বাংলাদেশ নিয়ে গুজব ছড়ানোয় ভারতীয় টিভি চ্যানেলকে আইনি নোটিশ
জাতীয়
বাংলাদেশের রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ানোর কারণে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র নিউজ ও কন্টেন্ট বাংলাদেশে নিষিদ্ধ চেয়ে আইনি নোটিশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, রিপাবলিক বাংলা একটি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল। এ চ্যানেল স্যাটেলাইট সম্প্রচারের পাশাপাশি তাদের নিউজ, কন্টেন্ট ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, এ ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল নিয়মিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা প্রচার করে যাচ্ছে।
এ ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সম্প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া রিপাবলিক বাংলা টেলিভিশন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিডিয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে। এ ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। একই সঙ্গে ভারতীয় এই টেলিভিশন চ্যানেলটি বাংলাদেশের জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য আইনি নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে ভারতীয় চ্যানেল রিপাবলিক বাংলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই আইনি নোটিশে বিবাদী হিসেবে আছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইসিটি বিভাগের সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান।
রাজধানীর সড়কে চলাচলকারী মানুষের নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দীর্ঘ যানজট। আর এই যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কে চলা অটো রিকশার দাপট। যার নেই কোনো বৈধতা। ফলে তিন চাকার এই যানটিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণও হারাচ্ছেন অনেক মানুষ।
তবে এসব অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তার সুফল মিলছে না। মূলত সড়কে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই অটো রিকশা চালকরা রাস্তা পরিবর্তন করে পালিয়ে যায়। ফলে এসব অটো রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী ট্রাফিক পুলিশের সাথে অটো রিকশা চালকদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় লাখ খানেক অটোরিকশা ডাম্পিং করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অভিযান অব্যাহত থাকলেও নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খেতে হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। গেল সেপ্টেম্বর মাসে শুধু রাজধানীতেই ১ সপ্তাহে ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের তথ্য মতে, ২২ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সাত দিনের অভিযানে ৯ হাজার ৩০১টি অটোরিকশার বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেই সাথে ৪ হাজার ১৫৯টি রিকশার সিটও জব্দ করা হয়।
এছাড়াও অভিযানকালে ৬৬০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা ডাম্পিং করা হয় ও ৩টি রিকশার ব্যাটারি জব্দ করা হয় এবং ৫ হাজার ৮৩৯টি রিকশার বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নিয়মিত অভিযান পরিচালনার পরও দিন দিন রাজধানীর সড়কে বেড়েই চলেছে অটো রিকশার দাপট। যার ফলে নিয়মিত দুর্ঘটানাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার দাপট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ কি ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বা তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নজমুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ধরতে পারলে আমরা এদেরকে ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছি। রাজধানীর সড়কে এদের দাপট কমাতে আমরা নিয়মিত অভিযানও পরিচালনা করছি। অভিযানে এদেরকে ধরতে পারলে আমরা হয় ব্যাটারি ডাম্পিংয়ে দিচ্ছি আবার রিকশাও ডাম্পিংয়ে দিচ্ছি। একটা না একটা ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিচ্ছি।
এখন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কি পরিমাণ ব্যাটারি বা রিকশা ডাম্পিংয়ে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় লাখ খানেক ডাম্পিং করেছি। এই অবস্থাই চলছে আরকি, ইঁদুর বেড়াল খেলা চলছে।
এই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা যারা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা এসব অটোরিকশা তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কি পুলিশের কাজ? এদের পারমিশন (অনুমতি) আছে কিনা? এরা বৈধ কিনা? লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা? এগুলো দেখাতো আর পুলিশের কাজ না। এই কাজগুলো যাদের; তাদেরই এই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা একাধিক কর্মকর্তাদের কাছে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের কোনো বিষয়ে কথা বলার অনুমতি নেই বলে জানানো হয়। তারা বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে। যেকোন বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে গেলে অনুমতি লাগবে।
