সরকারের বিতরণকৃত পেঁয়াজের বীজ বপন করে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বিঘা প্রতি প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পেঁয়াজ চাষীরা।
জানা যায়, বালিয়াকান্দিতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিএডিসি বালিয়াকান্দিতে এক হাজার কৃষককে এক প্যাকেট করে পেঁয়াজের বীজ প্রণোদনা দেয়। বীজ বপনের সপ্তাহখানেক পর থেকেই সাধারণ চারা অঙ্কুরোদগম হওয়ার কথা। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি। এতে করে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকেরা।
বালিয়াকান্দি গ্রামের শেখপাড়ার জাকির হোসেন, দেলুয়া গ্রামের বিউটি খাতুন, মধুপুরের শহিদুল ইসলাম জানান, তারা প্রত্যেকে বিএডিসির প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করে বপন করেছিলেন। কিন্তু সেই বীজ আর গজায়নি। যে এক হাজার কৃষক এই বীজ বপন করেছিলন কারো বীজই গজায়নি।
তারা বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে মোটামুটি উৎপাদন হলে ৪০ থেকে ৫০ মণ পেঁয়াজ হয়। প্রতি মণ পেঁয়াজের মূল্য ১৫০০ টাকা করে ধরলেও বিঘা প্রতি সাড়ে সাত কোটি টাকার ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। বিএডিসির এবার যে পেঁয়াজের বীজ প্রণোদনা দিয়েছেন তাতে বালিয়াকান্দি উপজেলায় এক হাজার বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছিল। এ সকল বীজতলায় ১০ শতাংশ জমিতেও চারা অঙ্কুরোদগম হয়নি। যারা সরকারি বীজ নিয়েছেন তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫ টি উপজেলায় রবি প্রণোদনা হিসেবে ৪ হাজার কৃষকের মাঝে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বিএডিসির সরবরাহকৃত এসব বীজ বিতরণ করে জেলা কৃষি বিভাগ। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১০০০, সদরে ৮০০, পাংশায় ১০০০, কালুখালীতে ৮০০ ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪০০ কৃষকের মাঝে এ সব বীজ বিতরণ করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বিএডিসি এবার বারী পেঁয়াজ-৪, বারী-১ ও তাহেরপুরী এই তিন জাতের বীজ কৃষকের মধ্যে সরবারহ করেছে। কিন্তু পেঁয়াজের বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি। এ দায় সম্পূর্ণ বিএডিসির। যে সকল কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা যেন সরকারি ভূর্তকি পান সে ব্যাপারে তার দপ্তর কাজ করবে।
রাজবাড়ী বীজ বিপণন বিভাগের সিনিয়র সহকারি পরিচালক নৃপেন কুমার নন্দী জানান, তারা পরীক্ষা করেই কৃষকদের মধ্যে এই বীজ বিতরণ করেছেন। বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি এরা ঠিক। তবে কী কারণে অঙ্কুরোদগম হয়নি সেটা তদন্ত চলছে। শুধু বীজের কারণেই অঙ্কুােদগম হয়নি বিষয়টি এমন নাও হতে পারে। মাটি ও আবহাওয়ার কারণেও এমন হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো: হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে রাজবাড়ী জেলা তৃতীয়। আর জেলার মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রথম। দেশের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এই জেলাতে। পেঁয়াজের বীজ অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় কৃষক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।