পূর্ব বিরোধের জেরে মুনতাহাকে হত্যা, আটক ৪
সিলেটের কানাইঘাটে নিখোঁজের ৭ দিন পর বাড়ির পাশের একটি খাল থেকে ৬ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মুনতাহা কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় শিশুটির গলায় রশি পেঁচানো ছিল।
এ ঘটনায় গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়াসহ ৪ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), তার মা আলিফজান বিবি (৫৫), মৃত ছইদুর রহমানের পুত্র ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও মামুনুর রশিদের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫)।
চারজন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার(এসপি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।
রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে পুলিশ সুপার মুনতাহার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনকে শান্তনা দেন ও ঘটনাস্থল শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে ক্লু পেয়েছি সেটা তদন্তের স্বার্থে বলতে চাচ্ছি না। খুবই তুচ্ছ একটা বিষয় ছিল। এটা নিয়ে এতদূর আসা আমার মনে হয় না অবকাশ ছিল। এই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিছু লোক জড়িত ছিল। তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যদি আরও কেউ জড়িত তাকে তাদেরকেও আটক করা হবে। খুব দ্রুত বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাবো।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে একজন প্রত্যক্ষভাবে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছ।
এদিকে মুনতাহার পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুনতাহাকে মার্জিয়া প্রাইভেট পড়াতেন। পড়ানোর সুবাদে মুনতাহা তাদের বাড়িতে যাতায়াত করতো এবং খেলাধুলা করতো। মুনতাহাকে পড়াতে গিয়ে অনেক সময় তাদের ঘর থেকে কাপড়চোপড় ও বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যেতো মার্জিয়া। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে বলে দেয়া হয় প্রাইভেট পড়াতে না আসার জন্য। চুরির অপবাদের ক্ষোভে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মার্জিয়ার মা আলিফা বিবি খাল থেকে লাশটা উঠিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কোনো পুকুরে ফেলে দেওয়ার জন্য। তখন স্থানীয় লোকজন বিষয়টি দেখে ফেলে। পরে পুলিশ এসে তাদেরকে আটক করে।
এব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ৩ নভেম্বর মুনতাহার বাবা তার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে থানায় অবহিত করেন। পরে থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে থানায় এজাহার দায়ের করেলে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের সূত্র ধরে মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষিকা শামিমা বেগম মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন মার্জিয়া। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে তাদের ঘরে শিশু মুনতাহাকে গলা টিপে ও বস্তাচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে শিশু মুনতাহা। দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও তাকে পাননি।