এদিকে দেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অন্যতম রাজধানী ঢাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জনশুমারির প্রতিবেদন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই শহর ও পাশ্ববর্তী জেলায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৫ জন। আর ২০১৪ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরোর বস্তি শুমারি অনুযায়ী, দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২২ লাখ এবং ঢাকা শহরের দুই সিটি করপোরেশনে মোট ৩ হাজার ৩৯৪টি বস্তিতে মোট ঘরের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজারের মতো। এ হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে ৬ লাখের মতো লোক এসব বস্তিতে বসবাস করেন, যা গত ১০ বছরের ব্যবধানে বহুগুণ বেড়েছে।
রাজধানীর বস্তিতে বসবাসকারী পুরুষের অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম এই রিকশা। ফলে বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের হিসেবের মতই অন্ধকারেই থেকে যায় রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশা ও অটোরিকশার সঠিক পরিসংখ্যানও।
সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে রিকশার সংখ্যা কত, এর সঠিক কোনো তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় আনুমানিক প্রায় ৪ লাখেরও অধিক অবৈধ রিকশা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়ও প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ অবৈধ রিকশা রয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।
এছাড়াও রাজধানীর সড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন নতুন রিকশার চলাচল। এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যা ব্যাটারিচালিত। শারীরিক কষ্ট লাঘব করতে রিকশাচালকরা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। ফলে মালিক পক্ষও রিকশায় যুক্ত করছেন ব্যাটারি। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। গেল (৭ নভেম্বর) বৃহস্পতিবারও রাজধানীর ডেমরা বামৈল এলাকায় অটোরিকশার ধাক্কায় ইউসুফ (৬৫) নামে এক ব্যক্তি প্রাণ হারান।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্বাসনে কি করা উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মামলা দিচ্ছে, কিন্তু এটা সমাধান নয়। আমাদের ঢাকা শহরের আশেপাশে অসংখ্য লোকাল গ্যারেজ রয়েছে। এই লোকাল গ্যারেজগুলো থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। উৎপাদন যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। গ্যারেজগুলো থেকে অবৈধভাবে উৎপাদন করা হয়, সেজন্য গ্যারেজে অভিযান চালাতে হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশার যে সরঞ্জামগুলো রয়েছে সেগুলোর আমদানি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে না আনলে শুধু সড়ক থেকে রিকশা ধরে লাভ নেই। এই অটোরিকশার পরিমাণ এমন পরিমাণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ এখন জীবন জীবিকার জন্য অনেকেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এটি এখন একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
এই অটোরিকশার সমস্যা রাতারাতি কমানো যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের সরকারের অতি দ্রুত কিছু নীতিমালা তৈরি করা উচিত। প্রথমত, সড়কের সক্ষমতা কতটুকু হবে এবং তার বিপরীতে কি পরিমাণ এধরনের রিকশাকে সড়কে চলার অনুমতি প্রদান করা হবে সেটির বিজ্ঞানসম্মত হিসাব-নিকাশ থাকতে হবে। সড়কে তো শুধু ব্যাটারি চালিত রিকশা চলবে না, প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ধরনের যান চলাচল করে। সেজন্য সড়কে কি পরিমাণ অটো রিকশা চলবে এই ধরনের নীতিমালা তৈরি করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। বি আর টি এ অনুমোদন না দেওয়ার কারণে এখন যে যার মতো করে গ্যারেজ তৈরি করছে। সরকারের উচিত একটা স্ট্যান্ডার্ড ডেভলপমেন্ট করা। অটোরিকশাগুলো যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেখানে তারা বিজ্ঞানসম্মত থেকে অনেক দূরে আছে। এটার কাঠামোগত দুর্বলতা, ডাম্পিং দুর্বলতাসহ অনেক ধরনের দুর্বলতা রয়েছে। যার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সে জন্য টেকনিক্যাল ইন্সট্রাকশন তৈরি করতে হবে। এই অটোরিকশা এখন অনেক বড় জটিল সমস্যা। জীবন-জীবিকার জন্য ঢাকা শহরে এখন ৮ লাখ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে। পরিবারের চারজন ধরলেও প্রায় ৩২ লাখ মানুষ এই রিকশার জীবিকার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের পলিসির দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। সেজন্য মোটরসাইকেলও বাড়ার পর এখন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ব্যাটারি চালিত রিকশার একই অবস্থা।
