপজেলার এই দফতরটিই।

এলজিইডি সুত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের এই সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। কাঠের এই সেতু নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটার ছানা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ।

২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির শুরু হওয়া নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৩ সালের মে মাসে।

কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়েও কাজ না করেই দফতরের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে বিল উত্তোলন করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। তখনও সেতুর কোনো পাশেই দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং। এছাড়া সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল কাঠ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু করলে তা শেষ হয় জুনের মাঝামাঝি সময়ে। কিন্তু কাজের মান অতি নিম্নমানের হওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এর কয়েক দিনের মধ্যেই ২৪ জুন রাতে সেতুর মাঝখানের চারটি পিলার দেবে যায়। দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত ওই সেতু এতো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন এলাকাবাসী।

পরে পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনার তিনদিন পর ২৭ জুন বিকেলে দেবে যাওয়া সেতুস্থল পরিদর্শন করেন সদ্য বদলী হয়ে যাওয়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ও কাজ বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট দফতরের উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ।

ওই সময় সেতু পরিদর্শন শেষে ইউএনও তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, উদ্বোধনের আগেই সেতুর চারটি পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উদাসিনতা কিংবা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।

কিন্তু পিলার দেবে যাওয়ার পরেও ওই সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছিলেন উপজেলার বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। তবে, এর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নদীতে স্রোত বারার সাথে সাথে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটির ওপর দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাদের। এরপর নদীতে দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি হলে পিলার দেবে যাওয়ার তিনমাস পর আজ (৮ অক্টোবর) সেতুর অর্ধেক অংশ ধসে বিলিন হয়ে যায় নদীতে।

সর্বসাধারণের দীর্ঘ প্রত্যাশিত এই সেতুর প্রথমে পিলার দেবে যাওয়া এবং পরে নদীতে ধসে বিলীন হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ।

এসময় চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, গত জুনে সেতুটির কাজ শেষ হতে না হতেই চারটি পিলার দেবে যায়। আর আজ মঙ্গলবার সকালে সেতুর অর্ধেক অংশ নদীতে ধসে গেছে। জনসাধারণের পূর্বের ভোগান্তি, ভোগান্তিই রয়ে গেছে। মাঝখান থেকে অপচয় হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

সেতু ধসে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে বলেন, "সেতুটি ধসে যাওয়ার বিষয়টি জানি আবার জানিও না। আজকে একজন জানাইলো সেতুটি নাকি ভেঙে গেছে। বিষয়টি সাব আ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বলা হয়েছে। দেখি কালকে সেখানে লোক যাবে"।