চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে খাঁচায় মধু চাষ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেত। মধু চাষিরাও ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে। তেমনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় সব ফসলের মাঠেই দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব মাঠ থেকে মধু চাষিরা খাঁচা পদ্ধতিতে মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে সরিষা চাষি ও মৌচাষি দুজনেই। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মধু উৎপাদন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ, নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে প্রায় ২৫-৩০ মৌচাষ খামারে ঘুরে মৌচাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধু চাষ একটি লাভজনক পেশা। তাছাড়া মধু খাওয়া সব মানুষের উচিত, কারণ মধু প্রায় একশ' রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের নামো জগনাথপুর মাঠে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থেকে আগত নাটোর মৌ চাষ সমবায় সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা জানান, এখানে প্রায় ১৪০টি বাক্স নিয়ে ২০দিন আগে এখানে আমরা ৫/৬জন কাজ শুর করেছি। নয় মণ মধু সংগ্রহ করেছি। আরও প্রায় ১৮ মণ মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আছে। সংগৃহীত মধু ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। মধুকে আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করি। আমরা নাটোরে থেকে পাঁচটি দল মধু চাষ করছি। প্রতিটি দলে গড়ে ৪ জন করে লোক আছে।


একই দলে থাকা বাংলাদেশ হানি রিসার্চ ইন্সিটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, সারা বাংলাদেশে বিসিক থেকে সামান্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কৃষি বিভাগ থেকে নামমাত্র তেল বীজ প্রকল্পের আওতায় থেকে সামান্য কিছু সহযোগিতা করা হয়। দেশে মধুর চাহিদা হলো ২৫ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয় মাত্র ১৬ হাজার মেট্রিক টন। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫০/৬০হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। কারণ এ দেশে সরিষার ফুল, আমের মুকুল, লিচুর মুকুল, কালজিরার ফুলসহ বিভিন্ন ধরণের ফল থেকে প্রচুর মধু উৎপাদন হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দুই জাতির মৌমাছি আছে। ইউরোপিয়ান থেকে আমদানিকৃত মৌমাছির জাত হলো এপিস মেলিফেরা, এরা অত্যন্ত শান্ত, আক্রমণ করে না। মধু উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। আর দেশী জাত হলো এপিস ডরসেটা। এ জাতের মৌমাছির মধু উৎপাদনের ক্ষমতা কম। তবে এরা আক্রমণাত্মক। যদি বাংলাদেশ সরকার মৌ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে একটি নীতিমালা তৈরি করে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে মধু উৎপাদন বেশী হবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে। সরকারে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। এমনকি বিদেশে মধু রফতানিও করা যাবে।

বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর সাতভাইয়া মাঠে নড়াইল জেলা থেকে আগত সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট মৌচাষি নুরুল ইসলাম জানান, আমরা তিনজন একসঙ্গে আছি। কয়েকদিন আগে কাজ শুরু করেছি। আশা করি ভাল ফলাফল পাবো।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে একজনের কাছে মধু চাষের গল্প শুনে আগ্রহ হলে ১০ লাখের মৌমাছির প্রতিটি বাক্স ৯০০ টাকা দরে ১০টি চাক কিনে মধু চাষ শুরু করি। প্রথমে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে মধু চাষ শুরু করেছি। এখানে আমাদের ৮৫টি বাক্স আছে। এখানে বাক্স প্রতি ৪০ কেজি করে মধু সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন আর তেমন কোন খরচ নেই। উপকরণ, বহন ও যাতায়াত খরচ বাবদ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবছর জনপ্রতি আয় হয় খরচ বাদে আড়াই লাখ টাকা। নড়াইল থেকে প্রায় ২০টি দল এসেছি। প্রতিটি দলেই তিন থেকে পাঁচজন লোক আছে।

মনাকষা ইউনিয়নের সিংনগর মাঠে নাটোর থেকে আগত মধুচাষি সেলিম জানান, এখানে আমরা তিনজনে ১৫দিন থেকে মধু সংগ্রহ করছি। গত ১৫ দিনে আট মণ মধু সংগ্রহ করেছি। লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০০ মণ মধু সংগ্রহের।

এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিষার কৃষিবিদ নয়ন মিয়া জানান, এবছরে শিবগঞ্জে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫০০ কেজি। এ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ কেজি। শিবগঞ্জে ৬টি দলের মাধ্যমে প্রায় ১০০ জন মধু চাষ করছে। এছাড়াও নাটোর নেত্রকোনা, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক দল মধু চাষ করতে আসে। মধুচাষে সরিষার উৎপাদন কমে না বরং পরাগায়ণের ফলে ফলন বৃদ্ধি পায়। সরিষা ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ না করার জন্য সচেতন করা হচ্ছে।