যুবদল কর্মীর লাশ তুলতে বাবার বাধা, ফিরে গেলেন ম্যাজিস্ট্রেট

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যুবদল কর্মীর লাশ তুলতে বাবার বাধা

যুবদল কর্মীর লাশ তুলতে বাবার বাধা

এক বছর আগে মারা যাওয়া যুবদল কর্মীর লাশ করব থেকে উত্তোলন না করে ফিরে এসেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ।

ফোরকানের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ লাশ তুলতে যায়। তবে এ সময় লাশ তুলতে আপত্তি জানায় পরিবার।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, যুবদল কর্মী ফোরকান আলী (২৭) শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসিড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে বগুড়া- ঢাকা মহাসড়কের শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর নামক স্থানে বিএনপির মিছিলে গিয়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন ফোরকানের লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ইউনুছ আলী হলুদ বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে আওয়ামী লীগের ১৬০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সাজাপুর এলাকায় মহাসড়কে উঠামাত্রই প্রধান আসামি শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা মিছিলে হামলা করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় যুবদল কর্মী ফোরকান রক্তাক্ত জখম হন। পরে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে সেই সময় নিহতের পরিবার মামলা করার সাহস পাননি।

বিজ্ঞাপন

আদালতের নির্দেশে মামলাটি শাজাহানপুর থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ এই মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে আজ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করতে যান। এসময় ফোরকান আলীর পরিবার থেকে আপত্তি জানানো হয়।

ফোরকান আলীর বাবা বলেন, আমার ছেলে বিএনপির মিছিলে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাকে কেউ হত্যা করেনি। তার শরীরে কোন জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না।আমার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় আমরা সেই সময় মামলা করিনি। সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের অনুমতি না নিয়ে ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে ইউনুছ আলী আদালতে মামলা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি এফিডেভিটের মাধ্যমে আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি আদালতকে জানিয়েছি। এখনও শুনানি হয়নি। এছাড়াও মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা এবং আসামিদের হয়রানি না করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।

মামলার বাদী যুবদল নেতা ইউনুছ আলী হলুদ বলেন, বাদীর সাথে আলোচনা করেই মামলা করা হয়েছে। মামলায় নিহত ফোরকানের একজন আত্মীয়ের নাম থাকায় এখন ফোরকানের বাবা অস্বীকার করছেন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ইতোমধ্যে এই মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করতে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ উত্তোলনে আপত্তি জানানোর কারণে লাশ উঠানো যায়নি।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিক বলেন, আদালতের নির্দেশ থাকলেও লাশ উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিহতের পরিবারের সহযোগিতা এবং কবর সনাক্ত করতে হয়। ফোরকানের বাবা বলেছেন মামলার বিষয় তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, কিন্তু আদালতের কোন নির্দেশনা তার কাছে নেই। ফোরকানের বাবা সময় নিয়েছেন, আদালতে যোগাযোগ করে লাশ না উঠানোর জন্য নির্দেশনা নিয়ে আসবেন। এ কারণে লাশ উত্তোলন না করে তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।