অটোরিকশা সরঞ্জাম উৎপাদন করা এখন এক ধরনের শিল্প হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ব্যাপার আছে। যে মোটর ও ব্যাটারিগুলো বাহির থেকে দেশে আসতেছে, সেটা কি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই আসতেছে? সেজন্য তাদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিআরটিএ যদিও বলে তারা এটির অনুমোদন দেয়নি এবং এগুলো তারা নিয়ন্ত্রণ করে না, কিন্তু আমি বলবো বিআরটিএ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ট্রাফিক পুলিশ সড়কে নামার পর অটোরিকশার লাইসেন্স আছে কিনা, বৈধতা আছে কিনা এগুলো তারা চেক করছে। কিন্তু এটার উৎপাদন যেখান থেকে হচ্ছে, যেখানে আমদানি হচ্ছে সেই জায়গায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ যে সকল স্টেক হোল্ডার রয়েছে তাদের পার্টিসিপেশন থাকতে হবে। কিন্তু এ জায়গায় যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। সেজন্য সংখ্যাত্মিকভাবে এই অটোরিকশা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। এটা ঠেকাতে হলে মূল জায়গা থেকে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু সড়ক থেকে সরালে হবে না।
দিন দিন বস্তিগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বস্তির যে জনসংখ্যা রয়েছে তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম হলো রিকশা। ফলে দিন দিন রিকশার পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের যেসকল পলিসি মেকার রয়েছে তাদেরকে এটা গভীরভাবে ভাবা উচিত। যেভাবে রিকশার পরিমাণ বাড়ছে এটা শুধু সড়কে চাপ তৈরি করছে শুধু তাই নয়, মানুষের মাইগ্রেশনেও চাপ তৈরি করছে। ঢাকা শহরে এটা চালানোর জন্য মানুষ গ্রাম থেকে চলে আসতেছে। বস্তিগুলোতে মানুষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সবগুলোর ওপরে চাপ পড়তেছে। ঢাকা শহর এমনিতেই পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা শহর এমনিতেই যাই যাই অবস্থা। সেখানে এই অতিরিক্ত চাপের প্রতিঘাত অনেক জায়গায় গিয়ে পড়বে।
আজ বুধবার কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস-২৯ (কপ২৯)-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে কপ২৯-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে সোমবার কপ২৯ শুরু হয়েছে। ওই জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে এখন বাকুতে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে তিনি ব্যস্ত সময় পার করেন।
প্রাপ্ত এক বার্তা অনুসারে, ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি বিজয়ী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০ জন শীর্ষ নেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রফেসর ইউনূস কপ২৯ ভেন্যুতে বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও তুর্কি ফার্স্ট লেডির সাক্ষাৎ করেন। জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পোডেলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে শুভেচ্ছা জানান।
অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক ইউনূস বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী, ঘানার প্রেসিডেন্ট, বসনিয়া হার্জেগোভিনার প্রধানমন্ত্রী, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিল ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফিফা সভাপতি ও আইওএম-এর মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এছাড়া আল-আজহার আল শরীফের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব মঙ্গলবার সকালে বাকুর রিৎজ কার্লটন হোটেলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাকুতে পৌঁছান।
দেশের চলমান পরিস্থিতি ও আসন্ন কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ এবং কেন্দ্রীয়-স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যেকেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নিয়ে সভা ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিনগত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ সই করা এক নোটিশে এ সভা আহ্বান করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, সভায় চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, আসন্ন কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে।
সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির সবাইকে (১৫৮ জন) যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক প্রস্তাব বা মতামত সঙ্গে আনা এবং নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতি থাকার জন্য বলা হয়৷
আজ ১৩ নভেম্বর। দেশবরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর ৭৬তম জন্মদিন। আর এ দিনে প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে হিমু উৎসব।
