সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া অগ্রহণযোগ্য: টিআইবি

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ (খসড়া) অগ্রহণযোগ্য। বহুল বিতর্কিত সাইবার সিকিউরিটি আইনের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। এতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ (খসড়া) পর্যালোচনা প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।

বিজ্ঞাপন

বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে, এর পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদকর্তৃক খসড়াটির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছিল সবার সঙ্গে কথা বলে আইনটি প্রণয়ন করবে। কিন্তু কেনো সেখান থেকে সরে এলো ‍বুঝতে পারলাম না। কেনো তড়িঘড়ি করা হচ্ছে তাও বোধগম্য নয়। খসড়া আইনটিতে মতামত দেওয়ার জন্য মাত্র ৩ দিন সময় দেওয়া হয়। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া বিগত সরকারের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। আইনের অনেকগুলো ধারা আগের মতোই (সাইবার সিকিউরিটি আইন) রেখে দেওয়া হয়েছে। আইনটি হয়রানির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। আমরা চাই সবার মতামত নিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করা হোক।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) রাতে আমাকে মেইল দিয়ে আজকে আইনটির বিষয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। এটাও লোক দেখানো বলতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে সন্ধ্যায় মেইল দিয়ে কেউ পরের দিন ডাকে না!

তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আমরা এর বিপক্ষে না. তবে একইভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। খসড়ায় বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে।

সাইবার সুরক্ষা আইনটির খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হওয়ার পরও কেনো লুকোচুরি করা হচ্ছে। কেনো এখন গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে, কেনো ওয়েব সাইটে আপলোড করা হচ্ছে না, সে বিষয়ে টিআইবির পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এই লুকোচুরি বড় প্রশ্ন তৈরি করছে বলে মনে করছে টিআইবি।

প্রফেসর এরশাদুল করিম মালয়েশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খসড়ার ওপর বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়নি যা বিশ্ব থেকে আলাদা। সারাবিশ্ব যে ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে বাংলাদেশও তাই। তাহলে অন্যান্য উন্নত বিশ্বের থেকে কেনো আরও কর্তৃত্ববাদী আইন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা ও সুনামের বিষয়টি ফুটে ওঠে আইনের মাধ্যমে। সেখানে সতর্কতার সঙ্গে আইনটি প্রণয়ন করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, আইনটিতে এমন সব শব্দ যোগ করে দুর্বোধ্য করা হয়েছে, যার অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে। আবার উপযুক্ত বাংলা থাকলেও ইংরেজি শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। আমি আইনের শিক্ষক হয়েও আইনটির পাঠোদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়েছে। আইনের দুর্বোধ্যতার কারণে এর অপপ্রয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

এরশাদুল করিম বলেন, জনসাধরণের মতামত দেওয়ার জন্য যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছিল, অনুমোদন পাওয়া খসড়ায় নতুন অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা আইন প্রণয়নের সাধারণ চর্চার পরিপন্থী। বিষয়টি মানুষকে ধোকা দেওয়া ও বোকা বানানোর অপচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

তিনি বলেন, অধ্যাদেশের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪’ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এখানে সাইবার সুরক্ষা শব্দগুলো ব্যবহার যথার্থ হবে না। এর নাম সাইবার বা কম্পিউটার অপরাধ অধ্যাদেশ হলে যথার্থ হবে। এতে ব্যবহৃত উপাত্ত-ভান্ডার শব্দটির যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিভ্রান্তিকর।

এতে সাইবার সুরক্ষা এজেন্সীর মহাপরিচালককে কোন কনটেন্ট ব্লক ও অপসারণ করার সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এরপর সরকারকে অবহিত করবে বলে বলা হয়েছে। শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ববর্তী সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিধানটি হুবহু এই অধ্যাদেশে যুক্ত হওয়ায় অপব্যবহারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সরকারি ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। যেখানে অনিচ্ছাকৃতভাবেও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে যেতে পারে। ধরেন আমি একটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে গিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে গেলো তার দায় কার। আবার অযাচিত মেইল প্রেরণের জন্য শাস্তির কথা বলা হয়েছে, অনেক সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার তাদের পণ্যের জন্য মেইল করে থাকেন, সেটাও এখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

অধ্যাদেশে ৩০ ধারায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যুক্ত করার উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করে এরশাদুল করিম।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্ট) প্রফেসর ড. সুমাইয়া খায়ের, ডিরেক্টর (আউটরিচ এন্ড কমিউনিকেশন) মো. তৌহিদুল ইসলাম।