গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক ঐক্য। এই ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের জাতীয় চেতনা, যা '৫২ এর ভাষা আন্দোলন, '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, '৭২ এর সংবিধান এবং '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা।
রোববার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত 'জাতীয় কাউন্সিল-২০২৪ পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
ড.কামাল হোসেন বলেন, একটা বছরে আমরা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অনেক কিছু অর্জন করলাম। সে আন্দোলনকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। যেনো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের ঐক্যকে আমরা সুসংহত করতে পারি। জনগণের ঐক্যকে সুসংহত করেই কিন্তু আমরা সব কিছু অর্জন করতে পারবো। এই জন্য ঐক্যেকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছি। বিভাজন যেখানে হয় সেখানে আমাদের শক্তি কমে যায়। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের যে নীল লক্ষ্যগুলোকে আমরা অর্জন করেছি সেইভাবে আমরা রাজপথের আন্দোলনকে আরও জোরদার করি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরেও আমরা কাঙ্খিত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারিনি। আবার '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা হচ্ছে একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার। এ ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এটা যাতে বিনষ্ট না হয় সে দিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খিত একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনা থেকে যেমন সরে আসতে পারি না; তেমনি '২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও আকাঙ্খা নসাৎ হতে দিতে পারি না। এই ঐতিহাসিক বিষয়গুলো একটি আরেকটির পরিপূরক।
আজ সময়ের প্রয়োজনে জনআকাঙ্খা পূরণে সংবিধান সংশোধন-কিংবা যুগোপযুগী করা রাষ্ট্রের জন্য চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত ও মীমাংসিত বিষয়গুলিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে তা আমাদের অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্থ করবে। এ ব্যাপারে আমাদের সকলের দায়িত্বশীল হওয়া কর্তব্য।
তিনি বলেন, গত বছরগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্লজ্জ দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এই সব প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তাদেরকে যৌক্তিক সময় ও সার্বিক সহযোগীতা করা সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। যাতে তারা অভীষ্ট্য সংস্কার কর্মসূচী সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন।
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের বিরাজমান রুগ্ন রাজনীতির বিপরীতে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিবিদ, আইনজীবি, পেশাজীবি, বুদ্ধিজীবি ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গণফোরামের জন্ম হয়েছিল।
গত নভেম্বর-২০২৪ জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে আজ গণফোরামের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটির প্রতি আশা রেখে তিনি বলেন, আমি আশা করি দলে যে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে তারা গণফোরাম এর ঘোষিত নীতি, আদর্শ ধারণ করে জনগণের আকাঙ্খা পূরণে সক্ষম হবে। এজন্য নবগঠিত কমিটি গণতন্ত্রমনা সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে গড়ে তুলবে।