লেখকের নিজ জেলা নেত্রকোনায় তারুণ্য নির্ভর সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে দিনব্যাপী হিমু উৎসবের মেতে উঠবে জেলা শহর। তরুণ পাঠক ভক্তরা প্রতিবারের ন্যায় এবারো দিবসটিতে হিমু-রূপা সেজে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করবে দুই কিলোমিটার সড়ক। বিভিন্ন বয়সের কবি, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা হিমু উৎসবের প্রথমার্ধে শোভাযাত্রা বের করবে।
সাতপাই অস্থায়ী কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি মোক্তারপাড়া মাঠে গিয়ে শেষ হবে। পরে কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হবে। সন্ধ্যায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
তারুণ্য নির্ভর সামাজিক সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ১১ টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় সাতপাই থেকে হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু আর নীল শাড়িতে রূপা সেজে লেখকের নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত গানের সাথে নেচে গেয়ে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে অতিক্রম করবে। সেখানে হিমু-রূপাদের নিয়ে কেক কাটবেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ।
পরে সন্ধ্যা সাত টায় হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আড্ডায় আড্ডায় লেখকের তৈরি নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত কালজয়ী গান ও নৃত্য পরিবেশিত হবে। শিল্পকলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আড্ডায় আড্ডায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লেখক সম্পর্কে আলোচনা করবেন স্থানীয় কবি লেখক সাহিত্যিকরা।
মূলত প্রতিবছর নতুন প্রজন্মের মাঝে হুমায়ুন আহমেদ এর সাহিত্য সংস্কৃতি আনন্দের ছলে এবং লেখকের আকর্ষণীয় কাল্পনিক চরিত্রের রূপায়নের মাধ্যমে তুলে ধরাই লক্ষ্য।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতেই লেখকের এমন কাল্পনিক চরিত্রের কার্যক্রম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা মাত্র জানালেন আয়োজক সদস্য সৈয়দা নাজনীন সুলতানা সুইটি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে চলা এই উৎসব এখন সকলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এই আয়োজনকে ঘিরে এক মাস ধরে প্রস্তুতি চলে। যে প্রস্তুতিতে হলুদ টি শার্ট করা হয়। এই টি শার্টে প্রতি বছর লেখকের এক একটি শিক্ষনীয় উক্তি লেখা থাকে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তারা প্রতিযোগিতা করে এসকল উক্তি থেকে একটা উক্তি বাছাই করে। এতে তাদের মধ্যে একটা সহনীয় মনোভাব তৈরি হয়। সাহিত্যকে জানা হয়। একজন অন্যজনের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া শেখে। এসব কর্মকাণ্ড দিয়েই প্রায় মাসব্যাপী ছেলে মেয়েদেরকে আমরা ব্যস্ত রাখতে পারি।
হিমু রিফাত আহম্মেদ রাসেল জানান, হলুদ টি শার্ট পড়া বড় ব্যাপার না। বড় ব্যপার হচ্ছে এই টি শার্টের গায়ের লিখাটা। এটি মানুষ দেখে জানে। এতে হুমায়ুন চর্চা যেমন হয় তেমন নতুনেরা জানতে পারে অন্য লেখকদের সম্পর্কেও।
হিমু পাঠক আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা আলপনা বেগম জানান, একটি আয়োজনকে ঘিরে মাসব্যাপী কার্যক্রমে এখন শহরবাসীও প্রস্তুত থাকে প্রতিবছর। এর সাথে প্রশাসন থাকেন। অনেকে হুমায়ুন আহমেদকে শুধু পড়েছেন। কিন্তু এভাবে তাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে জানা টাকেও নতুন করে গ্রহণ করছেন।
বিশেষ করে এ অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা যেন এক বাক্যে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে ইন্টারভিউ বা যে কোন স্থানে বক্তব্য তুলে ধরতে পারে এই প্র্যাকটিসটিও হচ্ছে আমাদের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।এক বরেণ্য ব্যক্তির উৎসব প্রতি বছর অপর বরেণ্য বুদ্ধিজীবী সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক যতীন সরকার উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে প্রতি বছর দিনটি তরুণ প্রজন্মের সাথে বিভিন্ন প্রজন্মের একটি মেল বন্ধন ঘটার দিনে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও লেখকের জন্মস্থান নানার বাড়ি জেলার মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে ও লেখকের পৈত্রিক ভিটা কেন্দুয়ার কুতুবপুরে লেখক প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠে দোয়া মাহফিল করা হবে।
উল্লেখ্য, লেখক হুমায়ুন আহমেদ এই দিনে মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ায় নানার বাড়ি মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
নানার বাড়িতে থাকার আরও একটি কারণ ছিলো। হুমায়ুন আহমেদ এর পিতা সরকারি চাকুরী করার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতেই রেখে যেতেন। পরবর্তীতে ২০১২ সনের ১৯ জুলাই তিনি আমেরিকায় মারা যান।