শিম চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনছেন মা-ছেলে
স্বল্প পুঁজি ও সামান্য জমিতে শিমের চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন বুনছেন মা-ছেলে। চার বছর আগে দিলারা বেগম শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের দেখে নিজের জমিতে ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেন শিম চাষ। মায়ের আগ্রহ থেকে উৎসাহ পেয়ে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষে আগ্রহী হন ছেলে।
পরিবারের প্রধান কর্তা বিদেশের মাটিতে কৃষি ক্ষেতে কাজ করার সুবাদে দেশে স্ত্রী-সন্তানকে দেন বিভিন্ন পরামর্শ। সিলেটের গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের মিরদারচক গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী সিরাজ উদ্দিনের সংসারের হাল ধরেন সহধর্মিণী দিলারা বেগম। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে শিম চাষ করে চলছে সিরাজ-দিলারা দম্পতির সংসার। স্বচ্ছলভাবে চলছে এই চার সদস্যের পরিবার।
সিলেট অঞ্চলে গোয়ালগাদ্দা শিমের ব্যাপক চাহিদা থাকার ফলে এই সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে মা ও ছেলে। ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদ ((১৯) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষে মায়ের সঙ্গে যোগ দেন শিম চাষে।
মা-ছেলে মিলে শিমের বীজ রোপণ থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রির পূর্ব পর্যন্ত একসঙ্গে কাজ করেন। পরে ছেলে সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। গত বছর ৮ শতক জায়গায় গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ করলেও লাভবান হওয়াতে এ বছর মা-ছেলে মিলে চাষ করেছেন ১২ শতক জায়গায়।
জানা যায়, ভাদ্র মাসের শেষের দিকে গোয়ালগাদ্দা শিমের বীজ রোপণ করা হয়। পরে সার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পরিচর্যা করে চারা গাছ একটু বড় হলে মাচাং তৈরি করে তিন মাসের মধ্যেই বিক্রি করার মতো হয়ে যায় শিম। অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজি লাভজনক হওয়াতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে বিশেষ এ জাতের শিমের উৎপাদন হয়ে থাকে। এই উপজেলায় এ বছর ৭৪২ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। স্থানীয় পুরকায়স্থ বাজার, চৌধুরী বাজার ও রাখালগঞ্জ বাজারে কৃষকেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে শিম বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাইকাররা সরাসরি শিম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে শিম প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকেন।
দিলারা বেগমের ছেলে আব্দুল্লাহ আহমদ জানান, অল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনায় আগ্রহী হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। প্রতি বছর গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়েন গোয়ালগাদ্দা শিমের চাষ করা হয়। এই বছর ১২ শতক জমিতে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে শিম চাষ করা হয়। বর্তমানে বাজারে পাইকারি ধর ভালো হওয়াতে আশা করছেন লাভ বেশি হবে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, বাবা বিদেশে সবজি ক্ষেতে কাজ করার সুবাধে সেখান থেকে আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আগে মা একা কাজ করতেন। স্কুলে পড়ালেখা করার পাশাপাশি মাকে সহযোগিতা করতাম। এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে এখন মায়ের সঙ্গে শিম চাষ করছি। আমাদের এখানে কয়েকজন লোক কাজ করেন। শুধু আমাদের গোলাপগঞ্জে নয়, এই সবজি চাষে সবাই আগ্রহী হওয়া উচিত।কারণ এখানে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
দিলারা বেগম বলেন, বিয়ের পর শ্বশর ও চাচা শ্বশররা কৃষি ক্ষেতে করতে দেখি। পরে আমার স্বামীসহ অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ক্ষেত করেন। একটা সময় আমার স্বামী সৌদি আরব চলে যান। এরমধ্যে আমাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয়। শুরুর দিকে ধারে ১০হাজার টাকা দিয়ে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে শিম চাষ শুরু করেছিলাম। ফলন ভালো হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়।
তিনি বলেন, শিম বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়, তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এই টাকা দিয়ে সন্তানদের ভরণপোষণ সব মিটিয়ে ফেলা যায়। শিম চাষে লাভবান হতে হলে ধৈর্য্য ধরতে হবে ও কষ্ট করতে হবে। তা না হলে লাভবান হওয়া যাবে না।
মা-ছেলে দুজনেই জানালেন সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরও বেশি শিম চাষ করতে পারবেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাশরেফুল আলম বলেন, গত বছর ৭১৬ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয়েছিল। এবছর ৭৪২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
তিনি বলেন, শিমের ফুল আসার আগে আমরা কৃষকদেরকে সার দিয়ে দেই। কিন্তু সবাইকে দিতে পারি না। কিছু নির্দিষ্ট কৃষকের মাঝে এই সার বিতরণ করা হয়। যাদেরকে জৈব বালাইনাশক'র প্রদর্শনী হিসেবে নির্বাচিত করা হয় তাদেরকে এই সার দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ৮-১০ হাজার মেট্রিক টন গোয়ালগাদ্দা শিম গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাইরে চলে যায়। এ বছর ২০-২২ হাজার মেট্রিক টন শিম এই উপজেলায় উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।